ভেষজ চিকিৎসার প্রসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন উদ্যোগ

Uncategorized স্বাস্থ্য

  1. নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ইউনানি, আয়ুর্বেদিক এবং হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়হাসান শান্তনু ভেষজ চিকিৎসার প্রসারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নতুন করে উদ্যোগ নিচ্ছে। এ চিকিৎসা দেয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে শিগগিরই।

    আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রার্থীদের আবেদনপত্র পাঠানোর শেষ দিন উল্লেখ করে ইতোমধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীকে ভেষজ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দিতে সেগুলোতে ইউনানি, আয়ুর্বেদিক এবং হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

    মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত ‘স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসূচি’র (এইচপিএনএসডিপি) আওতায় আপাতত চিকিৎসক ও অন্যান্য লোক নিয়োগ দেয়া হবে। এ ছাড়া ভেষজ চিকিৎসার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান আরো উন্নত করার পরিকল্পনাও আছে মন্ত্রণালয়ের।

    এ লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথাও ভাবছেন স্বাস্থ্য খাতের নীতিনির্ধারকরা।

    স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের তিনজন কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে জানান, ১০ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভেষজ চিকিৎসার আধুনিকায়নে নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে। সনাতনী ওষুধের চাহিদা পূরণের জন্য আর এর মান, নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা আরো উন্নত করতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ওই সম্মেলনে ‘সনাতনী ওষুধ কৌশল: ২০১৪-২০২৩’ প্রণয়ন করে।

    একেও অনুসরণ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ওই সম্মেলনে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ব্যাপারে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

    ওই সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশে ভেষজ চিকিৎসার প্রসারে ভারত সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র উল্লেখ করে।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের ভেষজ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এখন চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মকর্তা মিলিয়ে ৮৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।

    এর মধ্যে আছে ঢাকার মিরপুরের সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে প্রভাষক (ইউনানি) তিনজন, প্রভাষক (আয়ুর্বেদিক) তিনজন, আইএমও (ইউনানি) দুইজন, আইএমও (আয়ুর্বেদিক) দুইজন, মেডিকেল কর্মকর্তা (ইউনানি) ২১ জন, মেডিকেল কর্মকর্তা (আয়ুর্বেদিক) ২০ জন এবং মান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (আয়ুর্বেদিক) একজন। সিলেটের সরকারি তিবি্বয়া কলেজে নিয়োগ দেয়া হবে প্রভাষক (ইউনানি) ৫ জন ও চিকিৎসা কর্মকর্তা (ইউনানি) ৫ জন।

    তথ্যমতে, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির আরেকটি শাখা হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও একইসঙ্গে লোকবল নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

    বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শূন্যপদে ১৬ জন চিকিৎসা কর্মকর্তা (হোমিওপ্যাথিক) নিয়োগ দেয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকার মিরপুরের সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে প্রভাষক (হোমিওপ্যাথিক) একজন আর এনেসথেলজিস্ট একজন নিয়োগ দেয়া হবে।

    জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্য সম্মেলনে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সনাতনী ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশীয় অঞ্চল। সম্মেলনে সনাতনী ওষুধ কৌশল ২০১৪-২০২৩ পর্যালোচনা করা হয়। সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রচলিত সনাতনী ওষুধ কাঠামোকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সম্মেলনে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।

    সম্মেলনে জানানো হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ‘আয়ুর্বেদ’ ও ‘ইউনানি’; ভারতে ‘আয়ুষ’ (আয়ুর্বেদ, ইয়োগা, ইউনানি, সিদ্ধা, হোমিওপ্যাথি); ভুটানে ‘সোয়া রিগপা’; ইন্দোনেশিয়ায় ‘জামু’; কোরিয়ায় ‘কোরিয়ো’; মিয়ানমারে ‘দেসানা’, ভেসিজ্জা’, ‘নেটখাট্ট’, ‘ভিজ্জাধারা’, নেপালে ‘আয়ুর্বেদ’, ‘ইউনানি’, ‘আমচি’ এবং শ্রীলংকায় ‘দেশীয়া চিকিৎসা’ ও ‘সিদ্ধা’ প্রচলিত আছে।

    এ ছাড়া অনেক দেশেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা হয়ে থাকে। সম্মেলনে অংশ নেয়া ১১টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশে সনাতনী ওষুধের জাতীয় নীতিমালা হয়েছে, ছয়টি দেশে সনাতনী পদ্ধতির চিকিৎসকদের জন্য বিধান চালু আছে এবং নয়টি দেশে সনাতনী ওষুধের ওপর উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে।

    ওই সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, মানসম্মত সনাতনী ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে তথ্য দেয়া-নেয়ার সুযোগ বাড়ানো এবং নীতিমালা ও বিধান তৈরিতে সদস্য দেশগুলোকে সহযোগিতার ধারা সংস্থাটি অব্যাহত রাখবে।