নিজস্ব প্রতিবেদক : জনকণ্ঠ ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে ভবনের সামনেই অবস্থান নেওয়া চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় ১০ জনের মতো আহত হয়েছেন। রোববার বিকালে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত সিনিয়র প্রতিবেদক ফিরোজ মান্না, প্রতিবেদক সাজু আহমেদ, খোকন গুনকে মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের অনেকে যে যার মতো করে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছেন। হামলাকারীরা লোহার রড ও লাঠি ব্যবহার করে।
বিকালে চাকরিচ্যুত জনকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বিভাষ বাড়ৈ জানান, চাকরিচ্যুত সাংবাদিকরা মূল ফটকে তালা দিয়ে ভবনের সামনে রাস্তায় অবস্থান নেন গতকাল। বিকালে গ্লোবের সন্ত্রাসী বাহিনী সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা জানান, গ্লোবের সন্ত্রাসী বাহিনী হঠাৎ করে এই হামলা চালিয়েছে।
এর আগে, গণছাঁটাই বন্ধ, পদন্নোতি, ইনক্রিমেন্ট ও ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের দাবিতে দৈনিক জনকণ্ঠ ভবনে তালা দিয়ে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন সংবাদকর্মীরা। রাজধানীর ইস্কাটনে জনকণ্ঠ ভবনের সামনে রোববার দুপুর থেকে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
জনকন্ঠের সংবাদকর্মীদের আন্দোলনে একাত্বতা প্রকাশ করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ডিআরইউ, ক্র্যাব ও অন্যান্য গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও নেতারা।
এসময় প্রতিবাদ সভায় সংবাদকর্মীরা বলেন, এক মাস আগে ২৬ জন সংবাদকর্মীকে অন্যায়ভাবে টার্মিনেশন লেটার ইমেল করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বেতনভাতা বন্ধ, ইনক্রিমেন্ট না দেয়া এমনকি গণহারে কর্মী ছাঁটাই করছে জনকণ্ঠ পত্রিকার মালিকপক্ষ। সম্প্রতি জনকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক মারা যাবার পর প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মীরা স্মরণসভার আয়োজন করেন। সেখানে একজন সংবাদকর্মী অংশ নেয়ায় তাকেও ছাঁটাই করা হয়েছে।
আন্দোলনরত সংবাদকর্মীরা বলছেন, অন্যায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও চাকরি হারানো সবার চাকরি ফিরিয়ে দেয়া এবং বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
দৈনিক জনকণ্ঠ থেকে ছাঁটাই হওয়া সাব-এডিটর সাজু আহমেদ বলেন, এক মাস হয়ে গেছে আমাদের দাবির কোনো সমাধান হয় নাই। মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন সমস্যার সমাধান করবেন। কিন্তু তিনি সমাধান না করেই বিদেশে চলে গেছেন। আজ মালিক পক্ষকে বলেছি আমাদের চাকরি ফেরত চাই। আমরা অফিসে ঢুকতে গেলে ঢুকতে দেয় নাই। পরে তারা তালা মেরে দেয় গেটে। তাদের তালা মারা দেখে আমরাও গেটে আরেকটা তালা মেরে দিয়েছি। যাতে ভেতরের কেউ বের হতে না পারে।
সদ্য চাকরি চলে যাওয়া এক সিনিয়র রিপোর্টারের ব্যাপারে তিনি বলেন, মালিক মারা যাওয়ার পর তার স্মরণে আমরা শোক সভা করেছি। এই শোক সভায় জনকণ্ঠে কর্মরত একজন সিনিয়র সাংবাদিক যোগ দেয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দাবিদাওয়া আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন সাজু আহমেদ।
প্রতিবাদ সভায় সংবাদকর্মীরা আরো বলেন, এক মাস আগে সংবাদকর্মীদের অন্যায়ভাবে টার্মিনেশন লেটার ইমেল করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বেতনভাতা বন্ধ, ইনক্রিমেন্ট না দিয়ে গণহারে কর্মী ছাঁটাই করছে জনকন্ঠের মালিকপক্ষ।
তারা বলেন, সব অন্যায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং চাকরি হারানো সব সংবাদকর্মীর চাকরি এবং বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন সংবাদকর্মীরা।
এর আগে ১৫ মার্চ জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠের চাকরিচ্যুত সাংবাদিক-কর্মচারীরা ইস্কাটনে পত্রিকাটির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। এদিন সকালে চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাঠানো হয় কর্মীদের ই- মেইলে।
তখন বিক্ষোভকারী সাংবাদিকেরা দাবি করেন, ৪০ জনের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই প্রতিবেদক ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মীরাও আছেন। তবে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২৬ কর্মীকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
চাকরিতে পুনর্বহালের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম বলেন, চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সাংবাদিকদের আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছি আমরা। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে বলতে চাই আপনার দ্রুত সাংবাদিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল করুন।
জনকণ্ঠের সাংবাদিক-কর্মচারীর ইউনিট চিফ ও সিনিয়র রিপোর্টার রাজন ভট্টাচার্য বলেন, আমরা আমাদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জনকণ্ঠ ভবনে তালা দিয়েছি। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া মানার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।