সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি: জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার নিখোঁজের ২২ বছর পর ছালেহা বেগম নামে এক নারীকে উদ্ধার হয়েছে। সরিষাবাড়ী থানার এস আই জাফর মুন্সিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মোঃ দেলোয়ার হোসেনের বাড়ী থেকে উদ্ধার করেন।
পুলিশ ও ছালেহার পরিবার সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী পৌর এলাকার চক বাঙ্গালী গ্রামের মরহুম বেলায়েত রাজের মেয়ে দীর্ঘ ২২ বছর পূর্বে ভাইয়ের সাথে অভিমান করে বাড়ী থেকে কোথায় যেন চলে যায়। স্বজনরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোজ খবর নিলেও কোন সন্ধান মেলেনি। এদিকে মুন্সিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মোঃ দেলোয়ার হোসেন তাকে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ লালন পালন করে আসছে। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ছালেহাকে তার পরিবারের কাছে পৌছাতে পারেনি তিনি। বিভিন্ন জায়গায় খোজ খবর নিয়ে সরিষাবাড়ী থানায় ছালেহা বেগম এর ভাই সামছুল রাজ সরিষাবাড়ী থানায় গত ১০ অক্টোবর সাধারণ ডায়েরী করেন। ডায়েরী নং – ৪৮৫, তারিখ-১০-১০-২০২১। সাধারণ ডায়েরী করার পরেই অফিসার ইনচার্জ মীর রকিবুল হকের নির্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাফর আলীর নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার কাঠাখালী গ্রামে অ্যাডভোকেট মোঃ দেলোয়ার হোসেন এর বাড়ী থেকে উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী থানায় নিয়ে আসে। এদিকে সরিষাবাড়ী থানার ওসি(তদন্ত) আব্দুল মজিদ ছালেহাকে মায়ের মর্যাদা দিয়ে নতুন কাপড় কিনে দিয়ে ১১ অক্টোবর সোমবার তার স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করেন। পরে ছালেহা বাড়ী গিয়ে তার বাবা মরহুম বেলায়েত রাজের কবর জিয়ারত করেন। তার ভাতিজা লিটন রাজ বলেন , আজ থেকে ২২ বছর আগে আমার ফুফু হারিয়ে গিয়েছিল। আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করে ফুফুকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। মুন্সিগন্জের অ্যাডভোকেট ও সরিষাবাড়ী থানা পুলিশের সহযোগিতায় ফুফুকে ফিরে পেয়েছি। এর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। ছালেহার ভাই সামছুল রাজ বলেন, আমার বোন ফিরে এসেছে এর জন্য আমি খুশি ও আনন্দিত ।কথা হলে ছালেহা জানান,ভাইয়ের সাথে রাগারাগি করে আমি বাড়ী থেকে চলে গিয়েছিলাম।
মুন্সিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এডভোকেট মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান,প্রায় ১০/১২ বছর তিনি আমার বাড়ীতে ছিলেন।ছালেহা কাঠাখালী বাজার নিজে ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতেন। কারো কাছ থেকে কখনো টাকা নিতেন না। এর কারণে সকল ব্যবসায়ীদের সাথে তার সু সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্নভাবে আমি তার ঠিকানা সংগ্রহ করার চেষ্ঠা করেছি । সম্প্রতি আমি তার কথামত কাগজে লিখে কয়েকটি ঠিকানা দিলে খোজ নিয়ে মেলানোর চেষ্টা করি । পরে ইন্টারনেট থেকে এলাকার নাম সার্চ করে সরিষাবাড়ী থানা দেখতে পাই । ৬ নং ভাটারা ইউপি’র ফয়েজের মোড় এবং তার ভাইয়ের নাম আরফান মেম্বার বলতে পেরেছেন। কিছুদিন আগে আমি সরিষাবাড়ী থানায় ওসি তদন্ত আব্দুল মজিদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করি এবং তিনি আমাকে ভাটারা ইউপি’র চেয়ারম্যান বাদল সাহেব সহ কয়েকজনের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেয়। পরে বাদল চেয়ারম্যান সাহেবের কাছ থেকে শুনতি পারি আরফান মেম্বার নামে একজন মেম্বার ফয়েজের মোড় এলাকায় ছিলেন । সেই হিসেবে গত ২ অক্টোবর সরিষাবাড়ী এসে ফয়েজের মোড় এলাকায় অনুসন্ধানে যাই । স্থানীয় মুরুব্বীদের সহযোগিতায় ছালেহার বাড়ীর ঠিকানা খুজে পাই। দুদু রাজ ও সামছুল হক রাজকে অবগত করে ছালেহাকে দেখাইলে তারা শনাক্ত করে। পরে আমি মুন্সিগন্জ সদর থানায় লিখিতভাবে অবগত করি।দীর্ঘ ১০ বছর পর ছালেহার কথা মতো খোজখবর নিয়ে তার ভাতিজা লিটনের পরিশ্রমে পরিবারের কাছে তাকে পাঠাতে পেরে আমি খুব খুশি ও আনন্দিত কিন্তু তিনি না থাকায় আমরা এলাকাবাসী আপনজন হারানোর ব্যথা ও কষ্ট অনুভব করছি কারণ আমাদের সাথে আত্নীয়তা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ।
কথা হলে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর রকিবুল হক বলেন,দীর্ঘ ২২ বছর পুর্বে ছালেহা বাড়ী থেকে চলে যায়। হঠাৎ কয়েকদিন আগে মুন্সিগঞ্জ জেলার কাঠাখালী গ্রামে অ্যাডভোকেট মো. দেলোয়ার হোসেন আমাদের জানালে আমরা খোজ খবর শুরু করি । ১০ অক্টোবর ছালেহার ভাই সামছুল রাজ থানায় সাধারণ ডায়েরী করে। পরে থানা পুলিশ গিয়ে ছালেহাকে উদ্ধার করে ১১ অক্টোবর সোমবার তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ।