বাদশা আলমগীর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী কামাত আঙ্গারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে সীমাহীন নিয়োগ জালিয়াতি ও দূর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগের দাবীতে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকালে কামাত আঙ্গারিয়া মাদ্রাসায় এই বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সুপার সাইদুর রহমান দীর্ঘদিন থেকে নিয়োগ বানিজ্য ও সীমাহীন দূর্নীতি করে আসছিল। দীর্ঘ ২২ বছর যাবত অফিস সহকারি পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় ওই পদে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে অন্য একজনকে অফিস সহকারি পদে নিয়োগ দেন সুপার। গত ২২ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী অফিস সহকারি সফিয়ার রহমান।
শুধু তাই নয় দীর্ঘ ২২ বছর অফিস সহকারি পদে চাকরি করার পর জালিয়াতি করে গত আগস্ট/২৪ মাসে অফিস সহকারি সফিয়ার রহমানকে এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক দেখিয়ে নতুন করে এমপিও ভূক্ত করেন সুপার। অথচ অফিস সহকারী পদে ২০০২ সালে (ইনডেক্স ২৬৯২৩৩২) নিয়োগ পান মোঃ সফিয়ার রহমান এবং ২০১৪ সালের জুলাই মাসে উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হন।
এদিকে অফিস সহকারি পদ শূন্য দিখিয়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উক্ত পদে (এসিও) মোঃ খালেদুজ্জামান নামের একজনকে নিয়োগ দেন। যার ইনডেক্স (গ০০৫৪১৮০), এমপিও ভুক্তির তারিখ মার্চ, ২০২৪ইং। এ ঘটনা প্রকাশ হলে এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টি তদন্তের দাবি করে সফিয়ার রহমান বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস উভয় পক্ষকে ডেকে সুপারকে বিষয়টি সংশোধনের নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সুপার সাইদুর রহমান ও অফিস সহকারী শফিয়ার রহমানের মধ্যে দ্বন্ধ চলে আসছিল। এই দ্বন্ধ চলমান অবস্হায় মাহমুদুল হাসান নামের মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীর নিকট থেকে কৌশলে সুপার সাইদুর রহমান তিনি মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং অফিস সহকারি শফিয়ার কোন কাজ করেন না এইরকম বক্তব্য লিখে সভাপতি বরাবর একটি অভিযোগ নামা লিখে নেন।
এই ঘটনা ওই শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের জানালে তারা সুপারের দুরবিসন্ধি বুঝতে পেরে গত রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর ) মাদ্রাসায় গিয়ে ওই দরখাস্তের মুল কপি ফেরত চায়। এসময় দরখাস্তের মুল কপি ফেরত না দিয়ে সুপার কৌশলে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যান। পরে সুপারের কক্ষসহ মাদ্রাসার সকল কক্ষে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
এই ঘটনা জানাজানি হলে মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর ) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মাদ্রাসা সুপার সাইদুরের পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন।এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমান মুঠোফোনে সংবাদ সারাবেলা’কে জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অসত্য।
অন্যদিকে, মুঠোফোনে কথা চলাকালীন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে শফিয়ারের নিয়োগ ২০০৫ সালে। তাহলে গত ২০ বছর অফিস সহকারি পদে বেতন ভাতা উত্তোলন করলো কি ভাবে এবং আগস্ট /২৪ একই ব্যক্তি কিভাবে অফিস সহকারি থেকে জুনিয়র শিক্ষকে এমপিও ভূক্ত হন? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অত্র মাদ্রাসার সভাপতি গোলাম ফেরদৌস জানান, মাধ্যমিক বিভাগ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।