মুস্তাফিজুর রহমান : চেইন সপে বাজার করার সামর্থ্য হয়না, ফুটপাতের ঠেলাগাড়ীতে বিশৃঙ্খল অবস্থায় অবহেলায় পড়ে থাকা মাছ, সবজী আর টিসিবির ন্যায্যমূল্যর দোকান থেকে যখন যা পাই, তা দিয়েই চলে তৃপ্তির ভুড়িভোজ। দিনশেষে সন্তানদের পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নিয়ে নিত্য এসাইনমেন্টের হিসেব কষে নিতে হয় আদর আর শাষনের মাঝে। ঘরনীর প্রতি কোমল হৃদয়ে সীমাহীন আকাশসম ভালবাসার নেকামিতে কঠরতাও প্রকাশ পায় বছর জুড়ে। এরাও মানুষ কিন্তু অন্যের চেয়ে সুখী। এদের সুখ খুজতে বাহিরে যেতে হয়না, সুখ এদের খুজে নেয়।
কি নেই অভাববোধের এই সংসারে! সবই আছে হয়তো ইচ্ছেমাফিক রুহের চাহিদার রসদের একটু অপ্রতুলতা কিন্তু দিনশেষে যেমন পরিবারের সকলের ভালবাসা পাই আবার হৃদয়ের কোমলতা দিয়ে সকলকে আপন করে নেই। নিখাদ এই ভালবাসায় আদর শাষণ মিশ্রিত বলেই সুখানুভূতির আশীর্বাদে ঘুমের বাড়িতে গিয়ে পায়চারি করতে হয়না।
সারা মাস হিসেব কষে প্রয়োজনীয় জিনিষের ব্যবহার ব্যাতিত যেমন বিলাসিতার সুযোগ নেই, তেমনি খালিমুখেও তৃপ্তির ঢেকুর ফেলার সুযোগ নেই। পরিমিত হিসেবেই জীবনমানের সাইকেলিং।প্রয়োজনীয় দ্রবাদির কিছুটা অভাববোধ এক অন্যের প্রতি নির্ভরতা বৃদ্ধি করে, বৃদ্ধি পায় ভালবাসা আর মমত্ববোধ। ভালবাসা আর মমত্ববোধ মিলে শ্রদ্ধা ও সম্মানের জাল বুনে মানসিক তৃপ্তির প্রকাশ ঘটায়।
আমার পরিবারের সদস্যরা আমার অক্সিজেন। আস্থা, বিশ্বাস ও ভালবাসার সাথে শাষনের বসবাস একই প্যাভিলিয়নের নীচে। পরিস্থিতি বুঝে পরিবারের সুখের জন্য নিজ ম্যান্ডেটরি এলিমেন্টসকে গোপন করে অন্যের চাহিদা ও ইচ্ছা পূরণে প্রত্যয়ী হতে হয়। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলে সকলকেই কাদা মাটির ন্যায় বিভিন্ন ভাবে রূপায়ণ করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে দেওয়া সম্ভব। মাস শেষে ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে ভিকটিম মানুষের পাশে দাড়ানোও সম্ভব হয়।
আস্থা ও ভালবাসার অভাববোধের সাথে বেহিসেবী জীবন ব্যবস্থার ভাইরাসে আক্রান্ত অধিকাংশ পরিবার। একই ছাদের নীচে বসবাস করলেও জীবন ভোগের মর্মার্থ অনেকেই নিরাশ হয়ে খুজে ফিরে। নিরাশার সাইক্লোন যখন মনের উপর প্রভাব ফেলে, ঠিক জীবন তখনই দূর্বিষহ হয়ে উঠে। পারিবারিক শাষণের সাথে ভালবাসা ও যৌক্তিক চাওয়া পাওয়াকে অগ্রাধিকার প্রদান করার অর্থই হলো ভালবাসার বন্ধনকে মজবুত করা।
শুধু লোক দেখানো সংসার নয়, নামীদামী রেস্টুরেন্টে নিত্য ভুড়িভোজন নয়, নিজ আলয়ে খেজুর পাতার পাটিতে পরম মমতার জাল বিছানো, যেখানে ভালবাসারা এক অন্যের সাথে নিত্য আলিঙ্গন করে সুখ ও জীবনের মর্মার্থ বুঝিয়ে দেয়। বছর শেষে সন্তানদের সাফল্য দেখে আরও কিছুদিন বেচে থাকার ইচ্ছে হয়।