হারিয়ে যাওয়া সেই সাদা কালো টেলিভিশন, কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে গেছে।
বিশেষ প্রতিবেদন ঃ ৭০ দশকে টেলিভিশন কেবলমাত্র অভিজাত ঘরেই দেখা যেত। ৮০ এর দশকে ১৪ ইঞ্চি থেকে ২০ ইঞ্চি সাদাকালো টেলিভিশন মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে চলে আসে। সে সময় জনপ্রিয় দুইটি ব্র্যান্ড ছিল ন্যাশনাল আর নিপ্পন। ফিলিপস টিভিও বেশ জনপ্রিয় ছিল। আর চ্যানেল বলতে ছিল শুধুমাত্র বিটিভি, বিকেল ৫ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো।
পরবর্তীতে বাঁশের মাথায় এন্টেনা এবং হাঁড়িপাতিল লাগিয়ে ভারতের দূরদর্শনের অনুষ্ঠান দেখার উপায় বের করে ফেলে মানুষ। সে সময় বিটিভি উচ্চ মানসম্মত নাটক, সঙ্গীতানুষ্ঠান, ম্যাগাজিন, বিদেশি কার্টুন, সিরিজ ও মুভি প্রচার করত। পরবর্তীতে ৯০-এর দশকে রঙ্গিন টেলিভিশন আর ডিশ চ্যানেলের প্রচলন শুরু হয়।
কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে সাদা কালো টেলিভিশন। দুনিয়া থেকেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক সময় টেলিফোন মানে ছিলো বড়লোকি ব্যাপার স্যাপার। সেই আমলে এক মিনিট কথা বলা মানে ১১.৫০ টাকা। ডায়াল টেলিফোনে তালা লাগিয়ে রাখাটাই ছিল রীতি। সেই তালা লাগানো ডায়াল টেলিফোনও বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যেতে বসেছে কোডাক, নাইকন, সনি ইত্যাদি নানা ব্রান্ডের ক্যামেরা। অনেক দিন আগেই বিলুপ্ত হয়েছে কলের গান, গোলাকার গ্রামোফোন রেকর্ড। হারিয়ে গেছে গানের ফিতা বা ক্যাসেট। হারাতে বসেছে নামী দামী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘড়ি। হারাচ্ছে জমজমাট আড্ডা। একটি ডিভাইস একে একে গ্রাস করছে সব। সেই যন্ত্র দিয়েই লিখলাম সেই সর্বনাশা ইতিহাস। যারা পড়ছেন সেই ইতিহাস, তারাও সেই যন্ত্রের দাসত্ব শিকার করতে বাধ্য হয়েছেন।
মার্টিন কুপার (Martin Kupar) নামে একজন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার ৩ এপ্রিল ১৯৭৩ সালে প্রথম মোবাইল ফোন তৈরি করেন এবং সেটি যে কোম্পানির মোবাইল ছিল সেই কোম্পানির নাম হলো মটোরোলা।প্রথম মোবাইলটির মোট ওজন ছিল দুই কেজি।এবং এই মোবাইলটির সাহায্যে ৩০ মিনিট কথা বলার জন্য ১০ ঘন্টা চার্জ দিতে হতো। মোবাইল ফোনের আবিষ্কারক মার্টিন কুলার ৩ এপ্রিল, ১৯৭৩ সালে তার একজন ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু জোয়েল ইঙ্গলকে ফোন করে কথা বলেন।এই মোবাইলটি আবিষ্কার হওয়ার ১০ বছর পর ১৯৮৩ সালে, মটোরোলা মোবাইল কোম্পানি সাধারণ মানুষের জন্য মোবাইল তৈরি করা শুরু করে। Motorola DynaTAC 8000X মডেলটি প্রথম সর্বসাধারণের জন্য বাজারজাত করা হয়। ওই সময়ে একটি মোবাইলের মূল্য ছিল ২,৯৫,৬৬৯ টাকা। মোবাইলটি একবার চার্জ করলে ৩০ মিনিট কথা বলা যেত এবং ৩০ জনের কন্টাক্ট নাম্বার স্টোর করার জায়গা ছিল।
আমেরিকার IBM এবং Bolself মোবাইল কোম্পানি মিলিত হয়ে প্রথম টাচ স্ক্রিন মোবাইল ফোনের আবিষ্কার করেন। যদিও আজকের দিনে আপনারা এই কোম্পানির নাম শুনবেন না, তবে যদি সেই দিন এই কোম্পানি গুলি মিলে টাচস্ক্রিন মোবাইলের আবিষ্কার না করতো, তাহলে বুঝতেই পারছেন আজ আমরা কতটা পিছিয়ে থাকতাম। এই দুই কোম্পানি মিলিত হয়ে ১৯৯২ সালে প্রথম যে টাচস্ক্রিন মোবাইলটি তৈরি করে তার নাম দেওয়া হয়েছিল IBM Simon। ১৯৯৪ সালে মোবাইলটি বাজারে আসে।মোবাইলটির নামকরণ Simon রাখার কারণ হলো এটি খুবই সাধারণ একটি টাচ স্ক্রিন মোবাইল ছিল। Simon মানে হল সাধারণ। এই মোবাইল এর মাধ্যমে লেখা, ছবি আঁকা, ফ্যাক্স করা, ক্যালেন্ডার দেখা এইসব সাধারণ জিনিসগুলো করা যেত।
এখন এই মোবাইল ফোন সারা পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনেছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি অলস। এই অলসতার কারণ হলো নিষ্ক্রিয়তা বা অকর্মণ্যতা। এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। ২০০৪ সাল থেকে ২০২২- এই দেড় যুগে মানুষ কী পরিমান অলস হয়েছে ইউরোপে, তা গবেষণা করতে গিয়ে দেখতে পেয়েছে, ইউরোপে মানুষ আগের চেয়ে ২০ পার্সেন্ট বেশি অলস হয়ে গেছে। কিন্তু কেন অলস হয়ে উঠেছে? এই অলসতার কারণ নিষ্ক্রিয়তা। কিন্তু কি কারণে নিষ্ক্রিয়?কারণ, মোবাইল ফোন! মানুষ এখন টিভির চেয়ে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকে বেশি অথবা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে অনেক বেশি। এক গবেষণায় দেখা গেছে – মানুষ এখন দৈনিক চার ঘন্টা মোবাইল ফোনে কাটায়। গড়ে একজন মানুষ দিনে ৫৮ বার মোবাইল ফোনটি হাতে নেয়।প্রতিদিন তিন ঘন্টার উপর ধরলেও বছরে একটি মানুষ ৫০ দিন মোবাইল ফোনে কাটায়। সে হিসেবে বছরে বারমাসের প্রায় দুই মাস কেটে যায় মোবাইল ফোন দেখে দেখে। জীবনের আর কী বাকি থাকে। আধুনিক মানুষের অদ্ভুত সব ব্যাপার স্যাপার! ( লেখক ঃ একেএম মাহবুবুর রহমান)