চট্টগ্রামে র‍্যাব কর্তৃক আলোচিত জানে আলম হত্যা মামলার ২০ বছর পলাতক আসামি গ্রেফতার

অন্যান্য এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী “জানে আলম” হত্যা মামলার ২০ বছর ধরে উদ্বাস্তু ও দারোয়ানের ছদ্মবেশে পলাতক মৃত্যূদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী সৈয়দ আহমেদ’কে আটক করেছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।


বিজ্ঞাপন

গত ৩০ মার্চ ২০০২ তারিখে আদালতে স্বাক্ষী দেওয়ার প্রাক্কালে আনুমানিক সকাল ৯ টার দিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিকারী ও সৈয়দ বাহিনী ব্যবসায়ী জানে আলম (৪৮) কে তার ০১ বছরের শিশু বাচ্চার সামনে নির্মম ও নৃশংসভাবে প্রথমে লাঠি সোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যূ নিশ্চিত করার জন্য গুলি করে হত্যা করে। যা সেই সময়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

উক্ত ঘটনায় ভিকটিম এর বড় ছেলে মোঃ তজবিরুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ২১ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং- ২১, তারিখ ৩০ মার্চ ২০০২ ইং, ধারা- ১৪৮/৪৪৭/৪৪৯/৩০২/৩৪, পেনাল কোড ১৮৬০। যার মধ্যে সৈয়দ আহম্মেদ ২নং এবং অন্যতম প্রধান আসামী।

এর মাত্র চার মাস পূর্বে অর্থাৎ গত ০৯ নভেম্বর ২০০১ তারিখে নিহত ভিকটিম এর আপন ছোট ভাই অর্থাৎ বাদীর আপন ছোট চাচাকে ঐ বাহিনী একইভাবে নির্মম ও নৃশংসভাবে প্রথমে লাঠি সোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যূ নিশ্চিত করার জন্য গুলি করে হত্যা করে।

উক্ত ঘটনায়ও চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ১৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল যার মামলা নং-০৭, তারিখ- ০৯ নভেম্বর ২০০১, ধারা- ১৪৩/৩২৩/ ৩২৪/ ৩১৩/ ৩২৬/ ৩০৭/৩০২/৩৪, পেনাল কোড- ১৮৬০। উল্লেখ্য যে, এই মামলাতেও সৈয়দ আহম্মেদ ০২নং এবং অন্যতম প্রধান আসামী ছিলেন।

গত ৩০ মার্চ ২০০২ ইং তারিখ ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যায় দায়েরকৃত মামলার ঘটনায় মহামান্য আদালত গত ২৪ জুলাই ২০০৭ তারিখে রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে ১২ জনকে ফাঁসী এবং ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করে থাকেন।

পরবর্তীতে উক্ত রায়ের আসামীগন মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে আপীল করলে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট সৈয়দ আহম্মেদ সহ মোট ১০ জনকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ও ২ জনকে যাবজ্জীবন এবং বাকীদের খালাস দেন।

জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকান্ডের মুল কারণ হিসেবে জানা যায় যে, ব্যবসায়ী জানে আলম (৪৮) গত ৯ নভেম্বর ২০০১ তারিখে তার আপন ছোট ভাইয়ের হত্যা কান্ডে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ছিলেন। মূলত জানে আলম পরিবারের বড় ছেলে এবং আর্থিকভাবেও কিছুটা স্বচ্ছলও ছিলেন। তাই মামলা-মোকদ্দমার ব্যয়ভার তিনি বহন করতেন।

এতে প্রতিপক্ষের আক্রোশ তার উপর দিন দিন বেড়ে যায়। প্রতিপক্ষের ধারনা ছিল যে, ব্যবসায়ী জানে আলকে হত্যা করলে ঐ পরিবারের মামলা-মোকদ্দমা চালাবার মত কোন লোক থাকবে না এবং প্রত্যক্ষভাবে আর কোন সাক্ষীও থাকবে না।

আর্থিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়বে এবং তার সকল সম্পত্তি সহজে তারা গ্রাস করতে পারবে। এই কারনে ঘাতক চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্যবসায়ী জানে আলমকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে।

পরবর্তীতে প্রথম হত্যার সংঘটিত হওয়ার পরপরই সৈয়দ আহম্মেদ চট্টগ্রামের বাঁশখালী বিভিন্ন ডাকাত দলের সাথে সমুদ্র পাড়ি দেয়। সেখান থেকে এসে ৪ মাস পরে আবার ব্যবসায়ী জানে আলমকে হত্যা করে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকে।

সে প্রথম ৪ থেকে ৫ বছর তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন ছেড়ে বাঁশখালী, আনোয়ারা, কতুবদিয়ায় ও পেকুয়ায়ার সাগর উপকূলবর্তী এলাকায় থাকতে শুরু করে। পরবর্তীতে সে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় উদ্বাস্তু হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় ভূয়া ঠিকানা প্রদান করে অবস্থান করে।

এছাড়াও সে জঙ্গল ছলিমপুরে মশিউরের ছত্রছায়ায় ও সহযোগীতায় সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে থাকে। কিন্তু পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে সেখানে সে নিরাপদ মনে না করে পুনরায় সে চট্টগ্রামে বিভিন্ন মাজার এলাকায় বাবুর্চির কাজ নিয়ে থাকে।

এরপর চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানায় একটি বাড়ীতে দাড়োয়ানের ছদ্ম বেশে কাজ নেয় এবং সেখানে সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।

উল্লেখ্য যে, পলাতক থাকাকালীন সময় আসামী সৈয়দ আহম্মেদ ভূয়া ঠিকানায় দুটি ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে ফেলে এবং তার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে। যার কারনে তাকে কোনভাবেই ব্যবসায়ী জানে আলমের হত্যা মামলার আসামী বলে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, ব্যবসায়ী জানে আলমের হত্যা মামলার ০২নং ও অন্যতম প্রধান আসামী এবং উক্ত মামলার ২০ বছর ধরে উদ্বাস্তু ও দাড়োয়ান সেজে পলাতক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী সৈয়দ আহমেদ চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানা এলাকায় অবস্থান করছে।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার ২৭ জানুয়ারি, ৩ টার সময় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী সৈয়দ আহম্মেদ (৬০), পিতা- মৃত ইয়াকুব মিয়া, সাং- আমিরাবাদ, থানা- লোহাগাড়া, জেলা- চট্টগ্রামকে আটক করে।

পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যা মামলায় ২০ বছর ধরে উদ্বাস্তু ও দারোয়ান সেজে পলাতক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী বলে স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে চট্টগ্রাম জেলার সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।