পল্লবীর নিখোঁজ ৩ ছাত্রী উদ্ধার

অপরাধ

বিশেষ প্রতিবেদক : এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে।


বিজ্ঞাপন

জঙ্গীবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি মনুষ্য অপরহরণকারী চক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব সদা তৎপর।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে ৯ টার সময় পল্লবী থানধীন এলাকার নিজ নিজ বাসা হতে স্নেহা আক্তার (১৬), কাজী দিলখুশ জান্নাত নিশা (১৫) এবং কানিজ ফাতেমা (১৬) নামের তিন নাবালিকা মেয়ে নিখোঁজ হলে ভিকটিম কাজী দিলখুশ জান্নাত নিশা এর বড় বোন এ্যাড. কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে সন্দেহভাজন ৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন আসামীদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় একটি অপহরনের অভিযোগ দায়ের করলে পল্লবী থানার মামলা নং-০৬, তারিখ- ০২/১০/২০২১ খ্রিঃ, ধারা-২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী-২০০৩) এর ৭/৩০ রুজু হয়। এ ঘটনায় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ পুরো দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। যার প্রেক্ষিতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল উক্ত বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে।

র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল, গোপন তথ্যের সহায়তায় এবং কক্সবাজারে থাকা র‌্যাব-৪ এর টিমের মাধ্যমে জানা যায় যে নিখোজ ভিকটিমরা গতকাল মঙ্গলবার ৫ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৯ টায় ছদ্মবেশে কক্সবাজার হতে বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রাওনা করে।

প্রাপ্ত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল বুধবার ৬ অক্টোবর সাড়ে ৪ টায় আবদুল্লাহপুর বেড়িবাধ এলাকা হতে নিখোঁজ ভিকটিমদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

ঘটনার অনুসন্ধান ও ভিকটিমদের প্রাথামিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা ৩ জন বান্ধবী এবং তারা মিরপুরের স্থানীয় কলেজে লেখাপড়া করত।

তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পরে। দিনদিন লেখাপড়ার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

যার ফলশ্রুতিতে তাদের পরিবার পরাশোনার জন্য ও ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিত। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধি-নিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে।

ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তাদের নিজেদের পরিবারের নিয়ম-কানুন ভালো লাগত না এবং এসব সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম কানুন তাদের কাছে অত্যাচার মনে হতো।

তারা মূলত উচ্চাভিলাসী জীবন-যাপন পছন্দ করত। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি বিশেষ করে জাপানী সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পরে।

তারা অধিক পরিমানে জাপানী সিনেমা-সিরিয়াল, সাংস্কৃতিক প্রোগাম দেখে দেখে জাপানী ভাষায় কিছুটা আয়ত্ব করে নেয়। তারা দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবন-যাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করার কারণ হিসেবে জাপানী সংস্কৃতিতে নারী পুরুষের সম-অধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক হওয়ার সুযোগ এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি-নিষেধ না থাকার কারন উল্লেখ করে।

এরই প্রেক্ষিতে গত ২ মাস পূর্বে তিন বান্ধবী তাদের বন্ধু তরিকুলের সাথে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে জনৈক হাফসা চৌধুরী নামের ২৪/২৫ বছরের এক মহিলার সাথে তাদের পরিচয় হয় এবং তার সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে তারা জাপানে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে জনৈক হাফসা চৌধুরী তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়।

তিন বান্ধবী জনৈক হাফসার সাথে পরিকল্পনা করে কক্সবাজার রুট দিয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমান সাড়ে ৯ টায় রিক্সা যোগে প্রথমে গাবতলী যায়। হাফসার পরামর্শে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেন তাদের অবস্থান চিহ্নিত না করতে পারে সেজন্য তারা নিজেদের ইমেইল, ফেইসবুক আইডি এবং ব্যবহৃত মোবাইল গাবতলী এলাকায় ধ্বংস করে।

পরবর্তীতে তারা নৌকাযোগে নদী পার হয়ে আমিন বাজার এলাকায় পৌছলে জনৈক হাফসার ২ জন লোক একটি কালো রঙের নোয়া কার যোগে অজ্ঞাত নামা একটি জায়গায় নামিয়ে দিয়ে সিএনজি যোগে তাদের কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে রেল যোগে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

তিন বান্ধবী তাদের কথামত কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে চট্টগ্রাম গামী কোন রেল না পাওয়ায় কমলাপুর রেলস্টেশন হতে বাসযোগে কুমিল্লা ময়নামতি যায়।

পথিমধ্যে তারা নিজেদের পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে নিজেদের চুল কেটে ফেলে পশ্চিমা বেশ-ভ‚ষা ধারণ করে। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌছে তারা কেডস্, পোষাক এবং একটি মোবাইল ক্রয় করে।

সেখান থেকে তারা পুনরায় বাসযোগে চট্টগ্রাম সিনেমা প্লেস বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দুইটি মোবাইল ক্রয় করে বাসযোগে কক্সবাজারে গমন করে। আত্মগোপনে থাকার জন্য কোন সিম ক্রয় করেনি।

কক্সবাজার পৌছে তারা গত ১ অক্টোবর হতে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার কলাতলিতে একটি হোটেলে অবস্থান করে সিমের পরিবর্তে ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে।

২ অক্টোবর তারা কক্সবাজার বিচ এলাকায় বেড়াতে গেলে হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ এবং শফিক নামের ৩০/৩২ বছরের দুই লোক তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়।

উক্ত ঘটনায় তারা আতংকিত হয়ে হোটেল অবস্থান নেয় এবং হোটেলের আশেপাশে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার ৫ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৯ টায় ছদ্মবেশে বাসযোগে কক্সবাজার হতে রওনা হয়ে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর পৌছলে বেড়ীবাধ এলাকা হতে বুধবার ৬ অক্টোবর সাড়ে ৪ টায় র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল তাদের উদ্ধার করে র‌্যাব-৪ এর কার্যালয়ে নিয়ে আসে। উল্লেখ্য যে, জনৈক হাফসা নামের মহিলার কোন ফেইসবুক, ই-মেল আইডি ভিকটিমরা সনাক্ত করতে না পারায় জনৈক হাফসাকে সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

জনৈক হাফসা নামের মহিলাকে সনাক্ত, নোয়া কারে থাকা ২ ব্যক্তি এবং কক্সবাজারের বীচ এলাকায় স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া ২ ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে চিহ্নিত করে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।