নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ গাজীপুরের পুবাইলের অটো চালক রবিউল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সহ মামলার মুল আসামি কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
জানা গেছে, গ্রেতারকৃত আসামীর নাম মোঃ স্বপন (২৮), পিতা-মৃত আব্দুর রশিদ, সাং-গোবিন্দপুর, থানা-হোসেনপুর, জেলা-কিশোরগঞ্জ এপি-সাং-সিলমন (রহিম মাষ্টারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া), থানা-পূবাইল, জিএমপি, গাজীপুর তাকে গতকাল বুধবার ৯ মার্চ, রাত অনুমান ৩ টার সময় টঙ্গী-পূর্ব থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলার বাদী মোসাঃ মরিয়ম বেগম (৩৬), স্বামী-রবিউল ইসলাম, সাং-তালটিয়া পূর্ব পাড়া, থানা-পূবাইল, জিএমপি, গাজীপুর, অভিযোগে উল্লেখ করেন যে, তার স্বামী অর্থাৎ মামলার ভিকটিম একজন অটো চালক ছিলেন।
ভিকটিম প্রতিদিনের ন্যায় গত ২৪/০৩/২০১৯ তারিখে বিকাল সাড়ে ৩ টার সময় অটোরিক্সা নিয়ে বাসা থেকে বের হন এবং ঐ দিন রাত ৯ টার সময় বাজার নিয়ে বাসায় এসে পুনরায় অটো চালাতে বের হয়ে যান।
বাদী আরো জানান যে, রাত ১২ টার সময় তাদের প্রতিবেশী মাহবুব (৩৮), পিতা-ইমান আলী, সাং-তালটিয়া পূর্ব পাড়া, থানা-পূবাইল, জিএমপি গাজীপুর জানান যে, বাদীর স্বামীকে ফোন দিলে অন্যলোক ফোন রিসিভ করে এবং বাদীর ছেলে মোঃ জনি তার বাবার মোবাইলে ফোন দেওয়ার পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোনটি রিসিভ করে বলে তোমার বাবাকে খাওয়াইছি তোমার বাবাকে আইস্যা নিয়ে যাও তখন তার বাবা কোথায় আছে জানতে চাইলে বলে যে, মিরের বাজার হতে উলুখোলা আসার পথে হাতের বাম পাশে।
উক্ত সংবাদ পাওয়ার পর বাদী তার ছেলে এবং আত্মীয় স্বজন নিয়ে খোজাখুজি করার পর না পেয়ে ফেরৎ আসে।
পরবর্তীতে ১৩/০৪/২০১৯ তারিখে বিকাল অনুমান ৪ টার সময় রাকিব নামক এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে বাদীকে জানান যে, পূবাইল বিন্দান এলাকায় খালের পানিতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ ভাসমান অবস্থায় পূবাইল থানা পুলিশ উদ্ধার করে।
এই সংবাদ পাওয়ার পর বাদী পূবাইল থানায় এসে তার স্বামীর লাশ সনাক্ত করেন। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে পূবাইল থানার মামলা নং-০৯, তারিখ-১৫/০৪/২০১৯, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
মামলাটি পূবাইল থানা পুলিশ প্রায় ৫ মাস তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশে মামলাটি তদন্তভার পিবিআই গাজীপুর জেলার উপর অর্পন করা হয়।
অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মোঃ মনিরুজ্জামান মামলাটি তদন্ত করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত ২৪ মার্চ ২০১৯ সালে রাত্র অনুমান সাড়ে ৯ টার সময় গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ স্বপনকে তার সহযোগী আসামীগণ মোবাইলে ফোন দিয়ে পূবাইলে মিরের বাজার যেতে বলে। এরপর গ্রেফতারকৃত আসামী স্বপন মিরের বাজার পৌছানোর পর তার সহযোগী আসামীদের সাথে দেখা হয় এবং তারা একত্রে পূবাইলে মিরের বাজার একটি হোটেলে চা নাস্তা খায়।
পরবর্তীতে ভিকটিম অটো নিয়ে আসামীদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আসামীগন ভিকটিমের অটোটি ভাড়া করেন এবং ভিকটিমের দুই পাশে দুই জন ও পিছনে তিন জন বসে।
এরপর আসামীগণ ভিকটিমের অটো ভাড়া করে মিরের বাজার থেকে উলুখোলার দিকে যাওয়ার পথে কিছুদুর যাওয়ার পর একটি দোকানের পাশে অটোরিক্সা থামিয়ে জুস কিনে তারা নিজেরা খায় এবং ভিকটিমকে কৌশলে জুসের সাথে অজ্ঞান করার ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ায়।
পরবর্তীতে ওখান থেকে আরো কিছুদুর যাওয়ার পর ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পড়লে আসামীদের মধ্য থেকে একজন অটো চালকের আসনে ভিকটিমকে পাশে বসিয়ে অটো চালাতে থাকে।
এরপর কিছুদুর যাওয়ার পর নির্জন স্থান পেয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ভিকটিমকে ডোবার মধ্যে ফেলে দিয়ে অটো নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে ঘটনার দিনই উক্ত অটো বিক্রি করে বিক্রয়কৃত টাকা ভাগাভাগী করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, মামলার গ্রেফতারকৃত আসামী তার সহযোগীদের নিয়ে অটোরিক্সার ড্রাইভার ভিকটিম রবিউলকে জুসের সাথে নেশা জাতীয় ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ায় এবং উক্ত জুস খাওয়ানোর পর অজ্ঞান অবস্থায় মিরের বাজার টু গাউছিয়া রোডের বাম পাশে বিন্দান নামক স্থানে জহিরুলের দোকানে পিছনে কচুরী পানার মধ্যে ডোবার পানিতে অটোরিক্সার ড্রাইভার ভিকটিম রবিউলকে ফেলে দিয়ে অটোরিক্সা নিয়ে চলে যায় এবং আসামীরা অটোরিক্সা নিয়ে বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগী করে নিয়ে যায়।
আসামী মোঃ স্বপনকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে উক্ত আসামী নিজেকে জড়িয়ে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।