হাইকোর্টের কিছু রায় নিম্নমানের: আপিল বিভাগ

আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : হাইকোর্টের কিছু কিছু রায় অত্যন্ত নিন্মমানের বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বিভাগ। সোমবার সকালে নদী নিয়ে করা হাইকোর্টের রায়ের সমালোচনায় এমন মন্তব্য করেন আপিল বিভাগ।


বিজ্ঞাপন

আদালত বলেন, ঐ রায়ে নদীরক্ষায় সরকারকে ১৭টি নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। সরকার থাকতেও হাইকোর্টকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ।


বিজ্ঞাপন

এসময় আপিল বিভাগ প্রশ্ন তুলেন, সরকারের কাজ যদি আমরা করি তাহলে সরকার কি করবে।

আপিল বিভাগ আরও বলেন, আদালত সরকারকে আইন করতে নির্দেশ দিতে পারে না, পরামর্শ দিতে পারেন। এছাড়া নদীর দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত (নদী রক্ষায়) হাইকোর্টের ওই রায়ে অনেক নির্দেশনা আছে, যা মানা সম্ভব নয়। যে রায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় হাইকোর্ট এমন রায় দিতে পারেন না। রায়টি পর্যালোচনা করে আদেশ দেয়ার কথা জানায় আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগে আসলে এই রায় পাল্টে দেবেন বলেও জানান প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৪ সদস্যের বেঞ্চ।

এর আগে নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা দিয়ে নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায়টি দিয়েছিলেন। গত বছর ১লা জুলাই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।

ওই রায়ে আদালত জানান, মানুষের জীবন-জীবিকা নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। নাব্য সঙ্কট ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সংকটে পড়তে বাধ্য। নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়ন করে নদীকে বেদখলের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। নদী রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে জাগরণ শুরু হয়েছে। এখন সবারই ভাবনা-পরিবেশের জন্য নদী রক্ষা করতে হবে।

একইসঙ্গে আদালত তার রায়ে তুরাগ নদকে ‘লিগ্যাল পারসন’ ঘোষণা করে বলেন, অবৈধ দখলদাররা প্রতিনিয়তই কমবেশি নদী দখল করছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সংকুচিত হয়ে পড়ছে নদী। এসব বিষয় বিবেচনা করে তুরাগ নদকে লিগ্যাল/জুরিসটিক পারসন (আইনগত ব্যক্তি) হিসেবে ঘোষণা করা হলো।

নদী রক্ষায় বিভিন্ন দেশের আদালতের দেয়া রায়ের উদাহরণ দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, আমাদের দেশের সব নদীকে রক্ষা করার সময় এসেছে। যদি তা না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রায়ে আরও বলা হয়, ঢাকার চারপাশে বহমান ৪ নদী রক্ষায় এর আগে আদালত থেকে কোনও নির্দেশনা দেয়া না হলে এত দিনে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর হয়তো বহুতল ভবন দেখা যেত। অথবা তুরাগ নদে অবৈধ দখলদারদের হাউজিং এস্টেট থাকত। তবে এত রায় ও নির্দেশনার পরও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে বিবাদীরা কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। আদালতের নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালন হলে তুরাগ নদ রক্ষায় হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করতে হতো না।

আদালত বলেন, শুধু যে তুরাগ নদই আক্রান্ত তা নয়; গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনাসহ দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদ-নদীও অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত। এখন এসব নদী রক্ষায় আমরা (আদালত) কি হাজারখানেক মামলা করার ব্যাপারে উৎসাহ/অনুমতি দেব? নাকি অবৈধ দখলের হাত থেকে সব নদী রক্ষায় এই মামলা ধরে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেব? যে নির্দেশনার আলোকে নদী দখলমুক্ত করার মামলা আর আদালতের সামনে আসবে না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *