জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে ৪ নং তুলশিরচর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাজী মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম পরিষদের সচিবের কক্ষের দরজায় লাথি দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় ও নানা আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে ।

বুধবার ( ১৮ জুন) রাত ৮ টা পর্যন্ত এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্থানীয় এলাকাবাসী ও ইউনিয়নের সচেতন মহলেরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবী জানিয়েছেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি সচিবকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে। চেয়ারম্যান এর চামচা বলে আখ্যায়িত করছেন। পরে রাগান্বিত সচিবের কক্ষের দরজা লাথি দিচ্ছেন। পরে স্থানীয়রা আবার তাকে চেয়ারে বসালে তিনি আবারো সচিবকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।

জানা যায়, তুলশির চর ইউনিয়নের টিকরাকান্দি এলাকার মৃত আলহাজ্ব আবুল কাশেম এর ছেলে হাজী আতিকুল ইসলাম ১ বার সিলেকশনে ও ৩ বার ভোটে নির্বাচিত হয়। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও সে সময় তার ছোট ভাই আলহাজ সাইফুল দীর্ঘদিন ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি দায়িত্বে থাকার কারণে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২০২১ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৪র্থ বারের মতো ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয় ।

এদিকে তার ছোট ভাই আলহাজ সাইফুল ইসলাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ার কারণে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারী ইউনিয়ন নির্বাচন প্রচারণা জন সভায় টিকরাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ আওয়ামীলীগ নেতাদের উপস্থিতিতে ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য হাজী আতিকুল ইসলাম, আনোয়ার মাষ্টার, আবু তালেব মাষ্টারসহ ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ২১ জন নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগে যোগদান করেন । এ ছাড়াও তার আরেক ছোট ভাই আলহাজ জুয়েল হাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্বে ছিলেন। এদিকে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না আতিকুল হাজি ও তার পরিবার যেন ইউনিয়নে এক আতঙ্কের নাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিকরাকান্দি এলাকার কয়েকজন জানান, হাজী আতিকুল ইসলাম এক সময় বিএনপির নির্যাতিত ব্যক্তি ছিলেন। তাদের পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ও দলীয় পদে যুক্ত। তার ভাই আওয়ামীলীগের সভাপতি থাকার কারণে দলীয় প্রভাব ও মোটা অংকের অর্থ খরচ করে ৪র্থ বারের মেম্বার নির্বাচিত হয়। পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু দিন আগে বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছে।
৫ আগস্টের পর তিনি এলাকায় নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। তার কথার কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। ঘটনার দিন অনেক নেতাকর্মীরা ছিল এবং ইউপি মেম্বাররাও ছিল।
আওয়ামীলীগ আসলেও তারা, বিএনপি আসলেও তারা। তারাই সুবিধাবাদী। একজন ইউপি সদস্য হয়ে পরিষদের দরজায় লাথি দেওয়ায় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের আইন ভঙ্গ করেছেন। অতি দ্রুত তাকে অপসারণ করে সঠিক তদন্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
তবে তুলশির চর ইউনিয়নের সচিব মোঃ সেলিম হোসেন বলেন, গত রমজান মাসে একটু সমস্যা হয়েছিল । পরে ইউনিয়নের মেম্বার ও বিভিন্ন গণ্য মাণ্য ব্যক্তিরা সমাধান করে দিয়েছেন। এই ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আসলে ইউপি মেম্বার আতিকুল ইসলাম আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কারণে আমি আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে জানাতে পারিনি।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য হাজী আতিকুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, যে ঘটনা ঘটেছিল সেটা তখনই শেষ হয়ে গেছে। এখন আর বলার কিছু নাই। ভিডিওটি বর্তমানে ভাইরাল এবং আপনি ইউপি সদস্য হয়ে পরিষদের দরজায় লাথি দিতে পারেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি এডিয়ে যান।
এদিকে কথা হলে জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শফিউর রহমান শফি মুঠোফোনে জানান, হাজী আতিকুল ইসলাম অতীতে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু দিন আগে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছে। তিনি আমাদের বিএনপি বা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেউ না।
এদিকে জামালপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিন্নাত শহীদ পিংকি বলেন, ইউপি সদস্য হয়ে পরিষদে তিনি এ কাজ করতে পারে না। আর পরিষদের সচিব মহোদয়ও আমাকে বিষয়টা অবগত করেনি। আর শৃঙ্খলা বিরোধী, বিধি বহির্ভূত ও সরকারী কাজে বাধা দেওয়া শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আমি খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং আপনাদের জানাবো ।
জামালপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) ও স্থানীয় সরকার এর উপ পরিচালক এ. কে. এম. আব্দুল্লাহ-বিন-রশিদ এ প্রতিবেদক মাসুদুর রহমানকে জানান, বিষয়টা মাত্র জানলাম। এটা আমরা দেখব। অন্যায় যেই করুক না কেন ছাড় দেওয়া হবে না।