শিপন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করল পিবিআই সিলেট জেলা

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সিলেটর চাঞ্চল্যকর শিপন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন সহ ঘটনার সহিত আসামীঃ মোঃ মোস্তফা মিয়া (২৫), পিতা-আসাব উল্লা, সাং-লামাহাজারাই থানা-দক্ষিণ সুরমা, জেলা-সিলেট’কে গত ২০/০৫/২০২২ তারিখ চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকা হইতে গ্রেফতার করেছে পিবিআই সিলেট জেলা। বাদীর ছেলে ভিকটিম শিপন মিয়া এবং বিবাদী মোস্তফা প্রায় ১ বছর পূর্ব ঢাকায় রাজ মিস্ত্রীর কাজ করিত। গত ৩ মাস পূর্বে বাদীর ছেলে শিপন মিয়া ঢাকা থেকে ফিরে আসিয়া বিবাদী রায়েদ এর সহিত মন্দিরখলা রাসেল এর কয়েল লাকড়ি তৈরার মিলে এক সাথে কাজ শুরু করে। ভিকটিম শিপন মিয়া ও বিবাদী মোস্তফা এক সাথে ঢাকা থাকার সুবাদে তাদের মধ্যে লেনদেন সংক্রান্ত একটি বিরোধ ছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরিয়া গত ২০/০৮/২০২১ তারিখ সকাল অনুমান ৯ টার সময় বিবাদী মোস্তফা বাদীর ভাড়াটিয়া বাসায় আসিয়া ভিকটিম শিপন মিয়ার নাম ধরে ডাকাডাকি করিলে ভিকটিমের স্ত্রী মুসলিমা ঘর হইতে বাহির হইলে বিবাদী মোস্তফা মুসলিমাকে বলে তোমার জামাইরে কও আইতো, তারে অখন মারতাম নায়” তখন শিপন মিয়া বাড়ীতে নাই বলিয়া মুসলিমা বিবাদী মোস্তফাকে জানাইলে সে চলে যায়। পরবর্তীতে গত ২২/০৮/২০২১ তারিখ রাত অনুমান ১০ টার সময় বিবাদী মোস্তফা ও রায়েদ সহ অজ্ঞাতনামা ০১ জন বিবাদী ভিকটিমকে বাদীর ভাড়াটিয়া বাসা হইতে চৌধুরীগাঁও নতুন বাজারে নিয়া যায় ঐ দিন রাত অনুমান ১১ টা ৫৫ মিনিটের সময় ভিকটিম শিপন মিয়া (মোবাইল নং-০১৭৫৩-৪৬২৮৯৪) বাদীর অপর ছোট ছেলে রিপন আহমদ এর মোবাইলে কল করিয়া একবার হ্যালো বলার পর আর কোন কথা বলতে পারে নাই। এরপর হইতে রিপন আহমদ ভিকটিমের মোবাইলে কল করিলে, রিং হয় কিন্তু তাহার মোবাইল রিসিভ হয় নাই। এরপর হইতে বাদী ও তাহার ছোট ছেলে রিপন আহমদ এবং তাহাদের আত্মীয় স্বজনরা চারদিকে শিপন মিয়াকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তাকে খুঁজে না পাওয়ায় গত ২৫/০৮/২০২১ইং তারিখ থানায় আসিয়া নিখোঁজ ডায়রী নং- ১১২৯, তারিখ-২৫/০৮/২০২১ দায়ের করেন। বাদীর ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পরপরই বিবাদীছয় এলাকা থেকে চলিয়া যায়। ভিকটিম শিপন মিয়াকে খোঁজাখুঁজি অব্যাহত থাকাকালে গত ০৪/০৯/২০২১ তারিখ বিকাল অনুমান ৫ টার সময় মোল্লারগাঁও সাকিনস্থ জনৈক নাজিরুল আলম সুমন দক্ষিণ সুরমা থানাধীন লামাহাজরাই সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক সংলগ্ন ছোয়াব আলীর নতুন বাড়ার দক্ষিণ পাশে ডোবার মধ্যে একটি পচাগলা লাশ দেখিয়া এলাকার লোকজনদের দেখাইলে, তাহারা বাদীকে সংবাদ প্রদান করিলে বাদী তাহার ছোট ছেলে রিপন আহমদ ও আত্মীয় স্বজনরা ঘটনাস্থলে যাইয়া শিপন মিয়া নিখোঁজ হওয়ার দিন পরিহিত শার্ট-প্যান্ট দেখিয়া শিপন মিয়ার লাশ নিশ্চিত হন। পরবর্তীতে থানায় সংবাদ দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসিয়া লাশ ডোবা হইতে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন এবং ময়না তদন্তের জন্য লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেন। ভিকটিম শিপন মিয়াকে বিবাদী মোস্তফা ও রায়েদ সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জন বিবাদী পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে গত ২২/০৮/২০২১তারিখ রাত অনুমান ১১ টা ৫৫ মিনিট হইতে ২৩/০৮/২০২১ তারিখের মধ্যে যে, কোন সময় অজ্ঞাত স্থানে হত্যা করিয়া উক্ত ডোবায় আনিয়া লাশ গুম করে বাদীর উক্তরূপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ সুরমা থানার মামলা নং ৮/২৪২, তারিখ- ০৬/০৯/২০২১ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০ রুজু হয়। মামলাটি থানা পুলিশ প্রায় ০৮ মাস তদন্ত করে। এজাহার নামীয় আসামী রায়েদ মিয়াকে গ্রেফতার করে। থানা পুলিশ মামলাটির মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার নির্দেশে তদন্তভার সিলেট জেলায় ন্যস্ত হলে মামলার তদন্তভার এসআই (নিঃ)-মোঃ তারিকুল ইসলাম (শহীদ) এর উপর অর্পণ করা হয়।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম অতিঃ আইজি, বাংলাদেশ পুলিশ এর সঠিক তত্ত্বাবধানে ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই সিলেট জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান এর নেতৃত্বে এসআই (নিঃ) মোঃ তারিকুল ইসলাম (শহীদ), এসআই (নিঃ)শাহ মোঃ ফজলে আজিম পাটোয়ারী, কং-১৮৩৮ মিনহাজুল, কং-১৪২৮ রিপন তালুকদারসহ পিবিআই সিলেট জেলার চৌকশ দল গত ২০ মে, তারিখ চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকা হইতে এজাহার নামীয় আসামী মোঃ মোস্তফা মিয়া (২৫), পিতা-আসাব উল্লা, সাং-লামাহাজারাই থানা-দক্ষিণ সুরমা, জেলা-সিলেট-কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম শিপন মিয়া ও এজাহার নামীয় গ্রেফতারকৃত আসামী মোস্তফা মিয়া একসাথে চলাফেরা করত এবং নেশা করত। শিপন ঢাকায় মোস্তাফার সাথে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করে। শিপন নেশা করে সব টাকা শেষ করে ফেলত। তার স্ত্রী ও একটি সন্তান রয়েছে। শিপন ঘর ভাড়া ও দোকান বাকি বাবদ ২৫,০০০ টাকা পরিশোধ না করে বউ সন্তানকে মোস্তফার উপরে ফেলে বেশ কয়েক মাস পূর্বে সিলেট চলে আসে। মোস্তফা অনেক চেষ্টা করে শিপনে বউ সন্তানকে নোয়াখালীতে পাঠিয়ে দেয়। এই কারণে শিপনের উপরে মোস্তফার রাগ হয়। মোস্তফা তার অটো বিক্রি করে ঘরভাড়া ও মুদি দোকানের ধার পরিশোধ করে। মোস্তফা গত ২১/০৮/২০১১ তারিখে সিলেটে লামা হাজারাই আসলে তার বন্ধুদের সাথে দেখা হয়। মোস্তফা শিপনের ঘটনার বিষয়ে রায়েদের নিকট বলে। রায়েদের সাথে শিপনের আগে থেকে বিরোধ ছিল। শিপন এলাকার ছেলেদের কাছে রায়েদের বউয়ের চরিত্র কথা বলতো। রায়েদের বউ রোকেয়ার সাথে মোস্তফার প্রেম ছিল। রোকেয়া বিদেশ চলে যাওয়ায় মোস্তকা অন্যত্র বিয়ে করে। এই নিয়ে শিপন এলাকায় কথা বলায় রায়েদ শিপনের উপরে খুব বেশি রাগ ছিল। শিপন শামীমের বাড়িতে গিয়ে নেশা করে এবং নেশার টাকার জন্য গালাগালি করত। আসামী মোস্তফা, শামীম, রায়েদ তিন জন মিলে পরিকল্পনা করে। ভিকটিমসহ ০৪জন মিলে গাঁজা সেবন করে এবং জাক্কির শরবতের জিনিসপত্র নিয়ে আসে। রাত ১০টার দিকে শিপনের ছোট ভাই রিপন এসে রাদেয় ও শিপনকে ওদের বাসায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যায়। মোস্তফা ও শামীম মোস্তফার বাসায় খাওয়া দাওয়া করে রাস্তার মুখে যায়। কিছুক্ষণ পর রায়েল ও শিপন আসে।


বিজ্ঞাপন