” ৮ বছরের জেল ও ৮০,০০০ টাকা জরিমানা ”
বিশেষ প্রতিবেদক ঃ নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ২ জন সদস্যসহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাটকা আহরনকারী হত দরিদ্র জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চাউল আত্মসাতের আপরাধে দায়েরকৃত মামলায় মঙ্গলবার ৮ ফেব্রুয়ারি, নোয়াখালীর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক কর্তৃক মামলায় আসামিদের সবাইকে মোট ৯ বছরের সাজা ও ৮০.০০০ হাজার টাকা জরিমানা করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
আসামিদের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, মোঃ মেহেরাজ উদ্দিন, চেয়ারম্যান, ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ, মোঃ গোলাম ফারুক, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, জাহাজমারা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, হাতিয়া, নোয়াখালী, তাহেরা বেগম, সদস্য, ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ এবং ছকিনা খাতুন শাহানারা, সদস্য, ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা,
মোঃ মশিউর রহমান, সাবেক সহকারী পরিচালক, বর্তমানে উপ-পরিচালক, দুদক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, আসামিগণ উক্ত ইউপির জাটকা আহরনকারী হত দরিদ্র ভিজিএফ ৩৮৯ জন জেলে প্রত্যেকের জন্য মার্চ-২০১৬ হতে জুন-২০১৬ পর্যন্ত ৪ মাসে ১৬০ কেজি হারে বিতরণের জন্য মোট ৬২.২৪ মেঃ টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকার দরিদ্র ভিজিএফ জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত চাল যথাযথভাবে বিতরণের দায়িত্বে থেকে কম পরিমানে বিতরণ করেন, কোন কোন ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তদের না দিয়ে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরী ও স্বাক্ষর করে দাখিল করেন।
তদন্তকালে সাক্ষীগণের জবানবন্দি দ্বারা গড়ে অর্ধ্বেক বিতরণ না করার প্রমাণ পাওয়ায় জেলেদের ৬২.২৪ মেঃ টন এর স্থলে ৩১.১২ মোঃ টন বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা হয়।
একইভাবে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে জানুয়ারী-২০১৬ হতে জুন-২০১৬ পর্যন্ত হত দরিদ্র (ভিজিডি) মহিলাদের চাউল বিতরণের খাদ্য শস্য ছাড়করণ পত্র মোতাবেক নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ১১৯ জন কার্ডধারী ভিজিডি মহিলাদের নিকট বিতরণের জন্য (৩.৫৭০ + ৩.৫৭০ + ৩.৫৭০ + ৩.৫৭০ + ৩.৫৭০ + ৩.৫৭০) ২১.৪২ মেঃ টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকার ভিজিডি মহিলাদের নামীয় চাল যথাযথভাবে বিতরণের দায়িত্বে থেকে কম পরিমানে বিতরণ করেন; কোন কোন ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তদের না দিয়ে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরী ও স্বাক্ষর করে দাখিল করেন।
তদন্তকালে সাক্ষীগণের জবানবন্দি দ্বারা গড়ে অর্ধ্বেক বিতরণ না করার প্রমাণ পাওয়ায় জেলেদের ২১.৪২ মেঃ টন এর স্থলে ১০.৭১ মোঃ টন বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা হয়।
আসামিগণ বরাদ্দপত্র নিয়ে চাউল উত্তোলন করে গত ১৫-০৫-২০১৬ তারিখে চাউল বিতরণের সময় নির্ধারিত পরিমানে এবং তালিকা অনুযায়ী বিতরণ না করে কাউকে ১০ কেজি, কাউকে ২০ কেজি হারে চাউল বিতরণ করে প্রতিটি মাস্টার রোলে ৩০ কেজি উল্লেখ করে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরী করেন।
অত্র মামলা রুজুর পূর্বে ও পরে উক্ত অর্থ বছরে ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ১১৯ জন কার্ডধারী ভিজিডি মহিলার নিকট বিতরণের জন্য জানুয়ারী-২০১৬ হতে জুন-২০১৬ পর্যন্ত মোট ৬ টি বরাদ্দপত্রের মাধ্যমে প্রত্যেকের নামে ৬ মাসে (৩০ঢ৬)=১৮০ কেজি চাউল বিতরণের জন্য আসলেও যথাযথভাবে বিতরণ করা হয়নি।
মহিলাদের ২১.৪২ মেঃ টন এর স্থলে ১০.৭১ মেঃ টন চাউল বিতরণ না করে এর সরকারী মূল্য প্রায় ৩,৬০০ টাকা হারে (৩১.১২+১০.৭১=৪১.৮৩*৩৬০০) ১৫,০৫,৮৮০.০০ টাকা অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভংঙ্গ করে আত্মসাৎ করেন।
এছাড়া প্রত্যেক চাউল গ্রহীতার নিকট থেকে প্রতিবার চাউল গ্রহণের সময় ১৬০ টাকা হারে চাঁদা (চৌকিদারী ট্যাক্স উল্লেখ করলেও আদায় সংক্রান্তে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণ কর্তৃক রেজুলেশনে অনুমোদন নাই) আদায় করে ব্যাংক হিসাবে জমা না করে এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যগণের রেজুলেশনে অনুমোদন না করিয়ে আত্মসাৎ করেন।
এছাড়া বন বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন খাল ও বাজার অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভংঙ্গ করে ডাক দিয়ে অলিখিতভাবে ইজারা প্রদান করে অর্থ আদায় করে ইউপি ফান্ডে জমা না করে আত্মসাৎ করে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন। ০৩-১০-২০১৭ তারিখে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়।
মামলার সূত্র,- হাতিয়া (নোয়াখালী) থানা মামলা নং-১৩ তারিখ: ১৬-০৫-২০১৬ খ্রিঃ; ধারা: দন্ডবিধি’র ৪০৯/৪২০/৩৪২/৩৩২/১৮৬/৩৫৩ ধারা।
মামলা দায়েরকারী ছিদ্দিক আহম্মেদ জুয়েল, সাবেক ইউপি সচিব, ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ, হাতিয়া, নোয়াখালী।