ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতে লোকসভা ভোটের পূর্ণ ফল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ঘোষণা না হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই যে আরো শক্তিশালী হয়ে ফের ক্ষমতায় আসছেন তা একরকম নিশ্চিত। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গেরুয়া ঝড়ের সামনে টিকতে পারেনি অন্য কোনো দল। গতকাল বৃহস্পতিবার কিছু সময়ের ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশনের ফলাফলে এমন চিত্রই উঠে আসে। এর আগে বুথ ফেরত ফলাফলেও বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের ফের ক্ষমতায় ফেরার আভাসই পাওয়া গেছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া খবরে দেখা গেছে, মোট ৫৪২টি আসনের মধ্যে মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২৮৩টি আসনে এগিয়ে ছিল। বিজেপি’র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস মাত্র ৫১টি আসনে এগিয়ে। যেখানে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ২৭২টি আসন প্রয়োজন। ২০১৪ সালে মোদি প্রথমবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিজেপি ২৮২টি আসন পেয়েছিল। সেই নির্বাচনে জয়লাভ করে বিজেপি ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। রোববারের বুথ ফেরত জরিপেও মোদির বিজয়ের আভাস দেয়া হয়। ভারতের এই নির্বাচনে ব্যয় হয়েছে ৭শ’কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। ৬০ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। গান্ধী-নেহেরু পরিবারের সদস্য ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গত বুধবার বুথ ফেরত জরিপকে প্রত্যাখ্যান করেন। ৪৮ বছর বয়সী রাহুল এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘বুথ ফেরত জরিপ ভুয়া। এতে বিভ্রান্ত হবেন না।’ এদিকে উত্তর প্রদেশের আমেথিতে রাহুলের আসনে জয়লাভ করতে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে বলে আগাম আভাস পাওয়া গেছে। এই আসনটি তার পরিবারের সদস্যরা কয়েক প্রজন্ম করে জিতে আসছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক এই দেশটির নির্বাচনী ফল সামনে আসতেই বিভিন্ন দেশের নেতারা টুইট এবং টেলিগ্রাম করে মোদীকে ভাসিয়েছেন শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনের বন্যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এক বার্তায় হাসিনা বলেন, বিশাল এই জয় আপনার প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার প্রতিফলন। তিনি মোদীকে বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানান।
আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক চিঠিতে বিশাল জয় নিয়ে পুনরায় ভারতের ক্ষমতায় বসতে যাওয়া মোদীকে ‘আন্তরিক’ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে মোদীর সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার এক টুইটে ওই চিঠি পাওয়ার কথা জানান।
জাতীয় নির্বাচনে ‘দারুণ জয়’ পাওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এক টুইটে তিনি বলেন, শুভেচ্ছা, আমার বন্ধু নরেন্দ্র মোদী, নির্বাচনে আপনার দারুণ জয়ের জন্য। নির্বাচনে এই ফলাফল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে আবারও আপনি নেতা হচ্ছেন। আমরা একসঙ্গে ভারত ও ইসরায়েলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করার কাজ অব্যাহত রাখবো। খুব ভাল, শাবাশ বন্ধু।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বড় জয়ের জন্য মোদী ও তার দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনে তিনি প্রস্তুত আছেন বলেও জানান। পুতিন টেলিগ্রাম করে মোদীকে ওই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান।
এদিকে, জাপানের প্রেসিডেন্ট শিনজো আবে টেলিফোনে মোদীকে শুভেচ্ছা জানান।
এক টুইটে মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, অসাধারণ জয়ের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে শুভেচ্ছা। আমরা আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় আছি। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনাও এক চিঠিতে মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এক টুইটে মোদীকে নির্বাচনে জয়লাভের জন্য শুভেচ্ছা জানান। ভুটানের রাজা এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রীও মোদীকে শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে, নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী। পাশাপাশি, মোদীর সঙ্গে যে আদর্শিক লড়াই তার চলে আসছে, তা একইভাবে চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনের ভোট গণনার পর ফলাফলে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলে বিকেলে কংগ্রেস কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল তার প্রতিক্রিয়া দেন। প্রথমেই তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি এই নির্বাচনে জিতেছেন। তাদের অভিনন্দন। জনগণ যাকে পছন্দ করেছে, তারাই সরকার চালাবেন, জনগণের পছন্দকে সম্মান করতে হবে। কারণ জনগণই রাজা, তারাই সবকিছু ঠিক করেন।’ নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, যে আদর্শিক লড়াইটা চলে আসছে, সেটা চলতে থাকবে।’ নির্বাচনে এমন ফলাফলের পেছনে কোনো কারণ দায়ী থাকলেও সেটাতে পড়ে না থাকার কথাই বলেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘যে ভুল হয়েছে, সেটাতে পড়ে থাকতে চাই না।’ রাহুল গান্ধী তার উত্তর প্রদেশের দীর্ঘদিনের আসন আমেথিতে হেরে গেছেন বিজেপির প্রার্থী স্মৃতি ইরানির কাছে। গান্ধী পরিবারের ‘সম্পত্তি’ হিসেবেই পরিচিত এ আসনে পরাজয় স্বীকার করে তিনি অভিনন্দন জানান স্মৃতিকে। যদিও কংগ্রেস সভাপতি জিতে গেছেন কেরালার ওয়ানদ আসনে।