নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃত করে একজনকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ গঠনসহ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে এখন বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা ওয়াকিবহাল। বিভিন্ন জায়গায় রেজুলেশন হচ্ছে ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্বনেতারা তা দেখছেন এবং প্রচারও করছেন। কাজেই আন্তর্জাতিকভাবে সেই ঘোষকের আর কোনও নাম-নিশানা ঠিকানা থাকবে না। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মিথ্যা দাবিকে আর কেউ গ্রহণ করবে না।’
রোববার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বঙ্গবন্ধুর নাম আর কেউ মুছতে পারবে না। স্বাধীনতার ঘোষক সম্পর্কিত মিথ্যা দাবিরও অবসান ঘটবে।’
১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাস থেকে তাঁর নামটা মুছে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক দাঁড় করানো হয়েছিল। স্বাধীনতার নায়ক দাঁড় করানো হলো। ইতিহাস পাল্টে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হলো, তাঁর (বঙ্গবন্ধু) নামটাও নেওয়া যাবে না। মুক্তিযোদ্ধারা ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছি’ বলার সাহসও পায়নি। তারা সেই সাহস হারিয়ে ফেলেছে। কারণ, তখন এটা বললেই নির্যাতন করা হতো। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতার দখলদারদের চাটুকারিতা করেছে, তারাই সবকিছু বলতে পারতো। তখন সত্যকে সত্য বলা নিষিদ্ধ ছিল। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, যে ভাষণের মধ্য দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনকে সশস্ত্র বিপ্লবে রূপ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, সেই ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সত্যের জয় হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের সব দাবি মিথ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’’
এ সময় দল ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষে প্রতি কৃতজ্ঞ ও আমার দলের নেতাকর্মীদের কাছেও কৃতজ্ঞ। কারণ, তারা ভোট দিয়েছে বলেই আমরা আজ ক্ষমতায়। যার কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছি। এ উপলক্ষে বহু দেশি-বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার এসছেন, আসছেন। অনেকেই বার্তা পাঠাচ্ছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইংরেজরা এ দেশের মানুষের আত্মগরিমা ধ্বংস করে দরিদ্র করে দিয়ে গেছে। জাতির পিতা এসে এ দেশের মানুষকে আত্মমর্যাদাশীল করতে, স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী করতে চেয়েছেন। আমরাও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। তিনি যা করেছেন, সেগুলোই করে যাচ্ছি। ৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত একটা কালো অধ্যায় ছিল, ২০০১ থেকে ২০০৬ আরেকটি কালো অধ্যায়। আমরা সেখান থেকে উত্তরণ করেছি। জাতির পিতার দেখানো পথে উন্নয়নশীল মর্যাদা পেয়েছি। ৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছি। প্রতিটি ঘরে আলো নিশ্চিত করছি। খাদ্যসহ সব রকমের চাহিদা পূরণে জনগণের পাশে আছি।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো। ১০ দিনে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি শেষ হবে। পরে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠন নিজস্ব কর্মসূচি নিতে হবে। সেটি ঢাকা বা মহানগর পর্যায়ে শুধু নয়, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত করতে হবে। শুধু আলোচনা, সভা-সেমিনার সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না, দরিদ্রদের সহযোগিতা করতে হবে। করোনায় অর্থনৈতিকভাবে মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আমরা সেটা নিশ্চিত করছি, এ বিষয়গুলো দলের পক্ষ থেকেও দেখতে হবে।’
দেশের সব খালি জমিতে আবাদের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। করোনায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিলেও যেন আমাদের সমস্যা না হয়। আমরা যেন নিজেরা নিজের খাদ্য জোগানের পাশাপাশি অন্যকেও দিতে পারি।’ এ সময় ‘শস্যক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু’ তৈরি করে গিনেস বুকে নাম করায় কৃষি ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ওই কৃষককে ধন্যবাদ জানাই, যিনি এ কাজটি করেছেন। তিনিই আমাদের পথ দেখিয়েছেন। কৃষক ও মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে জাতির পিতার রক্তঋণ শোধ করতে হবে। আর সেটা আন্তরিকতার দিয়ে করতে হবে। ইনশআল্লাহ আমরা সেটা পারবো।’
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, মির্জা আজম, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক সামছুন্নাহার চাঁপা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।