আট মাস পর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পালটিয়া এলাকার একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া ১৪ বছরের এক মেয়ের মৃত্যুর রহস্য আট মাস পর উদঘাটন করেছে পিবিআই।


বিজ্ঞাপন

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মেলায় নিয়ে যাবার লোভ দেখিয়ে একটি কলা বাগানে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে তার দুলাভাই। মুখে চাপ দিয়ে ধর্ষণের সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মেয়েটি মারা যায়। ধর্ষক দুলাভাই মো. হাছানকে (৪৮) পিবিআই গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বিকালে কিশোরগঞ্জ আদালতে বিচারকের সামনে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল বারী জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেন শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

পিবিআই সূত্র জানায়, মেয়েটির বাড়ি কুলিয়ারচর পৌর শহরের পালটিয়া মহল্লায়। বাবা শ্রমজীবী। মা মানসিক ভারসাম্যহীন। হাছান তার চাচাতো বোনের স্বামী। হাছানের বাবার নাম আবু তাহের। বাড়ি একই উপজেলার চর কামালপুর গ্রামে।

হাছান দীর্ঘদিন যাবত শ্বশুরবাড়ি পালটিয়া গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করছিল এবং বিভিন্ন মুরগির খামারে খাবার দ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত। চলতি বছরের ১৭ মার্চ বিকালে মেয়েটি হাছানের বাড়িতে যায়। উদ্দেশ্য লাউয়ের ডুগা আনা। ডুগা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় হাছানের সঙ্গে মেয়েটির দেখা হয়। তখন মেয়েটিকে হাছান মেলায় নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেয়। সেই সময় গ্রামে মেলা চলছিল। মেয়েটি রাজি হয়ে যায়। হাছান তাকে বলে কাজ শেষ করে রাতে নিয়ে যাবে। হাছান রাত ১২টার সময় মেয়েটিকে নিয়ে মেলায় যাবার উদ্দেশ্যে বের হয়। দুলাভাইয়ের সঙ্গে মেলায় যাচ্ছে এই তথ্য পরিবারের আর কারও জানা ছিল না। বাড়ির পশ্চিম পাশে একটি কলাবাগানে মেয়েটিকে জোর করে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ওড়না দিয়ে হাত বাঁধে এবং ধর্ষণ করে। তখন মেয়েটি চিৎকার করছিল। চিৎকার করায় হাছান এক হাতে মেয়েটির মুখে চাপ দিয়ে ধরে।

প্রথমবার ধর্ষণ করার বিশ মিনিট পর ফের ধর্ষণ করে। সেই সময় মেয়েটি চিৎকার শুরু করে। তখনও হাছান মেয়েটির মুখ চেপে ধরে। দ্বিতীয় দফা ধর্ষণ শেষে দেখতে পায় মেয়েটি আর নড়াচড়া করছে না। মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরে মেয়েটির মরদেহ পাশের পুকুরে ফেলে দিয়ে ওই পুকুরেই গোসল করে হাছান বাড়ি ফিরে। পরদিন পুলিশ পুকুর থেকে মেয়েটির মরদেহ উদ্ধার করে এবং থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে।

পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে মেয়েটিকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পাবার পর ২৯ জুন ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ১ নভেম্বর মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই সদস্যরা বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিকালে মাসকান্দি বাজার থেকে হাছানকে গ্রেপ্তার করে।

পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন বলেন, তদন্তের সময় হাছানের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে সন্দেহ জোরালো হয়। তাকে গ্রেপ্তার করার পরই আমাদের কাছে সব কিছু স্পষ্ট করে বলে। পরবর্তীতে আদালতেও একই স্বীকারোক্তি দেয়। হাছান এর আগেও একটি ধর্ষণ মামলার আসামি। ওই মামলায় সে জামিনে বের হয়ে এসেই ফের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটায়।