মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী : গোপালগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকায় সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান। গত ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক বরাবর এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। ।

চিঠিতে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে গোপালগঞ্জ জেলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জেলায় গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, নার্সিং কলেজ এবং ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত আছেন, যাদের অধিকাংশের স্থায়ী ঠিকানা জেলার বাইরে।

বর্তমানে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ, যা সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ। জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে জেলায় ৩৩২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬৬ জন নিহত ও ৪৯২ জন আহত হয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে জেলা প্রশাসক তাঁর প্রস্তাবে বলেন, “গোপালগঞ্জ জেলার বিপুলসংখ্যক ঢাকাগামী শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যাতায়াতের সুবিধা, ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা এবং সময় ও অর্থ সাশয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গোবরা স্টেশন থেকে ঢাকামুখী অন্তত দুটি সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করা জরুরি।”
বর্তমানে গোপালগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী গোবরা রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন একটি ট্রেন রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় এবং সন্ধ্যায় ফিরে আসে। এ স্টেশনটি বাগেরহাটের মোল্লাহাট থেকে ৫ কিলোমিটার, নড়াইলের কালিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার ও পিরোজপুরের উজিরপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কিন্তু ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোলগামী ট্রেনগুলো বর্তমানে কাশিয়ানী হয়ে যাওয়ায় গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলার যাত্রীরা রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জেলা প্রশাসকের প্রেরিত এ প্রস্তাবের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছেও পাঠানো হয়েছে। গত ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এ চিঠি প্রেরণ করা হয়।
প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও নড়াইল জেলার হাজারো মানুষ নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্য ও সাশ্রয়ী ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। এতে শুধু সময় ও অর্থ সাশয়ই নয়, সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে নিরাপদ যাত্রার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।