আউটসোর্সিং, নিয়োগ, প্রমোশন ও বদলি বানিজ্য করে এলজিইডির মশিউল-ফাত্তাহ সিন্ডিকেট কামিয়েছে অর্ধশত কোটি টাকা

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

এলজিইডির আলোচিত ও সমালোচিত আউটসোর্সিং, নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলী বানিজ্য সিন্ডিকেটের সদস্য মশিউল আলম।


বিজ্ঞাপন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : আউটসোর্সিং নিয়োগ, প্রমোশন ও বদলি বানিজ্যে গত আট মাসে মশিউল কামিয়েছেন পঞ্চাশ কোটি টাকা। সিরাজগঞ্জে গড়েছে সম্পদের পাহাড়। ঘুষের টাকায় কিনেছেন জমি,বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকানের পজেশন। ঘুষের টাকায় কেনা সম্পদেরসিংহভাগ শ্বশুর, শাশুড়ির নামে।

আজকের দেশ ডটকম এ ধারাবাহিক প্রতিবেদনে এলজিইডি’র নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতি বানিজ্য নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আজকের পর্বে মশিউল আলম এর প্রমোশন বানিজ্য নিয়ে আজও একটি  অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।


বিজ্ঞাপন

গত পরশু ‘এলজিইডির পদোন্নতি, নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য’ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।


বিজ্ঞাপন

দাবি উঠেছে জলবায়ু প্রকল্প ,আর ইউ টি ডি পি ও টুলু প্রকল্পের পূণ:টেন্ডারে তাহলে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে যারা নিয়োগ দিয়েছে তাদের মুখস উন্মতিত হবে। তাছাড়া ডকুমেন্টে ননকোয়ালিফায়িড ও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া এল কে এসে এস এইচ আর সি’র দৌরাত্ম কমবে।

ওহাব গ্রুপের ১২ জন, এলটি গ্রুপের ৫২ জন, সহকারী প্রকৌশলী প্রমোশন ২৫ জন,২৫৭ জন নির্বাহী প্রকৌশলী প্রমোশন এই চার গ্রুপের প্রমোশনের দেন দরবারে মশিউল ঘুষের ভাগ পেয়েছেন পাঁচ কোটি টাকার বেশি।

ওহাব গ্রুপ :  কার্য সহকারী, সার্ভেয়ার, কমিউনিটি অর্গানাইজার পদের ২৪ জন প্রমোশনের জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ওই ২৪ জনের মধ্যে এলপিআর ,অবশর ও মৃত্যু জনিত কারনে আর মাত্র ১২ জন চাকরিতে আছেন। মহামান্য হাইকোর্ট ওই ১২ জনের একটি ভুল আদেশ দেন।

আদেশের উল্লেখ করেন তাদের চাকরি জিওবি খাতে স্থায়ী করতে অথচ ওই ১২ জন প্রত্যেকের চাকরি শুরু জি ও বি খাতে। তাহলে তাদের চাকরি আবার জিওবি খাতে স্থানান্তর কেন। ওহাব গ্রুপ ওই ১২ জনের মধ্যে কয়েকজন আছেন কমিউনিটি অর্গানাইজার।

এলজিইডির নিয়োগ বিধিতে কমিউনিটি অর্গানাইজার পদধারীদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে পদায়নের কোন সুযোগ নাই।সার্ভেয়ার ও কার্য সহকারীর চাকরি বয়স ১৫ ও ২০ বছর হতে হবে এবং বিভাগীয় পরীক্ষায় পাশের মাধ্যমে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির পেতে পারেন।

একটি বিশ্বস্থ  সূত্র জানায় সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া আসার পর ওহাব গ্রুপ তৎপর হয় এবং মশিউল আলমের সহায়তায় কার্যক্রম শুরু করে।

সূত্রটি আরও জানায় মশিউল প্রত্যেকের নিকট থেকে ১০ লাখ হারে এক কোটি ২০ লাখ টাকা উঠায় এবং ৬৫ লাখ টাকা রশীদ মিয়া নিয়ে মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর আনজাম শুরু করেন কিন্তু প্রশাসন শাখার কোন কোন কর্মকর্তার আপত্তির কারনে ফাইল প্রধান প্রকৌশলী তার বিশেষ ড্রয়ারে রাখেন, কয়েক দিন পরে নির্বাহী প্রকৌশলী (তদন্ত) মোঃ সিদ্দিকুর রহমান নির্বাহী প্রকৌশলী প্রসাশন এর সাময়িক দায়িত্ব পালনের সময় রশীদ মিয়া ওই ফাইল বের করেন এবং সিদ্দিকুর রহমানের স্বাক্ষরের জন্য পাঠান। সিদ্দিকুর রহমান অস্বীকৃতি  জানালে মশিউল তাকে দশ লাখ টাকা দিয়ে স্বাক্ষর করান।

রশিদ মিয়া প্রধান প্রকৌশলীর এক্সটেনশনের সম্ভাবনা ক্ষীণ দেখে ওহাব গ্রুপ ও মশিউল মিলে আরো ২৫ লাখ টাকা উঠায় পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলীকে দেওয়ার জন্য এবং মশিউল নেয় ২০ লাখ টাকা।

সূত্র জানায় ইতোমধ্যেই প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা প্রধান প্রকৌশলীকে তোহফা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন বলে চাউর আছে। সূত্র জানায় শুধু হাইকোর্টের একটি ভুল রায়ে তাদের পদায়ন করা হচ্ছে ,এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত বাধ্যতামূলক কিন্তু এসব কিছুই তোয়াক্কা না করে তাদের শুধু টাকার বলে পদায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে এলজিইডি।

এলজিইডির আলোচিত ও সমালোচিত আউটসোর্সিং, নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলী বানিজ্য সিন্ডিকেটের সদস্য আবু ফাত্তাহ।

 

এল টি ৫২ গ্রুপ : ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান এল টি, তাদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বলা হয়। তারা পদমর্যাদা সহকারী প্রকৌশলী করতে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্টে তাদের পক্ষে রায় দেয়।

সূত্র জানায় দশ কোটি টাকায় দফা রফা হয়। এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রশীদ মিয়া নিয়েছেন সাত কোটি টাকা, মশিউল নিয়েছে দেড় কোটি এবং প্রশাসন শাখার দুই কর্মকর্তা নিয়েছেন দেড় কোটি টাকা। চাকরিতে যোগদানের দিন থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে এই রায়ে। এখানেও অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামতের প্রয়োজন থাকা জরুরী থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। সূত্র জানায় এই রায় বাস্তবায়নের ফলে সরকারের ৫০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে।

২৫ জন উপ সহকারী প্রকৌশলী কে সহকারী প্রকৌশলীর প্রমোশন দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী পদায়ন: আলোচিত মশিউল আলমসহ ২৫ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে সহকারী প্রকৌশলীর পদায়ন করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে মাধ্যমে প্রকল্প থেকে তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়।

হাইকোর্ট রায়ে কয়েকটি অবজারভেশন যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়,আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের উপর ভিত্তি করে রায় কার্যকর করতে বলা হয়। কিন্তু সেই সময়ের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ ওয়াহিদুর রহমান প্রত্যেকের নিকট থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ৬০৯ জনের চাকরি স্থায়ী করেন। কেসের সাড়ে ছয় হাজারের মধ্য থেকে বিভিন্ন পদ ধারী ৩১৬০ জনের চাকরি স্থায়ী করেন। হাইকোর্টের অবজারভেশনের তোয়াক্কা না করে যারা ঘুষের টাকা দিয়েছে তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়।

সূত্র জানায় ওই সময় প্রায় ২০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম মন্ডল(অব:) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার ঘুষের টাকা কালেকশন করতেন এবং আবু ফাত্তাহ, মশিউলসহ কয়েকজন কর্মচারী লোক সংগ্রহ করতেন। ওই রায়ে যাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে সেটা অবৈধ বলে বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল ও প্রথম শ্রেণীর অনেক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জেরে দুদক তদন্তে নেমেছে।

দুদকের স্মারক নং ০০.০১.০০০০.৫০১.০১.০০৪.২৫-২০৩৮৫, তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৫ চিঠিতে তদন্তের অংশ হিসেবে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ও আলী আক্তার হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ মঞ্জুর আলীকে দুদকে তলব করে এবং তাদের ব্যক্তিগত নথিপত্র দাখিল করতে বলে দুদক।

সূত্র জানায় দুদকের ওই চিঠিতে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রউফকেও তার ব্যক্তিগত নথিপত্র তলব করে। সূত্র জানায় উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কেসে সবার সিনিয়র ছিলেন জনৈক বুলবুল নামের প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কিন্তু তার নিকট চাকরি স্থায়ী করার জন্য পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ চায়।

ঘুষের টাকা না দিতে পারায় তার চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। ওই ২৫ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সহকারী প্রকৌশলী পদোন্নতি পেতে দুই কোটি টাকা উঠায় মশিউল।

রশীদ মিয়া দেড় কোটি , মন্ত্রনালয়, নির্বাহী প্রকৌশলী শৃঙ্খলা ও তদন্ত সিদ্দিকুর রহমান ও প্রশাসন শাখার দুই জন ক্ষমতা ধর কর্মকর্তা ও মশিউল ৫০ লাখ টাকা ভাগাভাগি করেন। রশীদ মিয়া এক্সটেনশন না পেলে মশিউল ওই ২৫ জনের নিকট থেকে আবার ৩০ লাখ টাকা উঠায় পোস্টিং পাওয়ার জন্য সূত্র জানায় নতুন প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রশাসন ও সহকারী প্রকৌশলী প্রশাসন ওই টাকা নিয়ে ভাগা বাড়ি করেছেন।

এদিকে মশিউল আলম সিরাজগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে পোস্টিং পেতে জোর তদবির করছেন। এদিকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে প্রমোশনের দাবিদার ২৫৭ জন থেকে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলজিইডির সচেতন মহল।

সর্বশেষ সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশীদ মিয়া ব্যক ডেটে আড়াই কোটি টাকা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রমোশনের প্রস্তাবে স্বাক্ষর দেয়। সূত্র জানায় এই প্রমোশনের বিষয় ২৫ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে এবং রশীদ মিয়া শুরুতেই দশ কোটি টাকা ঘুষ নেয়।

পরবর্তীতে আজকের দেশ ডটকম এ ২৫৭ সহকারী প্রকৌশলীর প্রমোশনের বিস্তারিত ও বদলি বানিজ্যের আদ্যোপান্ত নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *