দুর্ঘটনা তহবিলে ১০০ কোটি টাকা চায় বিআরটিএ

বিশেষ প্রতিবেদন

প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করার জন্য সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। পরে আইন অনুযায়ী গঠিত উৎসগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে এ খাতে ব্যয় করা হবে।


বিজ্ঞাপন

 

নুর মোহাম্মদ মজুমদার
বোর্ডের সভাপতি ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়ক দুর্ঘটনা তহবিলে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ট্রাস্টি বোর্ড। দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতদের জন্য এই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোন খাত থেকে তহবিলে অর্থ আসবে সেই বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বিআরটিএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে দুর্ঘটনা তহবিলের জন্য সরকার থেকে অর্থ চাওয়া এই তহবিলকে আরও দুর্বল করে দেবে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কোনও দান-দক্ষিণা নয়; পরিবহনের নিবন্ধন, নবায়ন ও ট্রাফিক জরিমানা থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই এই তহবিলকে শক্তিশালী করা সম্ভব। আর তহবিল শক্তিশালী হলে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণও দেওয়া সম্ভব হবে।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৫৪ (১) উপধারা অনুযায়ী, সরকার ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রজ্ঞাপন দেয়। গত ৩১ অক্টোবর বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিআরটিএ ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে ট্রাস্টি বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন বিধিমালা চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তহবিল গঠনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি টাকা সরকারি অনুদান পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, মোটরযানে দুর্ঘটনার ফলে কোনও ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা মারা গেলে তিনি বা ক্ষেত্রমত তার উত্তরাধিকারীদের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হবেন। এজন্য বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। বোর্ড ওই আবেদন যাচাই করে ক্ষতিপূরণ দেবে।
আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনের উৎস হবে সরকারি অনুদান, মোটরযান মালিকের চাঁদা, সড়ক পরিবহন আইনের অধীন জরিমানার অর্থ, মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের অনুদান এবং অন্যান্য বৈধ উৎস।
প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন বিধিমালা অনুযায়ী দুর্ঘটনায় নিহত হলে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে এককালীন অন্যূন ৫ লাখ টাকা। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে অন্যূন্য ৩ লাখ টাকা। গুরুতর আহত ও চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে অন্যূন ৩ লাখ টাকা, গুরুতর আহত কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে অন্যূন ১ লাখ টাকা। তবে সরকারের অনুমোদনক্রমে ট্রাস্টি বোর্ড প্রয়োজনে এর পরিমাণ কমাতে-বাড়াতে পারবে।
বোর্ডের সভাপতি ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করার জন্য সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। পরে আইন অনুযায়ী গঠিত উৎসগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে এ খাতে ব্যয় করা হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনও থোক বরাদ্দ চাই না। পরিবহনের নিবন্ধন, নবায়ন ও ট্রাফিক জরিমানা থেকে যে আয় হবে তা দিয়েই এই তহবিলকে শক্তিশালী করা সম্ভব। যদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই অর্থ আদায় করা হয় তাহলে হিসাব বলছে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা আসবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার দুর্ঘটনায় নিহত হলে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ধরেছে। আমরা বলতে চাই এর পরিমাণ কমপক্ষে ২০ লাখ হতে হবে। আর আহত হলে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। আর এখই তহবিলে পরিমাণ মালিকদের থেকে যে চাঁদা ধরা হয়েছে তা যদি কার্যকর করা হয় তহলে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি আরও বেড়ে যাবে।