ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ৪৩ ভাগ এলাকা

এইমাত্র জাতীয়

ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে নতুন আবিষ্কার


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী দিনে দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগের নাম হতে পারে ভূমিকম্প। গেল কয়েক দশক ধরেই এমন আশঙ্কাও করে আসছেন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ভূতাত্ত্বিকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে যতটা না ক্ষয়ক্ষতি হবে, তারচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে। আর এমন ভয়াবহতা থেকে সুরক্ষা পেতে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতা বাড়ানো পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
গেল ১৪ বছর ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তরে ভূমিকম্পের তাৎক্ষণিক গতিপ্রকৃতি নিয়ে কাজ করছেন আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম।
তিনি দেখালেন চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে বহুবার। এর মধ্যে কেবল গেল তিন মাসেই দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে সাতবার!
আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম বলেন, সিলেটে যদি ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয় তখন এর প্রভাব ঢাকায়ও পাওয়া যাবে।
এই আবহাওয়াবিদের মতোই শঙ্কা করছেন ভূতাত্ত্বিকরাও। বলছেন, তিনটি গতিশীল প্লেটে অবস্থানের কারণেই চরম ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৩ ভাগ এলাকা উচ্চমাত্রার ৪১ ভাগ মধ্যম আর ১৬ ভাগ নিম্নমাত্রার ঝুঁকিতে।
ভূতত্ত্ববিদ হুমায়ুন আখতার বলেন, দুই প্লেটের পরস্পর সংঘর্ষের কারণে যে শক্তির সৃষ্টি হচ্ছে তা একটা সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
এমন অবস্থায় ভূমিকম্পের ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। কারণ, পুরনো ভবন তো বটেই, এমনকি নতুন ভবন নির্মাণেও খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না ভূমিকম্পের বিষয়টি। ফলে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পই ধসে পড়বে বেশির ভাগ ভবন।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আনসারী বলেন, আমরা খারাপ মাটি দিয়ে বাড়ি তৈরি করছি। নানান পরিকল্পনা নেয়া হলেও তার একটিও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এমন ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা পেতে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করার পরামর্শ ভূতত্ত্ব আর নগরপরিকল্পনাবিদদের। বলছেন, এর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের সঙ্গে সচেতন করতে হবে সাধারণ মানুষকেও। নয়তো আগামীতে যেদিন অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য সেটি কেবলই হতে পারে চরম ধ্বংসের ইতিহাস।

ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে নতুন আবিষ্কার : যেকোনো মাত্রার ভূমিকম্পেই ভেঙে পড়বে না রাস্তাঘাট কিংবা নদীরক্ষা বাঁধ। এমনকি নরম মাটিতেও টিকে থাকবে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পেও। ভূমিকম্প প্রতিরোধী মোড়ানো বাঁধের উদ্ভাবন করেছেন ড. রিপন হোড় নামের এক বুয়েট গবেষক। তার উদ্ভাবিত বাঁধ কেবল ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষাই করবে না, বাঁচাবে খরচ আর কৃষি জমিও।
ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার নেই কোনো সময়-ক্ষণ কিংবা আভাস। তাই যেকোনো সময় ল-ভ- করে দিতে পারে সবকিছু।
আর এই ভূমিকম্প থেকে ভবন সুরক্ষায় রয়েছে বিল্ডিং কোডসহ নানান উদ্ভাবনী। কিন্তু প্রযুক্তির খুব একটা খবর মেলে না বাঁধ কিংবা সড়ক রক্ষায়। বিষয়টি আরও খানিকটা কঠিন হয়ে পড়ে, যখন আমাদের মতো নরম মাটির দেশ হয়।
তবে এমন দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়া যাচ্ছে বোধয় এবার। কারণ, রিপন হোড় নামের বুয়েটের এক গবেষক এ ক্ষেত্রে পেয়েছেন, সফলতা। তার গবেষণা অনুযায়ী, অবকাঠামোর নরম মাটিতে প্রথমে ব্যবহার করতে হবে জিও টেক্সটাইল, এরপর ৪০ থেকে ৬০ অনুপাতে সাধারণ বালু ফেলে আবরণটি মুড়িয়ে দিতে হবে। আর স্তর করতে হবে বাঁধের উচ্চতা অনুযায়ী
জিওটেকনিক্যাল গবেষক ড. রিপন হোড় বলেন, ভূমিকম্পের বিভিন্ন মাত্রা সাইনোসাইডাল ওয়েভ এক্সন দিয়ে পরিমাপ করে দেখার পর এটা আবিষ্কার করা হয়।
এই পদ্ধতি কেবল রাস্তা-বাঁধের সুরক্ষাই দেবে না, কমাবে খরচ আর কৃষি জমিও। রিপন হোড়ের এই গবেষণা সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছেন, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী। তিনি বলেন, নরম মাটিতে ইতোমধ্যে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।
এরই মধ্যে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নালে, যেখানে ইতিবাচক ফলাফলের আশাও জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।