মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে এসে প্রাণ হারায় দেড় হাজার ভারতীয় সেনা

আন্তর্জাতিক জাতীয়

আজকের দেশ ডেস্ক : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস আপামর বাঙালির অদম্য সাহস ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের অক্ষরে রচিত হয়েছে। হাজার বছরের মুক্তির স্পৃহা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অদম্য নেতৃত্বে শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জন করে বীর বাঙালি।


বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানিদের দুই যুগের শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে যখন ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু, এরপর প্রতিটি অঞ্চলে অঞ্চলে পাকিস্তানি জান্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। জান্তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধ। কিন্তু একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে নামে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সেনারা। দ্রুত পাকিস্তানি জান্তাদের বিতারণ এবং আমাদের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে বাঙালিদের উপর গণহত্যা ও ধর্ষণ শুরু করে পাকিস্তানি সেনারা। ফলে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রায় এক কোটি বাঙালি প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। মানবতার খাতিরে অসহায় বাঙালিদের পাশে দাঁড়ায় ভারতীয় জনগণ।

খেয়ে-পড়ে-চিকিৎসা দিয়ে এই এক কোটি শরণার্থীকে নিরাপদে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ভারতীয় সরকার। একইসঙ্গে কলকাতার থিয়েটার রোড থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভর্তি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পান বাঙালি নেতারা।

প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে ভারতের মাটিতে বসেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকেন বাঙালি কমান্ডাররা। শুরুতে গেরিলা স্টাইলে দেশের ভেতরে ঢুকে পাকিস্তানি দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা। পরবর্তীতে ভারতের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ অংশগুলোতে ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধারা।

ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসব ক্যাম্পে যোগ দিতেন নতুন মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর সেক্টর কমান্ডারদের অধীনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তেন এবং যুদ্ধে অংশ নিতেন।

পাকিস্তানিদের দ্বারা বাংলার মাটিতে মানবিক বিপর্যয়ের প্রকৃত তথ্য বিশ্বব্যাপী জানানোর ব্যবস্থা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ফলে ভারতের ওপরও চরম ক্ষুব্ধ হয় পাকিস্তান।

৩ ডিসেম্বর তারা বোমা হামলা চালায় ভারতের মাটিতে। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি সহযোগিতা করতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতীয় বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাদের এই যৌথবাহিনীর নাম দেওয়া হয় মিত্রবাহিনী।

যুদ্ধের শেষ দুই সপ্তাহে, বাংলার মাটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি জান্তাদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে নেমে ১৪২১ জন ভারতীয় প্রশিক্ষিত সেনা কর্মকর্তা প্রাণ হারান।

এছাড়াও আহত হন ৪০৫৮ জন সেনা। ধ্বংস হয় ২৪ টিা ভারতীয় ট্যাঙ্ক এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ১৩টি। বিমানহানি হয় মোট ১৪ টি।

ভারতীয় ইঞ্জিনিয়াররা সীমান্ত থেকে ঢাকা পর্যন্ত সেনাবহর পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন নদী ও ভাঙ্গা সড়কের স্থান মিলিয়ে মোট প্রায় ১০ হাজার ফুট ব্রিজ তৈরি করে। এই যুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকাও অপরিসীম।

এই যুদ্ধ-বিজয়ের প্রসঙ্গে উচ্চ-প্রশিক্ষিত ভারতীয় জেনারেলরা উচ্চকিত প্রশংসা করেছেন বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের।

নিজেদের আত্মজীবনীতে তারা লিখেছেন, মুক্তিবাহিনীর গেরিলা অপারেশনগুলো পাকিস্তানিদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহসের কারণে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তানিরা, নড়ে গিয়েছিল তাদের ভিত।

যেকারণে যুদ্ধের শেষদিকে যখন ভারতীয় সেনারা যখন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মুখ সমরে নামে, তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পাকিস্তানিরা। ফলে বাংলাদেশের বিজয় তরান্বিত হয়।