করোনার নমুনা পরীক্ষা-চিকিৎসায় দুর্ভোগ

স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা, সামাজিক দূরত্ব না মানা আর সবশেষে নমুনা জমা দেয়ার সুযোগ না পাওয়া। এমনই নানা ভোগান্তির মধ্যে চলছে দেশের অন্যতম ফিভার ক্লিনিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা টেস্ট কার্যক্রম।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, আইইডিসিআরের হটলাইনে সাড়া না পাওয়া কিংবা অন্যান্য জায়গা থেকে সেবা না পাওয়ায় শত শত রোগী ভিড় করছেন এখানে। ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বলছে, মডেল ক্লিনিক না বাড়ালে সমস্যা দিন দিন বাড়বে।
নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্তদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বেড়েছে পরীক্ষাগার, সেই সঙ্গে বেড়েছে নমুনা সংগ্রহ। তাই কিছুটা হলেও ভোগান্তি কমেছে রোগীদের। তবে নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে এখনো কিছু দুর্ভোগের অভিযোগ রয়েছে। আর এসবের পেছনে সমন্বয়ের অভাবকেই দুষছেন ভুক্তভোগীরা। তবে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সব হাসপাতালই গতিশীল, স্বাস্থ্য অধিদফতর এমন দাবি করলেও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ভাইরলজি বিভাগ বলছে, মডেল ক্লিনিক না বাড়ালে রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া সম্ভব হবে না।
বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগ চেয়ারম্যান অধ্যাপ ডা. সাইফুল্লাহ বলেন, ক্ষমাপ্রার্থী হওয়া ছাড়া আমার বিকল্প কিছু বলার নেই। কিছুদিনের মধ্যে আরো ৪টি বুথ হবে। এছাড়া এই রোগটাকে মডেল হিসেবে করে যদি রেপ্লিকেট করা হয় আশা করা যায় সমস্যা কিছুটা কমতে পারে। এছাড়া ভোগান্তি কমাতে আগে থেকে অনলাইনে নির্দিষ্ট রোগীদের টোকেন দেয়ার পরিকল্পনা চলছে বলেও জানায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল।
বিভাগীয় শহর ছাড়িয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও সংগ্রহ করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের নমুনা। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা সেসব নিয়ে পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন ল্যাবে। সর্বোচ্চ সতর্কতায় চলছে পরীক্ষা।
তবে নমুনা পরীক্ষার কিট সরবরাহ কম থাকায় ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন অনেকে। দুই দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়ার কথা থাকলেও অনেক সময় তিন থেকে চার দিনও লেগে যাচ্ছে বলে দাবি তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বজন বলেন, আমাদের এক রোগী পুরোপুরি করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে। কিন্তু তার নেগেটিভ আসছে। টেষ্ট করার জন্য জেলা থেকে উপজেলা কোনটাই ঠিকমতো ধারাবাহিকভাবে মানা হয় নাই। কিটও ছিলো না। যেদিন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সেদিন দুই দিন পর ফলাফল দেওয়ার কথা কিন্তু ফলাফল দেওয়া হয়েছে তিন দিন পরে।
গেলো ১৮ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তির পরদিনই মারা যাওয়া নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী বিকাশ সাহার পরিবারের অভিযোগ, তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
মৃত বিকাশ সাহার ছেলে অনির্বাণ সাহা বলেন, আমার মা ঔখানে গিয়ে আমার বাবার জন্য তাদেরকে অক্সিজেনের জন্য বলে। রাত ১২ থেকে ৩টা পর্যন্ত শ্বাসকষ্টে ভুগে আমার বাবা। সারারাত আমার বাবা অক্সিজেন পায় নাই। তখন বাবার অবস্থায় খারাপ হয়ে যায়। ডাক্তার বা নার্স কেউ আসে নাই। আমার বাবা তখনই মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে যেসব রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন অভিযোগ রয়েছে তাদেরও। সংকট কাটাতে চিকিৎসক, নার্স এবং ভেন্টিলেশনের সুযোগ বাড়ানোর দাবি তাদের।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ভিডিওগ্রাফার আশিকুর রহমান রাজু বলেন, কারো সাথে কারো কোনো সমন্বয় ছিলো না। এখানে চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ডরয়ের সাথে কোনো সমন্বয় ছিলো না। এতে করে আমাদের অনেক বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। গরম পানি বা চুলার কোন ব্যবস্থা ছিলো না। সব কিছু নিজেদের জোগাড় করে করতে হতো। হাসপাতালে খাবারের ব্যবস্থা বা ওষুধের পরিবেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, কোনো হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, কেউ কেউ দায়িত্ব পালন করছে আবার কেউবা গাফলতি করছে। আমরা সবসময়ে হাসাপাতারগুলোর সাথে যোগাযোগ করছি। শঙ্কা অনেকের মনে কাজ করছে কিন্তু চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ডরয় সবাই একসাথে কাজ করছে।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।


বিজ্ঞাপন