নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিষেধক টিকা গ্রহণে পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নারীরা। গণটিকাদান শুরুর পর প্রতিদিনই বাড়ছে টিকা নিতে নিবন্ধিতের সংখ্যা। তবে এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় থাকা পুরুষ। পর্যাপ্ত প্রচারণা না থাকা, গর্ভাবস্থা ও দুগ্ধপান করানো, অনলাইন নিবন্ধন করতে না পারা- টিকা নিবন্ধনে নারীর সংখ্যা কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা শনাক্তের ক্ষেত্রে নারীরা ভালো অবস্থানে আছেন। ফলে পুরুষের চেয়ে টিকা নিতে তাদের আগ্রহ হয়তো কম। অনেকে আবার গর্ভাবস্থা এবং সন্তানকে দুধ পান করানোর কারণেও টিকা নিচ্ছেন না। আবার নারীদের থেকে পুরুষরা বেশি বাইরে থাকেন যে কারণে তাদের টিকা নেয়ার সুযোগও বেশি। তবে নারীদের টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ এগিয়ে এলে টিকাগ্রহণে ব্যবধান কমে আসবে।
টিকা গ্রহণে ক্রমান্বয়ে নারীদের উপস্থিতি শুরুর দিকে কম থাকলেও এখন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘নারীদের কম টিকা নেয়ার বিষয়টি আমাদের নজরেও এসেছে। কিন্তু শুরুতে কম হলেও এখন বাড়ছে। গত দুই-তিনদিনে পুরুষের প্রায় কাছাকাছি টিকা নিয়েছেন নারীরা। অনেক জায়গায় টিকা নিতে নারীদের দীর্ঘ লাইন দেখেছি।’
অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘টিকা নিতে প্রচারণা কম বেশি এখানে বিষয় না। কারণ একজন জানলে পরিবারের সবাই জানতে পারছেন। কিন্তু আমার ধারণা পুরুষরা বাইরে বাইরে বেশি যান। তাদের ঝুঁকিও অনেক। তাই সুযোগ করে তারা বেশি টিকা নিতে পারছেন।’
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী করোনার ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম উদ্বোধনের করার পর ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি করা কোভিশিল্ড টিকা। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দিতে হবে। প্রথম টিকা গ্রহণের আট সপ্তাহ পর দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাগ্রহীতা ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৮২৫ জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে পুরুষ ২০ লাখ ৮১ হাজার ৮১৬ জন। নারী ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৯জন। মোট টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে ৭৫৪ জনের পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগরীতে এক দিনে টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ২০৫ জন। এখানে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন চার লাখ ৬৫হাজার ৫৩১জন। তাদের মধ্যে পুরুষ রয়েছেন তিন লাখ ৭হাজার ৯০৬ জন। আর নারী এক লাখ ৬১ হাজার ৬২৫ জন।
কোন বিভাগ কতজন : সারাদেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে মোট টিকা নিয়েছেন নয় লাখ ৮৪ হাজার ৪৮৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ছয় লাখ ৪২ হাজার ৪৯৩ জন ও নারী তিন লাখ ৪১ হাজার ৯৯৫ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে এক লাখ ৩৯ হাজার ২৮ জন টিকা নিয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৮৭ হাজার ৫৩৭ জন আর নারী ৫১ হাজার ৪৯১ জন।
চট্টগ্রাম বিভাগে মোট টিকা নিয়েছেন সাত লাখ ৪ হাজার ৫৯৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ চার লাখ ৫৮ হাজার ১৬৯ জন। আর নারী দুই লাখ ৪৬ হাজার ৪৩০ জন। রাজশাহী বিভাগে তিন লাখ ৫৫ হাজার ৩৮১ জন। এদের মধ্যে দুই লাখ ২৭ হাজার ২৭২ জন পুরুষ আর নারী এক লাখ ২৮ হাজার ১০৯ জন।
রংপুর বিভাগে মোট দুই লাখ ৯৩ হাজার ২২৬ জন টিকা নিয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ নিয়েছেন এক লাখ ৮৮ হাজার ৭২৮ জন। আর নারী এক লাখ ৪ হাজার ৬৯৮ জন। খুলনা বিভাগে মোট নিয়েছেন চার লাখ ৯০৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৫৩ হাজার ৪২ জন। আর নারী এক লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৪ জন।
বরিশাল বিভাগে টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৫১ হাজার ৯৩১ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৯৯ হাজার ৭৯৫ জন। নারী ৫২ হাজার। সিলেট বিভাগে মোট টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ২৪ হাজার ৭৮০। আর নারী ৭২ হাজার ২৮৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু দেখা গেছে অনেকে রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা নিচ্ছেন না। এখন তাকে তো জোর করা যাবে না।