তিন ফসলি জমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান কৃষকরা

Uncategorized অন্যান্য

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান জেলায় আইন ও প্রশাসনের কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়তই তিন ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছে প্রভাবশালী একটি মহল। এর ফলে ওই এলাকার কৃষি জমিসমূহ ভাঙন ও জমিতে ফসল উৎপাদন করতে না পেরে অনেকটাই নির্বিকার হয়ে পরেছে স্থানীয় কৃষকরা। অন্যদিকে, লতব্দী ইউনিয়নের উত্তর পাশে ধলেশ্বরী নদীর পাড় ঘেষে ১২ থেকে ১৫টি অবৈধ ইটের ভাটা এসব প্রভাবশালী ও তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ ইটের ভাটা স্থানীয় গাছপালা, কাঠ-লাকড়ি অথবা পরিবেশ দুষণকারী পুরনো টায়ার পুড়িয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে ইট ভাটার ধোয়ায় পরিবেশ এমনভাবে নষ্ট হয়েছে যে ফসলি জমিতে কোনো ফসলই হচ্ছে না। পাশাপাশি মানুষের বিভিন্ন রোগ, শ্বাস কষ্ট, হাঁচি কাশিসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এই অবস্থায় এসব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ও কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না কেউ। অসহায় হয়ে সবাই এখন প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কেননা প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন কোন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে ফসলি জমির বিকল্প নেই।

রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে অবৈধধভাবে ফসলি জমির মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন এবং পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় প্রতিরোধে এক মানববন্ধনে এ হস্তক্ষেপ চান কৃষকরা। মানববন্ধনের পাশাপাশি এ বিষয়ে দিনব্যাপী ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী “কৃষক বাঁচাও”ও প্রদশিত করা হয়। দুপুর ১১টা থেকে এই প্রদর্শনী চলে বিকেল ৬টা পযন্ত।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ভুক্তভোগী এলাকা সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ মোঃ ফজলুল হক। এছাড়াও ভুক্তভোগী সাধারণ কৃষক, জনগণ ও মুন্সিগঞ্জের ১৪টি সংগঠনের কর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ। ফ্রান্সের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান সরকার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এর কিউরেটর ও সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান) প্রধান আলোচক হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন।
অতিথিদেরকে সথে নিয়ে প্রদর্শনীর ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন আলোকচিত্র শিল্পী মা ফজিলা বেগম। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিন ফসলি জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রশাসন নামকাওয়াস্তে অভিযান পরিচালনা করলেও পুরোপুরি আন্তরিকতা দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে- যারা এই অবৈধ ব্যবসা করছেন তারা প্রতিদিন টাকা দেন। অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নেন। কোনো অভিযানের বিষয়টি আসলে এসব কর্মকর্তারা আগেই ভূমিখেকোদের জানিয়ে দেন। ফলে আগে থেকেই তারা সাবধান হয়ে যান। বক্তারা বলেন, মুন্সিগঞ্জের বাসাইল, লতব্দী ও বালুরচরে এ যাবৎ প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে সমুদ্রের মতো করা হয়েছে। বর্তমানে আরো প্রায় ১০০-১৫০ বিঘা জমির মাটি কাটার মহাপরিকল্পনা চলছে। লতব্দী ইউনিয়নের উত্তর পাশে ধলেশ্বরী নদীর পাড় ঘেষে ১২ থেকে ১৫টি অবৈধ ইটের ভাটা প্রভাবশালী ও তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। যা গ্রামের মাত্র ২শ গজের মধ্যে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা জমির মাটি ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে ভাটায় সরবরাহ করছে। ফলে বিক্রমপুরের আলু বলে খ্যাত জেলার যে লক্ষমাত্রা তা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। সরিষা, ডাল, ধানসহ কোনো শস্যই চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফসিল জমি থেকে উত্তোলকৃত মাটি ইট ভাটায় নেওয়ার জন্য মাহেন্দ্রা গাড়ি (বড় চাকার এক ধরনের গাড়ি যা সাধারণ অমসৃন রাস্তা ব্যবহার করা হয়) ব্যবহার করা হচ্ছে। এই গাড়ির চাকার আঘাতে স্থানীয় সরকারের অর্থে ও ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে যে গ্রামীণ সড়ক রয়েছে তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যে সড়কের মেয়াদ ১০ বছর ধরা হয়েছিল, তা ১ বছরেরই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তায় মাঝখানে ও পাশে বড় বড় ধরনের গর্ত তৈরি হয়েছে। পুরো রাত জুড়ে রাস্তা দিয়ে ভ্যেকু ও গাড়ি চলে। ফলে রাতের ঘুমানোর সুযোগ নেই।
চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পরিবেশক অধিদপ্তরে অভিযোগ করাসহ স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করা হয়েছে। উপরোক্ত সকলকে স্মারক লিপির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
কোন প্রতিকারই মিলেনি বরং প্রতিবাদকারিদের প্রকাশ্যে মারধর করে এবং প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। স্থানীয় প্রশাসন কোন এক কারনে নীরব ভূমিকা পালন করে। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং হস্তক্ষেপ কামনা করছি যাতে এই সমস্যা সমাধান হয়।


বিজ্ঞাপন