নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে মোবাইলের চিপ সংকট রয়েছে। এই সংকট দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। মোবাইলের প্যানেলেও সংকট দেখা দিয়েছে। এসব কারণে মোবাইলের দাম বাড়ছে বিশ্বে। সেই প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশর মোবাইল ফোনের বাজারেও। এ ছাড়া নতুন যুক্ত হয়েছে ডলারের দাম ও জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির চাপ। ফলে এরই মধ্যে দেশে মোবাইলের দাম আগের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। কয়েকটি ব্র্যান্ড এরই মধ্যে দাম বাড়িয়েছে, কেউ কেউ বাজার পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রতি মাসে ১০ লাখের মতো স্মার্টফোন বিক্রি হয়। বাজার চাহিদা এটাই। তবে বাজারে বর্তমানে সরবরাহ রয়েছে সাড়ে সাত থেকে ৮ লাখের মতো স্মার্টফোন। আরও জানা গেলো, বছরে এখন ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ স্মার্ট ফোন বিক্রি হয়। যার মার্কেট শেয়ার মোট বিক্রি হওয়া মোবাইলের ৪০ শতাংশের মতো।
বিএমপিআইএ’র যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে মোবাইল সংকট তীব্র হবে। চিপসেটের সংকট আরও বাড়বে, ফলে দামও বেড়েছে। আগামীতে প্যানেলের সংকট তৈরি হবে। টেলিভিশনের প্যানেল সংকটের কারণে টিভির দাম বেড়েছে। মোবাইলের প্যানেল সংকট না কমলে দাম আরও বাড়বে। তিনি মনে করেন, প্রথম প্রান্তিকের পরে বোঝা যাবে সংকট কাটতে কতদিন লাগতে পারে। তিনি জানান, ক্রিসমাসের ছুটি ও চাইনিজ নিউ ইয়ার না গেলে এ সংকট হয়তো কাটবে না।
তিনি আরও জানান, দেশে এরই মধ্যে কয়েকটি মোবাইল ব্র্যান্ড দাম বাড়িয়েছে। এরমধ্যে গত ১ নভেম্বর থেকে অপো, ভিভোসহ আরও কয়েকটি ব্র্যান্ড দাম বাড়িয়েছে। স্যামসাং, রিয়েলমি এখনও দাম বাড়ায়নি বলে জেনেছি। তবে কিছু দিনের মধ্যে হয়তো সবাই দাম বাড়াবে। সংকট যেভাবে বাড়ছে তাতে করে দাম না বাড়িয়ে কোনও উপায় থাকবে না।
দেশে মটোরোলা মোবাইল ফোনের ন্যাশনাল পার্টনার সেলেক্সট্রা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব আরাফাত বললেন, ডলারের দাম বেড়েছে, চিপসেটের দাম তো আগেই বেড়েছে। জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে। ফলে তার প্রভাব পড়েছে মোবাইল মার্কেটে। এরই মধ্যে মোবাইলের দাম ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কয়েকজনের কাছে কিছু মোবাইল ফোনের স্টক রয়েছে। এই কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চললে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে স্টক শেষ হয়ে যাবে। ফলে নতুন বছরের শুরুতে একটা বড় চাপ আসতে পারে।
ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেড দেশে তিন ব্র্যান্ড- আইটেল, টেকনো ও ইনফিনিক্স ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক জানালেন, আগামী আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোবাইল সংকট চলতে পারে। চিপ সংকট না কাটলে মোবাইলের দাম কমবে না, বরং বাড়তেই থাকবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে দাম বেড়েছে মোবাইলের। সামনে আরও বাড়বে। প্রায় ১৫-২০ শতাংশের মতো দাম বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ওয়ালটন মোবাইলের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় ব্র্যান্ডটি বাজারে সরবরাহ ঠিক রেখেছে বলে জানালেন ওয়ালটন মোবাইলের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা এম এ হানিফ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ওয়ালটনের ফোনের পর্যাপ্ত মজুত আছে। ফিচার ফোন প্রতি মাসে বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ লাখ। গত মাসে বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ ইউনিট। আর স্মার্টফোন মাসে চলছে ৫০ হাজারের মতো। তিনি জানান, ওয়ালটন মোবাইলের দাম বাড়ায়নি, বরং কমিয়েছে। তবে নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মোবাইলের সংকট হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলোর মতো সংকটে পড়তে হবে না ওয়ালটনকে। চলতি প্রান্তিকে স্টক শেষ না হলে নতুন বছরে মোবাইলের সরবরাহ ঠিক থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
প্রসঙ্গত, দেশে বছরে ৩ কোটি ৬০ লাখের মতো মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। এর মধ্যে ১ কোটি ১০ থেকে ২০ লাখ হলো স্মার্টফোন। তবে ৭০- থেকে ৮০ শতাংশ মোবাইলফোন দেশের কারখানায় উৎপাদিত হয়। আর অবশিষ্ট ফোন আমদানি করা হয়। এর বাইরে রয়েছে গ্রে মার্কেট বা অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোন। এ সংখ্যা দেশে মোট বিক্রি হওয়া মোবাইলের ২৫-৩০ শতাংশ।