বিদেশে নারীদের কর্মসংস্থান এখনও অনিরাপদ

জাতীয় জীবন-যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে সৌদি এয়ারলাইন্স একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফেরেন আছিয়া (ছদ্মনাম) নামের এক নারী গৃহকর্মী। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণ করার পর থেকে বিমানবন্দরের ভেতর আছিয়া বেগমের উদ্দেশ্যহীন চলাফেরার বিষয়টি এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন থাকায় তার কাছ থেকে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় বিমানবন্দর এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ আছিয়াকে হস্তান্তর করে ব্র্যাকের সেইফ হোমে।
এর আগে গত বছরের ২ নভেম্বর জর্ডান থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফেরেন আকলিমা খাতুন (ছদ্মনাম)। আকলিমাকে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে রিক্রুটিং এজেন্সি এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল জর্ডান পাঠায়। সেখান থেকে ১ নভেম্বর রাতে মানসিক অসুস্থ হয়ে তিনি দেশে ফেরেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব থেকে ৫ জন নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে দেশে ফিরেছেন। আর ওমান থেকে ২ নারী সন্তান নিয়ে দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে নারীর কর্মসংস্থান প্রতি বছরই বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে নিপীড়ন, মৃত্যু এবং মানসিক ভারসাম্য হারানোর মতো ঘটনাও। বিদেশে দক্ষ নারীকর্মীদের ভাগ্য সহায় হলেও প্রায়ই বিপদে পড়ে যান অদক্ষ কিংবা আধা-দক্ষ নারী কর্মীরা। বিশেষ করে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যারা বিদেশ যান তাদের ভাগ্য খুব একটা সহায় সবক্ষেত্রে হয় না। কাজ করতে গিয়ে খুন হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। অভিবাসন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নারীকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তাদের মতে দক্ষ কর্মীরা খুব একটা বিপদে না পড়লেও গৃহকর্মী হিসাবে যারা যাচ্ছেন বা গেছেন তাদের জন্য কর্মসংস্থান এখনও নিরাপদ হয়নি।
১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৪১৫ নারী কাজের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ২০১৯ সালে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৮৬ নারী কাজের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন আর ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৯৩৪ জনে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সৌদি আরবে গেছেন ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৫ জন নারী। যা মোট নারী অভিবাসনের ৩৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া জর্ডানে ১ লাখ ৬২ হাজার ২৮৭ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৭৫ জন, লেবাননে ১ লাখ ৭ হাজার ২১৬ জন, ওমানে ৯১ হাজার ২২০ জন, কাতারে ৩৩ হাজার ৫৬৮ জন, মরিশাসে ১৮ হাজার ৩৩৮ জন, কুয়েতে ৯ হাজার ১২০ জন, মালয়েশিয়াতে ৬ হাজার ৬৫২ জন ও বাহরাইনে ৪ হাজার ২৯০ জন নারী কাজের উদ্দেশে বিদেশ গমন করেছেন।
বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে ফেরত আসা চার লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৪৯ হাজার ৯২৪ জন নারী। ২১টি দেশ থেকে তারা ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২১ হাজার ২৩০ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১১ হাজার ৬০২, কাতার থেকে ৪ হাজার ৮২৬ন, ওমান থেকে ৩ হাজার ২০৯, লেবানন থেকে ২ হাজার ৯১০, জর্ডান থেকে ২ হাজার ২৫৯ জন এবং তুরস্ক থেকে ১ হাজার ২৯ জন ফেরত এসেছেন।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে নারী শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ৪৮৭ জন নারীর মরদেহ দেশে ফিরেছে। এদের মধ্যে ২০১৬ সালে ৫৭ জন, ২০১৭ সালে ১০২ জন, ২০১৮ সালে ১১২ জন, ২০১৯ সালে ১৩৯ জন এবং করোনাকালীন সময়ে নিয়মিত বিমান চলাচল না থাকলেও ২০২০ সালে ৭৭ নারীর মরদেহ দেশে ফিরেছে।


বিজ্ঞাপন