ডেস্ক রিপোর্ট : তীরে এসেও পাড়ে নামার সুযোগ মেলেনি। করোনা আতঙ্কে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরের কাছে আটকে রয়েছে ক্রুজ শিপ ডায়মন্ড প্রিন্সেস। বুধবার পর্যন্ত জাহাজে থাকা ১৭৪ জনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে নামার সুযোগ পায়নি কোনও যাত্রীই। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির আগে তাদের সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই তাদের।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে টোকিও’র বন্দরে দাঁড়িয়ে রয়েছে জাহাজটি। প্রতিদিনই ভিডিও বার্তায় আটকে পড়ারা দেশে ফেরার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।প্রতিদিন সকালে কেবিনের দরজার সামনে ব্রেকফাস্ট রেখে যাচ্ছেন জাহাজকর্মীরা। রবিবার জাহাজের ডেকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় যাত্রীদের। তবে মুখে মাস্ক পড়ে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য।
যাত্রীদের কাছে এটা খাঁচাবন্দি পরিস্থিতি। তবে জাহাজ কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা রুখতে এর বিকল্প নেই তাদের কাছে। জাহাজে থাকা ভারতীয় কর্মী বিনয়কুমার সরকার বলেন, সব রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে। প্রতি যাত্রীকে থার্মোমিটার, মাস্ক-সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সব নিয়ে অভিযোগ নেই। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা তো বেড়েই চলেছে। তাতে আতঙ্ক বাড়ছে।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত পূর্ণ বয়স্কদের পাশাপাশি একজন কিশোরের দেহেও এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। আক্রান্ত চারজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের তিনজনই জাপানি নাগরিক। বুধবার আক্রান্ত ৩৯ জনকেই ৯টি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। তাদের মধ্যে ২৯ জন যাত্রী, ১০ জন ক্রু এবং একজন কোয়ারান্টাইন কর্মকর্তা।
ওই জাহাজ ছাড়া জাপানে এখন পর্যন্ত ২৯ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, সরকার এই ভাইরাস পরীক্ষা করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারা প্রতিদিন ১ হাজার জনের পরীক্ষা করতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এখন প্রতিদিন ৩০০ মানুষ পরীক্ষা করতে পারে জাপান।
জাহাজে আটকে পড়াদের জন্য ইন্টারনেট ও টিভির মাধ্যমে বিনোদনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনিই ভাইরাসের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে জাপানে মাস্ক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। সামনের সপ্তাহ থেকে সপ্তাহে ১০ কোটি মাস্ক তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। একপর্যায়ে এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮টি দেশে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৩শ ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে আরও ৪৪ হাজার ৬৫৩ জন। তবে উহান থেকে জাপানে ফিরে আসা ১৯৭ নাগরিকের কারও মধ্যে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে সরকার। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর তাদের বিশেষ বিমানে করে নিয়ে আসা হয়।