স্যালুট হে নড়াইল জেলার সুর্যসন্তান’রা,নড়াইলে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় বীর মুক্তীযোদ্ধাগণ

Uncategorized আন্তর্জাতিক

মো:রফিকুল ইসলাম,নড়াইলঃ
১৯৭১ সনের (২৫ মার্চ) মধ্যরাত হতে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই নড়াইলের আপামর জনসাধারণ স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে সংঘটিত হতে থাকে। ২৬ শে মার্চ ভোরে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এর সাহায্য সহযোগিতায় স্থানীয় ব্যক্তি জনাব অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ এবং অন্যান্যদের সহায়তায় নড়াইল ট্রেজারী ভেঙ্গে অস্ত্রসস্ত্র বের করা হয় এবং বিপুল উৎসাহ নিয়ে লেঃ অবঃ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে বড়দিয়া এবং নলদীতে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। কিঞ্চিত প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা লেঃ মতিয়ার রহমান এর নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাস আক্রমন করেন।
যশোর জেলার ঝুমঝুমপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর গুরতর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে শহীদ হন হাবিলদার বছির আহমেদসহ অনেকে। এর পর নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।পরবর্তীতে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ হয় বড়দিয়া, পাটনা,গাজীরহাট,কালিয়া,হাওইখালী ব্রিজ,নাকসী, রঘুনাথপুর,লোহাগড়া,মাছিমদিয়া,কলাবাড়িয়া,কুমড়ী, কালনারচর সহ অনেক জায়গায়। এ সমস্ত যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ শহীদ হন এবং আহত হন অনেকে,এছাড়া ধ্বংস হয় ঘরবাড়ী,ফসল,স্কুল কলেজ,শিল্প কারখানা এবং ব্যবসা বানিজ্য। পাক হানাদার বাহিনীর দোসরদের সহায়তায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে লঞ্চঘাট পন্টুনের উপর প্রায় ২৮০০ লোককে হত্যা করা হয়,যার দুঃসহ স্মৃতি এখনও বহন করে চলছে নড়াইলের মানুষ। ১৯৭১ সনের ২৩মে ইতনা গ্রামে হানাদার পাকিস্তানী সেনারা অতর্কিত আক্রমন চালিয়ে ৫৮জন নারী পুরুষ শিশুকে হত্যা করে। মধুমতি,নবগঙ্গা এবং চিত্রা নদীতে ঢুকে পাক বাহিনী গানবোটের সহায়তায় নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর উপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে,যার কারণে অনেক লোক নিহত এবং আহত হয়। তাদের বেপরোয়া আক্রমনে মানুষ দিকভ্রান্ত হয়ে ভারতের দিকে ছুটে চলে। নড়াইল হিন্দু ধর্মালম্বী লোকের সংখ্যা বেশী হওয়ায় এখানে পাক বাহিনীর আক্রমনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৭১ সনে রাজাকার আল বদরদের সহায়তায় পাক বাহিনী তুলারামপুর গ্রামের ভিসি স্কুলের শিক্ষক আতিয়ার রহমান তরফদারসহ তার পরিবারের ০৮জন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে আসে এবং নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের পার্শ্বে ব্যাপক নির্যাতন করে ঐখানেই জীবন্তগণকবর দেয়। এ নৃশংসঘটনাটি নড়াইল জেলার মানুষের মনে চিরদিন জাগরত থাকবে। পাক বাহিনী এবং তাদের দোসরদের নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নড়াইলের সাধারণ জনগণ,ছাত্র জনতা দলে দলে ভারতে গমন করে এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নড়াইলকে শত্রু মুক্ত করার জন্য পরবর্তীতে ব্যাপক ভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাদের যুদ্ধাবদানের কারণে নড়াইল জেলা ১৯৭১ সনের ১০ই ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়।বাংলাদেশেরে সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে একজন শহীদল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের জন্ম নড়াইল জেলায়। নড়াইল জেলাটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাধিক্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা হিসেবে পরিচিত। এ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা প্রায় ২০০০। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং নড়াইল জেলার মুক্তিযুদ্ধের সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা কমান্ডার ছিলেন তাদের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে,লেফটেন্যান্ট কমল সিদ্দিকী,সাব-সেক্টর কমান্ডার,মরহুম মোঃ জাহিদুর রহমান,মুজিব বাহিনী প্রধান,নড়াইল,মোঃ মাহামুদুল হক মোক্তার,থানা কমান্ডার (এফ এফ), লোহাগড়া,শরীফ খসরুজ্জামান,কমান্ডার,থানা মুজিব বাহিনী,লোহাগড়া। শরীফ হুমায়ুন কবীর,কমান্ডার, থানা মুজিব বাহিনী,নড়াইল সদর,নড়াইল,এ্যাড.আবুল কালাম আজাদ,গ্রুপ কমান্ডার,কালিয়া,এ্যাড.এস এম ফজলুর রহমান জিন্নাহ,ডেমুলেশন কমান্ডার,নড়াইল, সাইফুর রহমান হিলু,গ্রুপ কমান্ডার, বিএলএফ, নড়াইল,মোল্লা শামসুর রহমান,টুআইসি,আর্টিলারী।
প্রফেসর উজির আহমেদ,থানা কমান্ডার (এফএফ), নড়াইল,আঃহাই বিশ্বাস,জেলা কমান্ডার,(এফ এফ), নড়াইল,মোঃ নজরুল ইসলাম (বিমান বাহিনী), মরহুম ওমর ফারুক,থানা কমান্ডার (এফএফ), কালিয়া, আব্দুল মজিদ,থানা কমান্ডার,মুজিব বাহিনী,কালিয়া, গোলাম কবীর,ডেপুটি কমান্ডার (এফ এফ),লোহাগড়া, মোঃ আমীর হোসেন,গ্রুপ কমানন্ডার (এফএফ),কালিয়া,মোঃ লুৎফর রহমান বিশ্বাস,গ্রুপ কমান্ডার (এফ এফ),লোহাগড়া‌,মুন্সি আব্দুল হালিম, ডেপুটি কমান্ডার,বিএলএফ,নড়াইল, খায়রুজ্জামান,গ্রুপ কমান্ডার,কালিয়া,নজির হোসেন,গ্রুপ কমান্ডার। (এফএফ)। মুক্তিযুদ্ধে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, খন্দকার আঃ হাফিজ,এম,এল,এ,(অবিভক্ত বাংলার) নড়াইল,মরহুম এখলাস উদ্দিন আহম্মেদ,সাবেক এমপি,কালিয়া,মরহুম লেঃ (অবঃ) মোঃ মতিয়ার রহমান,লোহাগড়া,কামাল উদ্দিন সিদ্দীকি,সাবেক মহকুমা প্রশাসক,নড়াইল,প্রফেসর নূর মোহাম্মদ, লোহাগড়া,নড়াইল,বি,এম মতিয়ার রহমান,নড়াইল সদর,নড়াইল, সৈয়দ শামছুল আলম গোরা,নড়াইল সদর,সিকদার মতিয়ার রহমান,নড়াইল সদর,নড়াইল, শহীদ মাস্টার আঃসালাম,নড়াইল। এ্যাড.সরদার আঃসাত্তার,নড়াইল,অধ্যক্ষ শ ম আনোয়ারুজ্জামান, লোহাগড়া,নড়াইল,মরহুম এ্যাড.গাজী আলী করিম,নড়াইল,মরহুম এ্যাড.সাইদুজ্জামান,নড়াইল।
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে,বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ,মহিষখোলা,নড়াইল,বীর উত্তম সুবেদার মজিবর রহমান,মল্লিকপুর,লোহাগড়া,নড়াইল। বীর বিক্রম ক্যাপ্টেন আফজাল হোসেন,ধোপাদাহ,লোহাগড়া, নড়াইল,বীর বিক্রম,মোঃ মতিয়ার রহমান,সদর, নড়াইল,বীর প্রতীক মতিয়ার রহমান,সদর,নড়াইল, বীর প্রতীক গোলাম আজাদ,ইত্না,লোহাগড়া,নড়াইল,বীর প্রতীক খোরশেদ আলিম,কালিয়া,নড়াইল। এসব বীর যোদ্ধাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের নড়াইল স্বাধীন হয়েছে। স্যালুট হে নড়াইলের গর্ব ও বাংলাদেশের সুর্যসন্তানদের।


বিজ্ঞাপন