অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঃ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু না করতে পারলে আজকে পাকিস্তানের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হতো। সেই কারণগুলোই আজ আলোচনা করবো। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রথমে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইইডিবি’র অর্থায়ন করার কথা ছিলো। যেকোনো কারণেই বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পটিতে অর্থায়ন থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছিলো অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও। এবং তাঁরা বেরিয়ে ও গেলো। যার দেখাদেখি এডিবি, জাইকা, আইডিবি সবাই ঋণ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসলো কারণ এঁরা সবাই পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট সংগঠন।
একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ঘটনাটি আজকের। পাকিস্তানে সয়াবিন এবং ঘি সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে! নতুন নির্ধারণ করা মূল্যে সয়াবিন তেল এবং ঘি বিক্রি হবে যথাক্রমে ৬৫০ টাকা ও ৫৫০ টাকা (লিটার)। মুলত এই সংকটের অন্যতম কারণ আইএমএফ। দেশটিতে রিজার্ভের পরিমাণ তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিদ্যমান রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ ১/১.৫ মাস চলতে পারবে। যার ফলে ইমরান খান সরকার আইএমএফ এর কাছে ৬ বিলিয়ন লোন চাইলে আইএমএফ পাকিস্তানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ওপর সকল ভুর্তকি প্রত্যাহারের শর্তে এই লোন দিতে রাজি হয়। কিন্তু ইমরান সরকার তা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন, কেননা এর ফলে দ্রব্য মূল্য আকাশচুম্বী হবে! কিন্তু ইমরান সরকার উৎখাত হলে নতুন শাহবাজ সরকার এই লোন নিতে উক্ত শর্তে রাজি হয়েছে। যার ফলে ঘি, সয়াবিনসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের এই অবস্থা!
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কি এর চেয়ে ভালো কিছু হতো? কখনোই না। এবার আসি সেই সময় পদ্মা সেতুর এই সিদ্ধান্ত না নিলে কি হতে পারতো তা আলোচনা করি।
যেহেতু বিশ্ব ব্যাংকসহ বাকিরা বেরিয়ে গিয়েছিলো, ফলশ্রুতিতে এই প্রকল্পের ভবিষ্যত গভীর সংকটে পরতো, এমনকি বাতিল ও হয়ে যেতে পারতো।
প্রকল্পটি পরবর্তীতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নেই হতো তথাপি সেখানে থাকতো কঠিন কঠিন সব শর্ত যা কখনো কখনো সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত বলে ধারণা করা হয়। যেমন পাকিস্তানের উদাহরনই টানি। তখন যদি বিশ্ব ব্যাংক বলতো অর্থায়ন পেতে হলে জ্বালানি খাতে ভুর্তকি কমাও! চীনকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে দেয়া যাবে না! এই প্রকল্প বাদ দাও, ওটা বাদ দাও ইত্যাদি। আজকে বিশ্বব্যাংক, জাইকা সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিচ্ছে ওই সিদ্ধান্তের কারণেই। ২/৩ বছর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেছিলেন যে এখন বিশ্ব ব্যাংক লোন দেয়ার জন্য বসে থাকে কিন্তু আমরা নেই না। আমরা অনেক হাসি-ঠাট্টা করেছিলাম ওই কথায় কিন্তু কথাটার ছিলো অনেক গভীরতা! এই সেতু বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ইমেজ পাল্টে দিয়েছে। এখানে চীনের প্রশংসা করতেই হয়। ওই সময়ে যখন পশ্চিমা দেশসহ জাপান, ভারত বাংলাদেশের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো চীন একমাত্র দেশ যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছিলো।
তাঁরা শুধু নির্মাণ সহযোগীই হয় নি, রেল প্রকল্পে ও বিনিয়োগ করেছে। একটা সময় ছিলো যখন বাংলাদেশকে ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতেও দাতা গোষ্ঠীদের সাথে শলা পরামর্শ করে নেয়া হতো যে আপনি এতো টাকা অনুদান দিবেন, এই খাতে আপনি ঋণ দিবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এই নিশ্চয়তা পেলেই এই পরিমাণ বাজেট ঘোষণা করতে পারতো বাংলাদেশ।
এখন দুই লক্ষ কোটি টাকার ওপর বাজেট দিতেও দাতা গোষ্ঠীর কাছে আগে থেকে ধরনা দিতে হয় না। এখন দাতা গোষ্ঠীর নাম পরিবর্তন হয়েছে। এখন তাঁদেরকে উন্নয়ন সহযোগী বলা হয়।