ফুটপাত তুমি কার?

বিশেষ প্রতিবেদন

শ্যামলীতে আমাদের কিছু উন্নয়নমূলক কাজও চলছে। আমি বিষয়টা দেখছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ব্যবস্থা নেবেন ওখানকার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা।


বিজ্ঞাপন

সেলিম রেজা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন


বিজ্ঞাপন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফুটপাত তুমি কার? কথাটা যেন বারবার মনে পড়ে রাজধানীবাসীর। বিভিন্ন সময় ফুটপাত থেকে হকারদের তুলে দেয়া হলেও রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় আবারও দখল হয়ে যায়। এ যেন এক লুকোচুরি খেলার মত অবস্থা। ফুটপাতগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় চলাচলের পথে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। চলছে রমরমা ব্যবসা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা। রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বর, দিলকুশা, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা, দিলকুশা, মিরপুর এক নম্বর, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোড, শিশুমেলাসহ রাস্তাগুলোর ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন কাপড়, কসমেটিক্সসহ রকমারি সব পণ্যের দোকান দিয়ে বসেছেন হকাররা। ফলে জনবহুল রাজধানীর সড়কগুলো যানবাহনে পরিপূর্ণ থাকে প্রায় সারাক্ষণ। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য প্রধান সড়কগুলোর সব কটিতে রয়েছে ফুটপাত। তবে অবৈধ স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানের দখলে থাকা এসব ফুটপাতে পথচারীদের হাঁটার সুযোগ কমই মেলে। ফুটপাতজুড়ে ব্যবসায়ীদের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। এসবে হারিয়ে যেতে বসেছে জনসাধারণের পায়ে হেঁটে চলার পথ ফুটপাত। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
নগর প্রশাসন বিভিন্ন সময় ফুটপাতজুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করলেও তা টেকসই হয়নি। বিভিন্ন সময়ের উচ্ছেদ অভিযান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফুটপাতের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও সোচ্চার অবস্থানে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। একদিকে উচ্ছেদ করতে না করতে অন্যদিকে আবার গড়ে তোলে অবৈধ স্থাপনা।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কের পাশের সব ফুটপাতে গড়ে উঠেছে নানান পণ্যের অস্থায়ী দোকান। এসব দোকানের ভিড়ে চলাচলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন পথচারীরা। ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে তারা ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনপূর্ণ রাস্তায় নেমে আসেন।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার পথচারী শাহিনুর বলেন, ফুটপাতের বেহাল দশা। হাঁটার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। ফুটপাতের দোকানে ভিড় লেগে থাকে সব সময়। তিল পরিমাণ জায়গা পাওয়া যায় না হাঁটার। ছেলেরা তাও ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতে পারে, কিন্তু মেয়ে মানুষ কী করবে! তাদের তো সমস্যার শেষ নেই।’
রাজধানীর শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও যাওয়ার রাস্তার ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল সিটি করপোরেশন। এখন এলাকাটি দেখে তা মনে হবে না। ফুটপাতসহ সড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনায় জমজমাট ব্যবসা। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি ফুটপাত নাকি ব্যবসাকেন্দ্র। হাঁটার জায়গাজুড়ে পণ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে চলছে হকারদের ব্যস্ততা।
ফুটপাতে গড়ে উঠেছে খাবারের দোকান, ফার্মেসি, চায়ের দোকান, পাসপোর্ট ফর্মপূরণের দোকান, সেলুন ও ফ্লেক্সিলোডের দোকানসহ নানান ধরনের ব্যবসার স্থাপনা। ফুটপাতজুড়ে পণ্য সাজানো। ফুটপাত ধরে চলাচলে বাধাগ্রস্ত পথচারীরা রাস্তায় হাঁটবেন, সেখানেও একই অবস্থা। রয়েছে দ্রুতগামী যানবাহনের চলাচল।
এদিকে ফুটপাতের এক পাশে স্থায়ীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়। তার পাশেই রয়েছে ২৮ নং ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের অফিস যা অবৈধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে আগারগাঁও বেতার ভবনের বিপরীত দিকের ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান চালানো হয়।ভাঙা হয় টিনের ছাউনি দিয়ে গড়ে তোলা খাবার হোটেল, বসতি এবং চিকিৎসা সামগ্রী বিক্রির বেশ কয়েকটি দোকান। উচ্ছেদ পরিচালনাকারী দল ঢাকা শিশু হাসপাতালের পূর্ব পাশের দেয়াল লাগোয়া অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও হাসপাতালের দেয়াল লাগোয়া ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যালয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম বলেছিলেন, স্থায়ী স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করতে উচ্ছেদ নথি তৈরি করতে হয়। অস্থায়ী স্থাপনাগুলো, যেগুলো রাস্তার ওপর অবৈধ সেগুলো আমাদের ভাঙতে বলা হয়।
কবে নাগাদ এ অবৈধ স্থাপনাটি ভাঙা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, এটি স্থানান্তর করা হবে। তবে উচ্ছেদ অভিযানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যালয়টি স্থানান্তরের আশ্বাস দিলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি।
ফুটপাত ছেড়ে রাস্তার কিনার দিয়ে হাঁটছিলেন পথচারী আমির হামজা। তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বলেন, রাস্তাজুড়ে দোকান। হাঁটার জায়গা কোথায়। ফুটপাতের দোকানগুলো দেখে মনে হচ্ছে সবই তাদের সম্পত্তি।’
আরেক পথচারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ফুটপাত মানুষের চলাচলের জন্য। কিন্তু ফুটপাতের যে অবস্থা, বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয় গাড়িচাপার ঝুঁকি নিয়ে। ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে, আর রাস্তা গাড়ির দখলে। পথচারীরা চলাচল করবে কী করে? প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘আমি বিষয়টি আমলে নিলাম। ওখানে (শ্যামলীতে) আমাদের কিছু উন্নয়নমূলক কাজও চলছে। আমি বিষয়টা দেখছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ব্যবস্থা নেবেন ওখানকার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা।’