দুর্নীতি দমন কমিশন ও সমবায় অধিদপ্তরের প্রতি তদন্তের আহবান
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অন্যতম বৃহত্তম সমবায় সমিতি দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লি: (কালব) এর গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জস্থ কুচিলাবাড়ীতে রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলের পুরাতন কাজ সংস্কারের ছলে প্রায় ২৬ কোটি টাকার বিল ভাউচার করে অর্ধেক টাকাই আত্মসাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নামসর্বস্ব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জাহানারা ট্রেডার্স রিসোর্টের তথাকথিত সংস্কারের অধিকাংশ কাজ করেছে। প্যাডসর্বস্ব কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যতিত রিসোর্টের কাজ করা জাহানারা ট্রেডার্সের নেপথ্য মালিক কালবের সেক্রেটারী ও রিসোর্ট পরিচালনা কমিটির সদস্য আরিফ মিয়া বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। রিসোর্ট সংস্কার কাজের অন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আলমগির এন্টারপ্রাইজ,ইয়াস আর্কিটেক্ট ও মেক্সিমকো ইলেক্ট্রনিক্স এর কথিত মালিক আরিফ মিয়ার আত্মীয় স্বজন। তাছাড়া, ঠিকাদার জাকির হোসেন ও পানির দামে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকায় রিসোর্টের ”পুরাতন অব্যহৃত পণ্য” ক্রেতা দেলোয়ার হোসেনও আরিফ মিয়ার কাছের মানুষ। নেপথ্যে থেকে আরিফ মিয়া সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। দুর্নীতির সুবিধাভোগী চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী এবং একাউন্টস ম্যানেজার ও সকল দরপত্র কমিটির সদস্য সচিব ফিরোজ আলম। এছাড়া,দুর্নীতির সুবিধাভোগীর সন্দেহের তীর পরিচালক ও ইন্টারনাল অডিট কমিটির আহবায়ক বাবলু কোড়াইয়া’র দিকে। কেননা,রিসোর্টে অনিয়ম দুর্নীতির কোন আপত্তি ইন্টারনাল অডিট কমিটির রিপোর্টে করা হয়নি।
১/১/২০২১ থেকে ২৪/১১/২০২১ তারিখ পর্যন্ত কালবের জেনারেল লেজার একাউন্ট স্টেটমেন্ট অনুযায়ী,১৭/১/২০২১ তারিখে পি১০০১২১০১০২৩ নং ভাউচারে ২,৯৪৪,২৩৬.০০ টাকা,১৫/৩/২০২১ তারিখে পি১০০১২১০৩০৩১ নং ভাউচারে ২১,৬১৫,৪৩২.০০ টাকা, ৯/৫/২০২১ তারিখে পি১০০১২১০৫০১৭ নং ভাউচারে ৩৩,৬৬৬,০৩৫.০০ টাকা, ২১/৬/২০২১ তারিখে পি১০০১২১০৬০৫৬ নং ভাউচারে ১৫,৭১০,৮১৭.০০ টাকা, ১৪/৯/২০২১ তারিখে পি১০০১২১০৯০৩২ নং ভাউচারে ১৭,১৩২,৫০০.০০ টাকা রিসোর্টে নিয়োগকৃত ঠিকাদার সকল কাজের কাজি খ্যাত জাহানারা ট্রেডার্সের অনুকুলে রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলের কাজের হেডে কালবের একাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করা হয়েছে। গত বছরেও কয়েক দফায় জাহানারা ট্রেডার্সের অনুকুলে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলের কাজের হেডে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬/১/২০২১ তারিখে সি১০০১২১০১১৩৯ নং ভাউচারে জাকির হোসেনের অনুকুলে ১৭৪,১০০.০০ টাকা, মেসার্স আলমগীর এন্টারপ্রাইজের অনুকুলে(বালু ভরাট ও লেভেলিং বাবদ) ৩/২/২০২১ তারিখে পি১০০১২১০২০১০ নং ভাউচারে ২,৮৭৫,৮৪০.০০ টাকা ও ৪/৩/২০২১ তারিখে পি১০০১২১০৩০০৯ নং ভাউচারে ৬,১৭৬,৯৩৮.০০ টাকা, ইয়াস আর্কিটেক্ট লি: এর অনুকুলে(ইন্টেরিয়র ডিজাইন বাবদ) ১৬/৩/২০২১ তারিখে পি১০০১২১০৩০৩৯ নং ভাউচারে ৩২০,০০০.০০ টাকা, ২৭/৬/২০২১ তারিখে পি১০০১২১০৬০৬৫ নং ভাউচারে ৬২,৫০০.০০ টাকা এবং মেক্সিমকো ইলেকট্রনিক্স(এয়ার কন্ডিশনার বাবদ) এর অনুকুলে ২৮/১০/২০২১ তারিখে পি১০০১২১১০০৭২ নং ভাউচারে ৪৯১,৪০০.০০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নিছক অর্থ আত্মসাতের জন্যে রিসোর্টে সকল কাজ করা হয়েছে নি¤œ মানের। নির্মান কাজে নি¤œ মানের ইট,সিমেন্ট,বালু ব্যবহার করা হয়েছে। সুইমিং পুল,এসি,আসবাব পত্র মানসম্মত নয়। বর্তমান বোর্ড বিগত বোর্ডের ২০১৭ সালে সম্পাদিত কাজের সংস্কারের নামে তথা রুম ডেকোরেশন,সুইমিং পুল,বাগান,মাটি ভরাটের ছলে ২৬ কোটি টাকার অধিক ব্যয় দেখিয়েছে। বিনিয়োগের জন্যে সমবায় অধিদপ্তর থেকে বিধিবদ্ধ অনুমোদন নেয়া হয়নি। সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টে রিসোর্টের ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির ছিটাফোটাও তুলে ধরা হয়নি। কালবের ঘুষ উপঢৌকনে আচ্ছন্ন যুগ্ম নিবন্ধক নবিরুল ইসলাম সহ অন্যান্য অডিট কর্মকর্তাদের অনিয়ম দুর্নীতি চোখ এড়িয়ে গেছে। বর্তমান বোর্ডের ইন্টারনাল অডিট কমিটিও রিসোর্টের দুর্নীতির বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তরের মত তমাসাচ্ছন্ন। বর্তমান বোর্ডের সময়ই রিসোর্টে বেশি অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। পুরাতন কাজ ঘষা মাজা করার নামে ২৬ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ দেখিয়ে অধিকাংশ টাকাই আত্মসাত করা হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান রিসোর্টের কথিত উন্নয়নের অধিকাংশ কাজ করছে। যার নেপথ্য প্রধান কারিগর আরিফ মিয়া। । দরপত্র আহবান ও দরদাতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা অনসরন করা হয়নি। ১৭ অক্টোবর সাধারন সভায় ডেলিগেটগণ রিসোর্টে ঠিকাদার নির্বাচন, জাহানারা ট্রেডার্সের মত নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সকল কাজ করানো ও অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ জানান। অথচ বর্তমান ইন্টারনাল অডিট কমিটির রিপোর্টে তার লেশমাত্র নেই।
উল্লেখ্য,কালবের গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জস্থ কুচিলাবাড়ীতে রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হল সমবায় প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের বোঝা আরো ভারি করেছে। কালব প্রতিমাসে প্রায় ৩ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। সদস্যদের আপত্তি, ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও কেবল নিজেদের পকেট ভারি করার জন্যে পর্যায়ক্রমে প্রায় ১৪৮,৬৫,১৯০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছে। এরমধ্যে জমি ক্রয়ে ৬৩,৪৯,০৭,০০০ টাকা এবং রিসোর্ট উন্নয়নের নামে ব্যয় হয়েছে ৮৫,১৬,১১,০০০ টাকা। ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এখান থেকে আয় বলতে তেমন কিছুই নেই। ভবিষতেও আয়ের তেমন কোন সম্ভাবনা না থাকলেও বিনিয়োগ করা বন্ধ নেই। এখান থেকে আয় না হলেও চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী-সেক্রেটারী আরিফ মিয়া,একাউন্ট ম্যানেজার ফিরোজ আলম সহ কর্তা ব্যক্তিদের পকেটভারি করার ব্যবস্থা হয়েছে ঠিকই।
দুর্নীতি দমন কমিশন ও সমবায় অধিদপ্তর এবং কালবের অভিজ্ঞ ডেলিগেটদের দিয়ে একটি কমিটি করে তদন্ত করলে রিসোর্টে যে নি¤œ মানের কাজ করে ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাত করা হয়েছে; তার প্রমান পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টগণ দাবি করছেন।