ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ও চর মৈনট ঘাট দিয়ে গত দু’দিন ধরে নুরুল্ল্যাপুর গ্রামের শাহলাল ফকির ওরফে সানাল ফকির বাড়ীর বাৎসরিক মেলার হাজার হাজার যাত্রী দিনরাত পারাপার হচ্ছেন। পদ্মা নদীর উক্ত নৌরুটের লঞ্চ ও ষ্পীডবোট দিয়ে মেলার যাত্রীরা পারাপার হচ্চেন। এ ঘাটে ষ্পীডবোট ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা বহাল থাকলেও লঞ্চ ভাড়া ৭০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা খাতুন ঘাট দু’টি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং লঞ্চ ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা আদায়ের জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। জানা যায়, উপজেলা পদ্মা নদীর অপর পারে দোহার উপজেলার নুরুল্ল্যাপুর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী সানাল ফকির বাড়ীতে বছর ঘুরে বাংলা মাঘ মাসের পূর্ণিমা রাত হতে সপ্তাহ ব্যাপী চলতে থাকে বাৎসরিক মেলা।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
এ মেলায় দক্ষিন বঙ্গের লাখ লাখ ভক্তকুল ও দর্শনার্থীরা চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাট ও অপর পারের দোহার উপজেলার চর মৈনট ঘাটের লঞ্চ ও ষ্পীডবোট দিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন। ভুক্তভোগী মেলার যাত্রীদের অভিযোগ, গত দু’দিন ধরে লঞ্চ ঘাটে জনপ্রতি ৭০ টাকার স্থলে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি লঞ্চে সর্বোচ্চ তিনশো যাত্রী ধারনের ক্ষমতা থাকলেও প্রতিটি আনফিট লঞ্চে যাত্রী বোঝাই করা হচ্ছে অন্ততঃ সাতশো যাত্রী।
এ নৌরুটের অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার পাশাপাশি লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ছাদ জুড়ে সারি সারি মোটর সাইকেল দাড় করিয়ে এবং যাত্রীদের সাথের ব্যাগ ব্যাগেজ দিয়ে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করানো হচ্ছে পদ্মা নদী। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে গিয়ে যাত্রীদের গালমন্দ সহ তারা ঘাট নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বুধবার দুপুরে সরেজমিন ঘাট দু’টি ঘুরে জানা যায়, প্রতিটি ঘাট পয়েন্টে ষ্পীডবোট ও লঞ্চ ষ্টেশন পাশাপাশি রয়েছে ।
ঘাটে ষ্পীডবোট যাত্রীদের ভাড়া আদায় করে চলেছেন সরকারি লোকজন। উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ষ্পীডবোট ঘাটটি চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চর মৈনট ঘাটটি দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের কর্মচারী দিয়ে নিয়ন্ত্রন করে আসছেন বলে জানা যায়। উক্ত নৌরুটে প্রতিদিনের মতো ষ্পীডবোট ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রী প্রতি ১৫০ টাকা।
কিন্ত বুধবার পদ্মা নদীর মৈনট ঘাট থেকে লঞ্চ ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা বাড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা করে এবং মঙ্গলবার গোপালপুর পদ্মার ঘাটের লঞ্চ যাত্রীদের কাছ থেকে ৭০ টাকার স্থলে অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে লঞ্চ ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এছাড়া প্রতি মোটরসাইকেল ২০০ টাকা, যাত্রীর ব্যাগ ব্যাগেজের অতিরিক্ত ভাড়া ৫০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিন্ত একই লঞ্চে ঈদযাত্রী ও মোটরসাইকেল, ব্যাগ ব্যাগেজ বোঝাই করার ফলে অনেক বেশী ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা।
এ ব্যপারে উক্ত লঞ্চ ঘাটের উপস্থিত তদারকি কাজে নিয়োজিত ও টিকেট মাষ্টার জনৈক রবিউল ইসলাম অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা স্বিকার করে বলেন, “ যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারনে ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে”।
এ সময় এক মেলার যাত্রী শামসুদ্দিন পোদ্দার (৪২) জানায়, “ লঞ্চে উঠার আগেই অতিরিক্ত যাত্রী ভাড়া, ব্যাগ ব্যাগেজ ও মটর সাইকেলের ভাড়া আদায় করার পর যাত্রীদের উঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে কোনো কোনো যাত্রী প্রতিবাদ করলে হট্টগোল লেগেই আছে”। আরেক যাত্রী শফি উদ্দিন মন্ডল (৬৫) বলেন.“ লঞ্চে এতো পরিমান অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো হয়েছে যে যাত্রীদের পা ফেলানো জায়গাও ছিল না।
এছাড়া লঞ্চে জীবনরক্ষাকারী পর্যাপ্ত বয়া ছিল না, অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার নেই এবং চালকরাও অনভিজ্ঞ বলে তিনি জানান”। এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা খাতুন বলেন, “ বুধবার আমি সরেজমিনে গোপালপুর ঘাটটি পরিদর্শন করেছি এবং মানুষের জানমাল নিরাপত্তা রক্ষার ব্্যাবস্থা গ্রহন সহ ন্যায্য ভাড়া আদায়ের জন্য লঞ্চ ঘাট কর্তৃপক্ষকে বলে এসেছি”।