ফটিকছড়ির চাঞ্চল্যকর বাবা-ছেলের পৃথক হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি : গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৭ টায় ভিকটিম ফকির আহাম্মদ (৩৩) হলুদ্যা খোলা এলাকায় তার খামার বাড়ী হতে সিগারেট ক্রয় করার জন্য পাশর্^বর্তী দোকানে গিয়া আর ফিরিয়া আসেন নাই।


বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ ঘটনাস্থল কাঞ্চননগর ইউপির মানিকপুর হলুদ্যা খোলা সাকিনস্থ লক্ষীছড়ি সীমান্তবর্তী দুইদ্যা খালে ফকির আহাম্মদ এর গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়।

এই সংক্রান্তে তাহার পিতা এজাহার মিয়া (৭০) বাদী হইয়া অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করিলে ফটিকছড়ি থানার মামলা নং-২৪, তারিখ-২৯/০৯/২০২০ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।

গত ২৪ জুন ২০২১ তারিখ সকাল অনুমান ৯ টায় ভিকটিম এজাহার মিয়া (৭০) ও তাহার ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৩) তাহাদের পালিত গরুর পাল নিয়া ফটিকছড়ি থানাধীন কাঞ্চননগর ইউপির ছমুরহাট বাজারের ০২ কিঃ মিঃ উত্তর পাশের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় জনৈক আহমদ এর পতিত জমিতে চাষ করিতে যায়।

তথায় ভিকটিমের ছেলে ইসমাইল হোসেন গরু চরাইতে থাকে ও ভিকটিম ধানের জালা ফেলার জন্য জমি চাষাবাদ করিতে থাকে।

একই তারিখ বেলা অনুমান ৫ টার সময় ভিকটিমের ছেলে ইসমাইল গরু নিয়া বাড়ীতে চলিয়া যায়।

ইসমাইল বাড়ীতে গেলে তার মা তাকে তার বাবা কখন আসবে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় যে, জমির বীজতলা তৈরী শেষে সন্ধ্যার সময় আসবে।

কিন্তু রাত অনুমান ৮ টার সময়ও ভিকটিম এজাহার মিয়া বাড়ীতে না যাওয়ায় ভিকটিমের স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজন আশপাশে বাজার-ঘাটে খোঁজ করিতে থাকে। কিন্তু কোন খোঁজ-খবর পাওয়া যায় নাই।

পরবর্তীতে ২৫ জুন ২০২১ তারিখ বিকাল অনুমান ৩ টার সময় ভিকটিমের ছেলে ইসমাইল সহ স্থানীয় লোকজন ভিকটিমের চাষাবাদকৃত জমির পাশে জনৈক গনি মিয়ার টিলায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ঘটনাস্থল ফটিকছড়ি থানাধীন কাঞ্চননগর ইউপির ৩নং ওয়ার্ড নিশ্চিন্তপুর বাঁশঝাড়ের নিচে ভিকটিমের গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়।

এই সংক্রান্তে ভিকটিমের স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদী হইয়া অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করিলে ফটিকছড়ি থানার মামলা নং-২২, তারিখ-২৬/০৬/২০২১ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।

বহুল আলোচিত মামলা দুইটির মধ্যে বর্ণিত ভিকটিম এজাহার মিয়া হত্যা মামলাটি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা হইতে তদন্তের নির্দেশ প্রাপ্ত হইয়া পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার এসআই (নিঃ) মোঃ কামাল আব্বাস’কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্তভার গ্রহণ করিয়া মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

ভিকটিম এজাহার মিয়া হত্যা মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম করাকালীন তাহার পুত্র ফকির আহাম্মদ হত্যা মামলাটির রহস্যও একই সূত্রে গাথা মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় গত ১৯ অক্টোবর মামলাটি পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা কর্তৃক অধিগ্রহণ করতঃ এসআই কামাল আব্বাসকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

মামলা দুইটি সুষ্ঠুভাবে তদন্তের লক্ষ্যে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় উভয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ কামাল আব্বাস এর নেতৃত্বে এবং পুলিশ সুপার, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বর্ণিত মামলা’দ্বয়ের তদন্তে প্রকাশিত ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আসামী ১। মোঃ ফিরোজ (৩৮), পিতা-মৃত শফি আলম, মাতা-ছেনোয়ারা বেগম, সাং-কাঞ্চনপুর, টিলাপাড়া, শাহেনশাহ্ মাইজভান্ডার মসজিদ সংলগ্ন, থানা-ফটিকছড়ি, জেলা- চট্টগ্রামকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার লক্ষীছড়ি বাজার হইতে, ২। মোঃ সালাহ উদ্দিন মন্নান মানাম মোনায়েম (২৮), পিতা-মোঃ সুলতান আহমদ, মাতা-মোহছেনা বেগম, সাং-কাঞ্চনপুর, মাইজপাড়া, ৩নং ওয়ার্ড, থানা-ফটিকছড়ি, জেলা-চট্টগ্রামকে চট্টগ্রাম জেলার ভূজপুর থানাধীন সুয়াবিল বেত্যারকুল স্থিত মোঃ শরীফ উদ্দিন ও নজরুল ইসলাম মামুনদ্বয়ের মালিকানাধীন দরবারের গরুর ফার্ম হইতে ও ৩) মোঃ এখলাছ (৩৮), পিতা-মৃত আলী আহমদ, মাতা-তাহেরা বেগম, সাং-কাঞ্চনপুর, হাছি চৌধুরীপাড়া, থানা-ফটিকছড়ি, জেলা-চট্টগ্রামকে নিজ বসত বাড়ী হইতে গ্রেফতার করিতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ২টি ধারালো দা উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য, লিজের জমি নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে ১ম হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। দীর্ঘ ৮ মাসেও হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়ায় ২য় ভিকটিম (১ম মামলার বাদী) মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই এর নিকট হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে বিষয়টি আসামীরা অবগত হইয়া ২য় ভিকটিম এজাহার মিয়াকেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। বর্তমানে মামলা দুইটি পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার নিকট তদন্তাধীন।

বুধবার ২০ অক্টোবর গ্রেফতার কৃত আসামীদের আদালতে সোপর্দকরিলে আসামী মোঃ সালাহ উদ্দিন @মন্নান নিজেকে জড়াইয়া অপরাপর আসামীদের নাম উল্লেখ পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।
উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনার সহিত সম্পৃক্ত পলাতক অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে।