ঢাকা ওয়াসার পিপিআই প্রকল্পের ২২ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব
প্রকাশ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বেতন-পেনশন বন্ধের দাবি
নিজস্ব প্রতবেদক : ৩১ অক্টোবর-১৮ তারিখে বিলুপ্ত ঘোষিত পিপিআই প্রকল্পের বিগত ২২ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও ব্যাংক ব্যালেন্স প্রকাশ করার দাবি করেছেন সাধারন কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ। ১৯৯৭ সাল থেকে ৩১ অক্টোবর-১৮ পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি: পরিচালিত ঢাকা ওয়াসার সাতটি রাজস্ব জোনের (রাজস্ব জোন-৩,৪,৫,৬,৮,৯ ও ১০) সমন্বয়ে গঠিত পি পি আই(প্রগ্রাম ফর পারফরমেন্স ইমপ্রুভমেন্ট) প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে ভাগ্য খুলে গেছে অনেকের। অথচ সমবায় সমিতির সাড়ে তিন হাজার সদস্যের ভাগ্যে ছিটেফোটাও জুটেনি। সমবায় সমিতির একাউন্ট শূন্য।
ঢাকা ওয়াসার পিপিআই প্রকল্পের কো-চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, সমবায় সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সামসুজ্জামান, সেক্রেটারী মো: জাকির হোসেন, সদস্য (অর্থ) ও সাবেক কো-চেয়ারম্যান হাসিবুল হাসান ও ক্যাশিয়ার হাবিব উল্লার পিপিআই প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন।দুদকে ২৯ জানুয়ারী -১৯ তারিখের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১এপ্রিল এ আদেশ দিয়েছেন বলে জানাগেছে। অন্যদিকে ৩০এপ্রিল ওয়াসার এমডি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পিপিআই কর্তৃপক্ষের কাছে ২২ বছরের আয়-ব্যয়, পরিসম্পদ ও দায়ের তথ্য প্রেরনের জন্যে আদেশ দেয়া হয়েছে।পত্রে বলা হয়েছে ২০১০-১১ অর্থ বছর থেকে ১৮-১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত ৪৪৫ কোটি টাকা টাকা ওয়াসা থেকে পিপিআই প্রকল্পের জনতা ব্যাংকের কারওয়ানবাজার কর্পোরেট শাখার চলতি হিসাব নং-২০০০২৬৩৪৬ এ দেয়া হয়েছে। এই হিসাব থেকে নিয়মিত লাইফলাইন শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লি: এর এক্সিম ব্যাংকের চলতি হিসাব নং-০৮৮১১১০০০১৬৮৪১ একাউন্টে এবং বনলতা কর্মদক্ষতা উন্নয়ন শ্রমজীবী সমিতির এনবিএল একাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে বলে পত্রে দাবি করা হয়েছে।স্থানান্তরিত টাকা পিপিআই প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
লুটের ভাগ ভাটোয়ারায় রাজনৈতিক বিদে¦ষ ভুলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একাকার ছিল। পিপিআই’র শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন মরহুম হাফিজ উদ্দীন, কো-চেয়ারম্যান ছিলেন মরহুম আতাউর রহমান।
রাজস্ব জোন ওয়াসা ফেরত নেয়ার পর নিয়ম বহির্ভুতভাবে ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামানকে পিপিআই’র চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। শ্রমিক দলের নেতা মিঞা মিজানুর রহমান আগের মত কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি সমবায় সমিতির নির্বাচনে একটি কমিটি দায়িত্ব নিলেও পিপিআই’র সম্পদ ও ব্যাংক একাউন্ট বুঝে পায়নি। পিপিআই’র পরিচালনা কমিটির অন্য সদস্য-মো. সামসুজ্জামান, দুলাল চন্দ্র সাহা, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও প্রকৌশলী আরমান ভুইয়া।
সর্বজনাব পিপিআই’র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে থাকা সেকেন্ড ইন কমান্ড খ্যাত হাবিব উল্লাহ্ ভূইয়া।
পিপিআই’র উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য-ওয়াসার সিবিএ’র সাবেক সাধারন সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব পরিদর্শক জাবের হোসেন, সিবিএ’র সাবেক সাধারন সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব পরিদর্শক আনিসুর রহমান, রাজস্ব পরিদর্শক আজিজুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব পরিদর্শক মির্জা রহিম, রাজস্ব পরিদর্শক আজিজুল আলম খান, অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব পরিদর্শক খসরু আলম খান, ওয়াসার সাবেক প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা এসএম ফরিদ উদ্দিন (দুর্নীতির অভিযোগে অবসরোত্তর সরকারি সকল বেনিফিট বন্ধ), ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির-ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: সামসুজ্জামান, সেক্রেটারী মো: জাকির হোসেন, পিপিআই’র সাবেক কো-চেয়ারম্যান ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য (অর্থ) প্রকৌশলী হাসিবুল হাসান। এই তিনজন সমবায় সমিতির ব্যাংক একাউন্টের সিগনেটরি ছিলেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন-শফিকুল ইসলাম, আশরাফুল আলম, কামাল হোসেন, বেগম লুৎফুন্নাহার, মো: বাবুল আলী, মো: বদিউল আলম, রমিজ উদ্দিন ভুইয়া ও কাজী শহীদ উল্লাহ।
চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন নাছির উদ্দিন(জোন-৪), মোহাম্মদ মোহসিন (জোন-৮) ও আব্দুল মালেক (জোন-৫), এবং ওয়াসা থেকে প্রেষণে নিযুক্ত প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন (জোন-৩), সামসুল ইসলাম খান (জোন-৬), শফিকুল ইসলাম (জোন-৯)ও শাহাদাৎ হোসেন মিলন (জোন-১০)এই প্রকল্পের সুবাধে সবাই এখন আয়ের সাথে অসঙ্গতিপুর্ণ অর্থ বিত্তের মালিক।
২০০৮ সাল থেকে পিপিআই প্রকল্পের ঠিকাদার ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি: এর কোন সাধারণ সভা হয়নি। নিয়মিত হয়নি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা। এমনকি পিপিআই পরিচালনা কমিটির সভাও যথানিয়মে হয় নি। পিপিআই প্রকল্পে রাজস্ব আদায়ের বিপরীতে ১০শতাংশ হারে সমিতি কত টাকা কমিশন পেয়েছে , সামগ্রিক খাতে কত ব্যয় হয়েছে তার কিছুই সমিতির সাধারণ সদস্যরা জানেন না। আবার পি পি আই’র উদ্বৃত্ত টাকা সমিতির একাউন্টে রাখা হয়নি। যে কারনে সমবায় অধিদপ্তরের অডিটে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। পিপিআই’র আলাদা একাধিক একাউন্টে টাকা রাখা হত। উদ্বৃত্ত টাকা সমিতির সাধারণ সদস্যদের কল্যানে ব্যয় করার কথা থাকলেও তাতো হয়নি বরং কোন লভ্যাংশও দেয়া হয়নি। এদিকে সমবায় সমিতি ও পিপিআই’র জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের চারটি একাউন্টে কি পরিমান টাকা জমা আছে বা ক্যাশিয়ারের কাছে নগদ কত টাকা আছে তা সাধারন সদস্য তো নয়ই ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরাও জানেনা। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকল্পের কর্মচারিদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য খরচ বাবদ আয়ের দুই তৃতীয়াংশ খরচ হওয়ার কথা। বেতন ও অন্যান্য খরচ শেষে বছরে ৫কোটি টাকা হারে উদ্বৃত্ত থাকলেও ২২ বছরে অন্তত ১০০কোটি টাকা একাউন্টে জমা থাকা উচিত। অন্যদিকে পিপিআই’র শেষ চার মাসের বিল এখনো বকেয়া রয়েছে।বকেয়া বিল নিয়েও সবাই অন্ধকারে। ওয়াসার সাধারন কর্মচারিদের প্রশ্ন টাকা গেল কোথায়? অন্যদিকে প্রকল্প না থাকলেও একাউন্ট থেকে টাকা তুলে পরিচালনা কমিটি আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব আদায়, আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারে পিপিআই’র পরিচালনা কমিটির ৫জন (দুই জন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন) ও উপদেষ্টা পরিষদের ৭জন, সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির ১২জন এবং সর্বজনাব ক্যাশিয়ার হাবিব উল্লা ভুইয়াকে বিচারের আওতায় আনা ও সমবায়ের সাধারন সদস্যদের অর্থ উদ্ধারের জন্যে কর্মরতদের বেতন ও অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন বন্ধ করা এবং তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং বিগত ২২ বছরের দুর্নীতির শে^তপত্র প্রকাশ করার জন্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ওয়াসার সাধারণ কর্মচারীগণ।