জেবিন ইসলাম : সমাজের জাজমেন্টাল মনোভাব মানুষের জীবনযাত্রা এমন ভাবে ওলট পালট করে দিচ্ছে.. সোশ্যাল মিডিয়াও সভ্যতা নির্মাণে অনেকাংশেই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে!
ফ্রেন্ড ফলোয়ার যারা লাইক কমেন্ট দিবে তাদের মনমত স্ট্যান্ডার্ড লেভেল ধরে স্মার্ট হতে হবে, জাতে উঠতে ভাল ড্রেসআপ গেটআপ লাগবে, সামর্থ্য না থাকলেও বিয়ের প্রোগ্রাম ধুমধাম করতে হবে, কত বেশি কাবিনের টাকা, কার থেকে কে কত বড় ইভেন্ট করবে, কত নামী ফটোগ্রাফার আনবে, বাচ্চা কাচ্চা কোন হসপিটালে জন্ম হবে, কত দামী স্কুলে পড়াবে, এমন কি যাকে বিয়ে করবে সে দেখতে কেমন হতে হবে, তার পাশে কাকে মানাবে , বয়স হাইট গায়ের রং স্বাস্থ্য কেমন হতে হবে, জব স্যালারি, ইনকাম , প্রফেশন , কেমন লাইফ পার্টনার তাকে বিয়ে করতে হবে , সে কতটুকু ডিজার্ভ করে কি করেনা , সেগুলোও ইন্ডিরেক্টলি সমাজই নির্ধারণ করে দিচ্ছে!
কত মানুষের সামর্থ্য না থাকলেও একটা স্মার্টফোন না কিনলে যেন মুখই দেখাতে পারছেনা। টিউশনি করে হাত খরচ জুগিয়ে চলা ছেলেটাও ভাবে বন্ধুদের সাথে হ্যাংআউটে না গেলে , বড় রেস্টুরেন্টে না খেলে , ভাল ক্যামেরায় ছবি না তুললে ক্লাস মেন্টেনই করতে পারবেনা।
আপ্পিগ্রুপের সাথে তাল মিলিয়ে টিফিনের টাকা জমিয়ে দামী ব্র্যান্ডেড কসমেটিকস , হাইপ উঠা ড্রেস জুতা বেল্ট ব্যাগ কেনার টাকা জমাতে কত শত হিসাব গড়মিল করতে হচ্ছে নিম্ন অথবা মধ্যবিত্ত মেয়েগুলোর!
কত জনের যে বাবার পকেট , মায়ের আচঁল থেকে রোজই থাকছে কোন না কোন ঘাম ঝড়ানো আবদার পূরণের বাহানা! বছরের পুরা ইনকামের হাত খরচে পাল্লা দিয়ে চলে ট্যুর গ্রুপের সাথে তাদের ঘুরার প্রতিযোগিতা, বছরে ৫/৭ টা ওকেশন তো মিস ই নাই।
ভাই বোন বিদেশে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি দিলেও চায় দেশে তার ভাইটার একটা ভাল মোটরবাইক থাকুক, বোনটার নাহয় একটা ভাল সেলফি তোলার মোবাইল হোক!
জানেন ভাবী, আর অমুক ভাইদের পার্টি জিটুজির চাপে সংসার চালাতে সামলাতেই টানাপোড়া লেগে যায় কত কত সুখী কাপলদের!
এতকিছুর ভীড় সামলে হাত খরচের টাকাটাই যেন সম্বল বেঁচে থাকে কোন পেইজে কি সেল করছে, কোনটার ট্রেন্ড চলছে , বাড়তে থাকে গ্যাজেট / প্রোডাক্টের শপিং লিস্ট!
খুব যোগ্য ছেলে মেয়ে গুলো সমাজের চাহিদা অনুযায়ী পার্ফেক্ট ম্যাচ খুঁজতে খুঁজতে জীবনের সবথেকে সুন্দর সময়গুলো পাড় করার টাইমটাই হতাশায় কাটাচ্ছে, একদম অযোগ্য মেয়ে / ছেলেটাও রাজপুত্র রাজকন্যা তার পেতেই হবে ডিমান্ড করে করে সময় খোয়াচ্ছে..
এতকিছুর পরও সমাজকে খুশি করার উপায় নেই, বন্ধ হয়না সমাজের গসিপিং , ব্যাক বিচিং!
এ সমাজদ্বয় সবই করবে, শুধু এটাই বোঝাবেনা যে – কেউ কারো লাইফ পার করে দিবেনা, কোনও সিচুয়েনই কেউ ফেস করে দিবেনা!
এভাবেই ‘মানুষ কি বলবে / লোকে কি ভাববে’ এই বেসিসে সবার এক্সপ্যাক্টেশনই জোড় করে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আমরাও অন্যের সাথে নিজের সবকিছু কম্পেয়ার করতে করতে নিজের বলতে কোন লাইফ রাখছিনা, এত শো অফ এত আর্টিফিসিয়াল কম্পিটিশনের ভীড়ে রিয়েল ইমোশনগুলো চাপা পড়ে সব শেষে শূন্য হাতে উঠে আসতে হয়।
একে একে না পাওয়ার অবজেকশন নিয়ে রাত বাড়ার সাথে সাথে ডিপ্রেশনও বাড়তে থাকে! 🙂
সবার কি উচিৎ না নিজে কিভাবে ভালো থাকেন সেই পথে চলা। লোকে কি বলবে সেই পথ পরিহার করা?