ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা

বিশেষ প্রতিবেদন

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা এবারই প্রথম হচ্ছে তা কিন্তু না। অতীতেও এমন কর্মকা- দেখা গেছে। তবে এসব না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।


বিজ্ঞাপন

 

মতিয়া চৌধুরী
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য

 

নিজস্ব প্রতবিদেক : ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান সহিংসতা ও খুনোখুনির ঘটনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। দলের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক নেতা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন, এসব অপ্রীতিকর ঘটনা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় মনে করে, নির্বাচনি এই সহিংসতা বিরোধী রাজনৈতিক মহলের পাতা ফাঁদ।
সরকারি দলের কয়েকটি সূত্রের মন্তব্য, ‘বিরোধী রাজনৈতিক মহলের স্বার্থ নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা। তাদের পাতা ফাঁদে না বুঝে আবেগের বশবর্তী হয়ে ক্রীড়ানকের ভূমিকা পালন করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে কীভাবে মুক্ত থাকা যায় সেই বিষয়ে আগামী ১৯ নভেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
অনুসন্ধান করে আওয়ামী লীগের এসব সূত্র আরও জানায়, সহিংসতা ও খুনোখুনি বন্ধ করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে। কী সেই নীতি? সূত্রগুলো জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর করে তোলা এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় যাতে কোনও ছলচাতুরির আশ্রয় না নেওয়া হয় সেদিকে মনোযোগ রাখা। ছলচাতুরি করে যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নাম কেন্দ্রে পাঠালে সংশ্লিষ্ট কমিটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ সহিংসতার ঘটনায় একটি অংশের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত থাকা হয়ে ওঠে অন্যতম।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘ইউপি নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একথা যেমন সত্য, তেমনই আমাদের সময়ে কেন এই সহিংসতা হবে তাও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।’
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের মন্তব্য, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আমাদের বিরোধী পক্ষ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ভোট বর্জন করে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি এই কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধী মহল স্থানীয়ভাবে কোনও কোনও প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সহিংসতার সূত্রপাত করছেন।’
সাংগঠনিক সম্পাদকের মতে, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা ষড়যন্ত্র বুঝতে না পেরে আবেগের বশবর্তী হয়ে সহিংসতায় ক্রীড়ানকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। তাতে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা দলগতভাবে নেতাকর্মীদের যেকোনও ধরনের পাতা ফাঁদে পা না দেওয়ার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি সরকার এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা একটি মহলের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিরোধী মহলের পাতা ফাঁদে আমাদেরই কোনও কোনও নেতাকর্মী পা দেওয়ায় সহিংসতা ঘটছে।’
সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘নির্বাচনি সহিংসতা আওয়ামী লীগের ভেতরে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এসব ঘটনা দুঃখজনক।’
ফারুক খানের দৃষ্টিতে সহিংসতার কারণ, ‘অনেক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অর্থের বিনিময়ে নামানো হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ‘নীতি’ হলো আমরা যাকে মনোনয়ন দিয়েছি তার বিরুদ্ধে কোনও বিদ্রোহী থাকবে না। কারণ তৃণমূল থেকে নাম এনে যাচাই-বাছাই করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
সভাপতিম-লীর এই সদস্যের বিবরণে, ‘এখানে কতগুলো বাস্তবিক ব্যাপার আছে। ছোট একটা ইউনিয়নে ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ড মিলিয়ে ৬৫ জন নির্বাচন করছে। তাদের সমর্থক আছে, বিরোধী পক্ষও আছে। তাদের মধ্যে কিছু আবেগী কিংবা পেশীবহুল লোক আছে যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করতে চায়। এসব মিলিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরও তৎপর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখেন ফারুক খান। তার কথায়, ‘আমাদের দলের কেউ যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না হয় সেজন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দলীয় প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনের বাইরের ভোট মাত্র পাঁচ বছর হলো চালু হয়েছে। আশা করি, এটি ধীরে ধীরে সবাই বুঝবেন। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে হয়তো আগামীতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কমবে।’
সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা এবারই প্রথম হচ্ছে তা কিন্তু না। অতীতেও এমন কর্মকা- দেখা গেছে। তবে এসব না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’
মতিয়া চৌধুরীর দৃষ্টিতে, ‘একই পদে দলীয়ভাবে একজনকে মনোনয়ন দেওয়ার পরও অন্য কেউ দাঁড়ালে তখন হয়তো নিয়ন্ত্রণটা থাকছে না। তাছাড়া এই নির্বাচনে ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থ বেশি থাকে। পারিবারিক মর্যাদার বিষয়ও থাকে।’