নিজস্ব প্রতিনিধি : ঢাকাকে পুঁজি করে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ দিনে দিনে বৃদ্ধি করছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার সকালে সাপ্তাহিক নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নগরীর কমলাপুর রেলস্টেশন হতে টিটি পাড়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ কথা বলেন।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে আমাদের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে এরই মধ্যে প্রায় ১০৩ কোটি টাকার কার্যক্রম আরম্ভ করেছি। এই অর্থবছরেও এই খাতের জন্য প্রায় ৭৪ কোটি টাকা বাজেট সংস্থান রেখেছি। কমলাপুর রেল স্টেশনের আশপাশের জায়গা ব্যাপকভাবে জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন থাকে। গত বছর বর্ষাতেও আমরা সেটা লক্ষ্য করেছি। সেজন্য জলাবদ্ধতা নিসরনে আমরা কার্যক্রম আরম্ভ করেছি — বড় নর্দমার সংযোগ করছি। যেটা আগে ছিল না। এখান থেকে বক্স কালভার্ট পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হবে। আমরা আশাবাদী, এই এলাকার জলাবদ্ধতা সম্পূর্ণরূপে নিরসন হবে। এভাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় কাজ চলছে।”
মতবিনিময়কালে শ্যামপুর-কদমতলী এলাকায় পদ্মা সেতুর রেল সংযোগের কারণে বিগত বেশকিছু ধরেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, এলাকার লোকজনের ভোগান্তি হচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যাসের লাইন বন্ধ রয়েছে, ফলে শিল্প কারখানাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ বিষয়ে মেয়র হিসেবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এটা খুবই অনাকাঙ্খিত এবং দুঃখজনক। জলাবদ্ধতা নিরসনে যে কার্যক্রম পরিদর্শনে এসেছি এখানেও নতুন করে এমআরটি লাইন স্থাপনের জন্য তারা আবেদন করেছে। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের পরিকল্পনার সাথে তাদের পরিকল্পনা সাংঘর্ষিক হচ্ছে। তেমনি শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলের জন্য আমরা বৃহৎ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক — পদ্ম রেলসেতুর যে কার্যক্রম, সেই কার্যক্রমের আওতায় যেখান থেকে পানি নিষ্কাশন হতো সেই পানি নিষ্কাশনের মুখগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে এখন পুরো শ্যামপুর শিল্পাঞ্চল এই সময়েও জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন। তাহলে বর্ষা মৌসুমে কি হতে পারে — সেটা চিন্তা করলেই আতঙ্ক পেয়ে বসে।”
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমরা তাদেরকে বারবার বলেছি, তাদের অনুরোধ করেছি — আমাদের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন অন্ততপক্ষে সেখানে কালভার্ট করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে। কিন্তু তারা কোনো নজর দিচ্ছে না। এভাবে বিভিন্ন সংস্থা ঢাকাকে পুঁজি করে অপরিকল্পিতভাবে আমাদের সাথে কোন সমন্বয় ছাড়া কাজ করছে। এতে ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ দিনে দিনে শুধু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি আবারও সকলকে অনুরোধ করব –তাদের পরিকল্পনা প্রণয়নের আগেই যেন আমাদের সাথে সমন্বয় করেন। আমাদের মহাপরিকল্পনায় আওতায় আমাদের কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় করেই যেন তারা প্রকল্প নেয়। না হলে এই সংঘর্ষ হবে এবং ঢাকাবাসী এতে ভূক্তভোগী হচ্ছে। এরই মাঝে আমরা প্রায় নিজস্ব অর্থায়নে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি যাতে করে আমরা সেই পানি নিষ্কাশনে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারি। এটা সময় সাপেক্ষ। আমাদের দরপত্র চলমান আছে। আবারও তাদের অনুরোধ করব — আগামী ছয় মাসের জন্য অন্তত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেয়, খুলে দেয়। যাতে করে ভুক্তভোগীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “মেট্টোরেল — মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত যেটা এসেছে, সেটা এখন বর্ধিত করে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত আসবে। এটা নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু সেটা যে আনবে, তারা যে পিয়ার দিবে বা কলাম দিবে –সেগুলো আমাদের যে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সেটার সাথে কোনোভাবেই যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটা আমরা বলেছি। কারণ ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতায় রেখে আমরা উপর দিয়ে শুধু কাজ করলে তো আর হবে না। এটা নিয়ে সকলের সাথে সমন্বয় করে সামষ্টিক। উনারা বলেছিল আমরা যে নর্দমা করছি সেই নদর্মায় তাদের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। কিন্তু আজকে যখন তারা সরেজমিনে আসলো — তখন দেখল যে, এটা সাংঘর্ষিক হচ্ছে। সুতরাং ঘরে বসে তারা পরামর্শক দিয়ে তারা যে নকশা করে, এগুলো আসলে কিন্তু কার্যকর না। সরেজমিনে এসে প্রত্যেকটা সংস্থা বিশেষ করে আমাদের সাথে সমন্বয় করা ছাড়া যদি ঘরে বসে নকশা করে, তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।”
এ সময় জলবদ্ধতা নিরসনে চলমান কার্যক্রমের সুফল ইতোমধ্যে ঢাকাবাসী পাওয়া আরম্ভ করেছে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়েছি। প্রথম পর্যায়ে আমরা যেসকল জায়গা বদ্ধ ছিল, সেগুলো পরিষ্কার করেছি। এর সুফল ঢাকাবাসী গত বর্ষা মৌসুমে কিছু পেয়েছে। যদিও এবার বর্ষা মৌসুম প্রলম্বিত হয়েছে; প্রায় তিন মাস অবধি। কিন্তু তারপরও আমরা লক্ষ্য করেছি — প্রথম পর্যায় ছাড়া বাকি সময়টা কোনোরকমই কোনো জলাবদ্ধতা ছিল না। দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয়েছে। যার কারণে ঢাকাবাসীকে সুফল দিতে পেরেছি। এই কার্যক্রম ছিল স্বল্প মেয়াদী। আমরা এখন মধ্যমেয়াদী কার্যক্রম আরম্ভ করেছি। বৃহৎ নর্দমাগুলো — যেগুলোর অন্তর্জাল (নেটওয়ার্ক) ছিল না। সেই নর্দমাগুলোর সংস্কার করছি, সেখানে সংযোগ দিচ্ছি। তাতে আমরা মনে করি– ঢাকাবাসী আগের তুলনায় অনেক বেশি উপকার পাবে, সুফল পাবে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।