নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রিফাত আহমেদ বর্তমানে National High Court of Brazil [Superior Tribunal de Justiça (STJ)] এর প্রধান বিচারপতি Antonio Herman Benjamin এর আমন্ত্রণে (“Exchanges on Matters of Mutual Judicial Interest, Particularly Concerning Institutional Reform, Environmental Justice, Judicial Independence, and Technological Innovation in the Administration of Justice”) পারস্পরিক বিচারিক স্বার্থের বিষয়গুলিতে মতবিনিময়, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, পরিবেশগত ন্যায়বিচার, বিচারিক স্বাধীনতা এবং বিচার প্রশাসনে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সম্পর্কিতu শীর্ষক একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য ব্রাজিল অবস্থান করছেন।

উক্ত সফরের অংশ হিসেবে প্রধান বিচারপতি গত ১৫ সেপ্টেম্বর, সারাদিন ব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি ব্রাজিলের রাজধানী Brasília –তে অবস্থিত National High Court of Brazil [Superior Tribunal de Justiça (STJ)] পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, ব্রাজিলের সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে National High Court of Brazil [Superior Tribunal de Justiça (STJ)] দেশের সর্বোচ্চ আপীল আদালত হিসেবে ব্রাজিলের ফেডারেল আইনসমূহ প্রয়োগ করে থাকে।

উক্ত আদালত পরিদর্শনকালে প্রধান বিচারপতি National High Court of Brazil এর প্রধান বিচারপতি Antonio Herman Benjamin এর সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।

বৈঠকে উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে, উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিচার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রযুক্তি বিনিময়, বিচার ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ও স্ব স্ব দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা জোরদারকরণের বিষয়ে সভায় ফলপ্রসু আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় বিচারপতিগণ একমত পোষণ করেন যে, একবিংশ শতাব্দিতে বিশ্বজুড়ে যখন বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং মানুষের চলাচল দেশের সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিরাজমান, তখন বৈচিত্রপূর্ণ নানা আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিচার বিভাগীয় আন্তঃসম্পর্ক অতীতের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।
এই প্রেক্ষাপটে, ব্রাজিল ও বাংলাদেশের মধ্যে কার্যকর বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করবে যে ন্যায়বিচার কেবল একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি সার্বজনীন অধিকার।
এছাড়া, উক্ত আলোচনায় উভয় দেশের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিনিময়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
আলোচনায় তাঁরা বলেন, আধুনিক বিশ্বে বিচার ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় গভীর প্রভাব রাখছে। ফলে, ব্রাজিলের সঙ্গে বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগত দক্ষতা, উদ্ভাবন ও ডিজিটাল অবকাঠামো ভাগাভাগির মাধ্যমে বাংলাদেশের আদালত ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনয়ন সম্ভব।
এ বিষয়ে ব্রাজিলের বিচার বিভাগ বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করবে মর্মে National High Court of Brazil এর প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কে আশ্বস্ত করেন।
বিশেষ করে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগে ই-ফাইলিং, ডিজিটাল কেস ম্যানেজমেন্ট, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং অনলাইন বিরোধ নিষ্পত্তির মতো প্রযুক্তি নির্ভর বিষয়সমূহ প্রবর্তনে ব্রাজিলের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আলোচনায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে ব্রাজিলের পরীক্ষিত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ডিজিটাইশনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে মর্মে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মত প্রকাশ করেন।
বিচারপতিবৃন্দ তাঁদের আলোচনায় আলোকপাত করেন যে আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন শক্তিশালীকরণে বিচার প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অন্তর্ভুক্তিকরণ (integration) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে AI-এর সফল প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত করা সম্ভব বিধায় তাঁরা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে AI-চালিত কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুকরণের মাধ্যমে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিসহ AI এর সহায়তায় আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য দ্রুত, নির্ভুল ও প্রাসঙ্গিক নজির অনুসন্ধান টুলস, আইন ও রায় বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি সম্পর্কে আলোচনা করেন।
আলোচনায় বিচার প্রক্রিয়ায় দায়িত্বশীলতার সাথে AI এর ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সঙ্গত, দক্ষ এবং সবার জন্য সহজলভ্য করতে উভয় বিচারপতিবৃন্দ আইনের শাসন শক্তিশালীকরণে বিচার প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অন্তর্ভুক্তিকরণ (integration) এর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ব্রাজিলের বিচার ব্যবস্থায় নাগরিকের অধিকারের সুরক্ষায় বিচার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণে বা এ সংক্রান্ত সুপারিশ বাস্তবায়নে যে ধরণের বিচারিক ন্যায়পালগণ (Judicial Ombudsman) রয়েছেন, সেই আদলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় গণকেন্দ্রিক কোন ‘অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা’ (grievance redressal mechanism ) চালু করা যায় কিনা সে বিষয়ে বিচারপতিগণ আলোচনা করেন।
উল্লেখ্য, ব্রাজিলের সংবিধানে ২০০৪ সালে সংশোধন আনয়নপূর্বক আদালতে ও পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসে বিচার সেবা সংক্রান্ত নাগরিকের অভিযোগসমূহ নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়ে থাকে। উক্ত কর্মকর্তাগণ বিচার বিভাগের সাথে দেশের নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্কসেতু হিসেবে কাজ করন । বাংলাদেশেও অনুরূপ ব্যবস্থা চালুর সম্ভাব্যতার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্বের সাথে স্থান পায়।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে চলতি বছরের ০৩ মার্চ, ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আয়োজিত “Upholding Environmental Justice: The Role of Judges for a Sustainable Future” শীর্ষক সেমিনারে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে National High Court of Brazil [Superior Tribunal de Justiça (STJ)] এর প্রধান বিচারপতি Antonio Herman Benjamin বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতির এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিচারব্যবস্থার সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর, পর্যন্ত ব্রাজিলে অবস্থান করবেন এবং উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করবেন।