বিবাহবাজ রূপচাঁদের আফসোস!

অপরাধ এইমাত্র

বিবাহের সংখ্যা পৌঁছালো না দুই অঙ্কের কোঠায়!

 

নিজস্ব প্রতিনিধি : গাজীপুর কৃষি অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করেন সুজন শেখ। রং নাম্বারে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পরিচয় হওয়া বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ বিলকিস বেগমের(ছদ্মনাম) নিকট এমনটাই পরিচয় দেন সুজন শেখ। মোবাইল ফোনে কথোপকথনের এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে গড়ে ওঠে মা-ছেলের সম্পর্ক।


বিজ্ঞাপন

বিলকিস বেগমের কাছ থেকে সুজন শেখ জানতে পারেন, শেফালি (ছদ্মনাম) নামে তার একটি অবিবাহিত মেয়ে আছে। যার জন্য একটি চাকুরী খুব প্রয়োজন।

বিলকিস বেগমের এহেন বিপদের কথা শুনে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন সুজন শেখ।

বিলকিস বেগমের কাছ থেকে তার মেয়ে শেফালীর ফোন নাম্বার নিয়ে তার সাথে কথা বলা শুরু করেন সুজন শেখ। চাকুরী দিবেন বলে শেফালীকে আশ্বস্ত করেন।

এমনকি চাকরি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময় সুজন শেখ তার অফিসের বিভিন্ন বড়কর্তাদের (কথিত) সাথে শেফালীকে ফোনে কথা বলিয়ে দেন।

এতে করে সহজ-সরল শেফালী ও তার মা চাকরি পাওয়ার বিষয়ে অনেকেটাই নিশ্চিন্ত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন!

সুজন শেখ ও শেফালীর মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা-বার্তা চলতে থাকে।

এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেলে সুজন শেখ বরিশালে শেফালীদের বাসায় বেড়াতে আসে। বেড়াতে এসে তিনি শেফালীর মায়ের কাছে শেফালীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।

এসময় সুজন শেখ নিজের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য শেফালী ও তার মায়ের কাছে নিজের একটি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সরবরাহ করেন। যেখানে অস্পষ্ট ছবির নিচে তার নাম সুজন শেখ লেখা রয়েছে।

একদিকে চাকরিজীবী ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে, অপরদিকে মেয়ের চাকরীর সুযোগ! সহজ-সরল বিলকিস বেগম যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেলেন। মেয়ে শেফালীর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করলে সেও বিয়ের বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

মেয়ের-মেয়ের সম্মতিতে সুজন শেখ তখন তার সাথে করে নিয়ে আসা নিজস্ব কাজী দিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন এবং শেফালীর সহিত শেফালী দের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী রুপে বসবাস করতে শুরু করেন।

শেফালী সুজন শেখের অর্থাৎ তার শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় অনুরোধ করলেও চতুর সুজন শেখ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।

এভাবে নির্দিষ্ট সময় পরপর সুজন শেখ শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসেন এবং শেফালীকে চাকরী দেওয়ার কথা বলে (রিটার্ন পরীক্ষা, ভাইবা পরিক্ষা, এপোয়েন্টমেন্ট লেটার ইত্যাদি) বিভিন্ন সময় বিলকিস বেগম ও শেফালীর কাছ থেকে নগদ ছয় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন ।

সর্বশেষ আরো ২ লক্ষ টাকা এবং ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকারসহ শেফালীকে চাকুরীতে যোগদানের কথা বলে বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে ঢাকা সদরঘাট পৌঁছলে সুজন শেখ সিএনজি আনার কথা বলে শেফালীকে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

কিছু সময় পর সুজন শেখ শেফালীকে ফোন করে জানায় যে, সুজন শেখ শেফালী ও তার মায়ের সাথে প্রতারণা করেছে।

সে আর কখনোই বরিশাল যাবে না; শেফালী যেন বরিশাল চলে যায়।

মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়া শেফালী তখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে বরিশাল চলে আসে।

সবকিছু শেষ করে শেফালী বুঝতে পারে সুজন শেখ তার এবং তার মায়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সাথে প্রতারণা করে বিয়ের নাটক সাজিয়ে তাকে বহুবার ধর্ষণ করেছে এবং চাকরী দেওয়ার মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে তাদের কাছ থেকে নগদ ৮ লক্ষ টাকা এবং ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকারসহ সর্বমোট ১১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অসাধুভাবে আত্মসাৎ করেছে।

উপায়ন্তর না দেখে শেফালী তার মাকে সাথে নিয়ে বিএমপি এয়ারপোর্ট থানায় গিয়ে এ-সংক্রান্তে অভিযোগ দায়ের করলে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ মামলা রুজু করে কাল-বিলম্ব না করে তদন্ত শুরু করে।

উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক দিকনির্দেশনা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পাবনা জেলা থেকে অভিযুক্ত সুজন শেখকে গ্রেপ্তার করে এবং শেফালী ও তার মায়ের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা টাকার নগদ ২ লক্ষ টাকা, ২টি স্বর্ণের চেইন, ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, একটি স্বর্ণের আংটি এবং স্বর্ণালঙ্কার রাখার একটি কৌটা উদ্ধার করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত সুজন শেখ ঘটনার সত্যতা করে জানান যে, তার নাম সুজন শেখ নয়। সে মূলত ভূয়া জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়েছিল তাদেরকে।

তার সঠিক নাম-ঠিকানা হল- মোঃ রুপচাঁদ সরদার (৩৫), পিতা-ছবেদ সরদার, মাতা-রুবিয়া বেগম, সাং-কাবাসকান্দা, থানা- আমিনপুর, উপজেলা- বেড়া, জেলা-পাবনা। সে আসলে কোন চাকুরী করেনা।

মূলত প্রতারণামূলকভাবে বিয়ে করে নিত্যনতুন নারী ধর্ষণ করা, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করাই তার নেশা ও পেশা।

এ পর্যন্ত সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৭টি ভূয়া বিয়ে করেছে এবং অচিরেই আরো ৩ টি বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

মূলত পুলিশের তৎপরতায়ই বিয়ের সংখ্যা দুই অঙ্কের কোঠায় পৌঁছলো না বিবাহবাজ রুপচাদ সরকারের!!