আবার বাড়ছে করোনা শঙ্কা

বিশেষ প্রতিবেদন

নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। ইউরোপ-রাশিয়াতে ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ডা. মুশতাক হোসেন, উপদেষ্টা, আইইডিসিআর


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৭ হাজার ৯৭৩ জনে। গত একদিনে মৃতদের মধ্যে ১ জন পুরুষ ও ২ জন নারী।
শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৩৯ জনের শরীরে। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪২৪ জনে।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সারাদেশে করোনায় ৯ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া করোনা শনাক্ত হয়েছিলো আরও ২৩৭ জনের শরীরে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ২৭৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ জন।
এছাড়া গত একদিনে ১৬ হাজার ৮৪৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৬ হাজার ৯১৬টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১ দশমিক ৪১ শতাংশ।
স্বস্তিতে ভুগে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে আবার বিপর্যয় আসতে সময় লাগবে না বলে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে এর নমুনা দেখা যাচ্ছে।
তারা বলছেন, সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় মানুষের মনে ‘দেশে করোনা নেই’ ধারণা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে সময় নেবে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও চিত্র বদলে যেতে পারে।
২৯ অক্টোবর ৩০৫ জন শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল অধিদফতর। এরপর থেকে দৈনিক শনাক্ত ছিল ৩০০’র কম।
এদিকে, মহামারিকালে গত ২০ নভেম্বর প্রায় ২০ মাস পর করোনায় দেশের কেউ মারা যাননি। তবে এর ঠিক ২৪ ঘণ্টা পরই ২১ নভেম্বর একদিনে সাতজনের মৃত্যুর কথা জানায় অধিদফতর।
তার পরদিন (২২ নভেম্বর) ২ জনের মৃত্যু হয়। পরের দুদিন তিনজন করে মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
অধিদফতরের তথ্যমতে, ২৪-২৫ নভেম্বর রোগী শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ২৫ শতাংশ। ১৬ অক্টোবর চলতি বছরে প্রথমদিনের মতো শনাক্তের হার দুই এর নিচে নেমে আসে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ কমায় স্বাস্থ্যবিধিতে ঢিলেঢালা ভাব এসেছে। মানুষ মাস্ক পরছে না। শপিং মল, গণপরিবহন, বেসরকারি অফিস, রেস্তোরাঁ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অভিভাবকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ছয় জুলাই দেশে দৈনিক শনাক্তর সংখ্যা প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। অতিসংক্রমণশীল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তা-বে জুলাই ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর মাস। এ মাসের প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত ও মৃত্যুতে আগের দিনের রেকর্ড ভাঙ্গতে থাকে। এরইমধ্যে করোনাকালে একদিনে সর্বোচ্চ (২৮ জুলাই) রোগী শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ২৩০ জন। শনাক্তের হার উঠে যায় ৩২ শতাংশের বেশি। ভয়ানক জুলাইয়ের রেশ চলে আগস্ট পর্যন্ত।
১২ আগস্ট পর্যন্ত ৩৮ দিনের মধ্যে ৩০ দিনই শনাক্ত ছিল ১০ হাজারের বেশি। আর করোনাকালে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় আগস্টের দুদিন। ৫ ও ১০ আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সংক্রমণ কমে আসায় সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ তুলে দেয়। খুলে দেওয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখন কোনও দিন শনাক্তের হার থাকছে ১ শতাংশের কিছু বেশি। এ পরিস্থিতিতে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে স্বাস্থ্যবিধি না মানার পাশাপাশি বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি সে শঙ্কাকে আরও উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এদিকে, ১৫-২২ নভেম্বর করোনায় নতুন শনাক্ত ও মৃত্যু তার আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। কমেছে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা। ২২ নভেম্বর এমনটা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
অধিদফতরের তথ্যমতে, গত সপ্তাহে করোনাতে নতুন শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৫৮৭ জন। এর আগের সপ্তাহে এক হাজার ৪৮৮ জন। গত সপ্তাহে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩১ জন, তার আগের সপ্তাহে ২৭ জন। অর্থ্যাৎ,মৃত্যু বেড়েছে ১৪ দশমিক আট শতাংশ।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যতদিন বিশ্ব থেকে করোনা দূর না হবে, বিপদ ততক্ষণ রয়েছেই।
বর্তমানে দেশে সংক্রমণের সর্বনি¤œ মাত্রা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পোরাডিক ট্রান্সমিশন পর্যায়ে রয়েছি। এতে সন্দেহ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে যে সমস্ত দেশে সংক্রমণ শূন্য হয়ে গিয়েছিল, তারাও আবার লকডাউনে যেতে বাধ্য হয়েছে। তালিকায় আছে থাইল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড। তাদের মতো অতো সফলতা আমাদের নেই, কাজেই কোনোভাবে এখানে শিথিল হওয়ার অবকাশ নেই।’
যে কোনও সময় সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। ইউরোপ-রাশিয়াতে ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘নজরদারি বাড়াতে হবে, রোগী ব্যবস্থাপনা বাড়াতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন যত রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, আইসোলেশন ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিন হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং টিকা এগুলো চালিয়ে যেতে হবে।’