নিজস্ব প্রতিবেদক : এতদিন বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিস অব দ্য ওয়ার্ল্ড একসেপ্ট ইসরায়েল’। কিন্তু এখন এই লিখাটি পাসপোর্টে আর দেখা যাবে না। লেখাটি বাদ দেয়া হয়েছে পাসপোর্ট থেকে। আর এই নিয়েই শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। দেশে এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলেও এ ব্যাপারে খুশি নন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান। সম্প্রতি তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশি পাসপোর্টের ইসরায়েল লেখা বাদ দেয়া নিয়ে আমি খুশি নই। এই সময়ে এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য বেদনাদায়ক।
এদিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সম্প্রতি তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নেবে। অন্য দেশ কী বলল, তা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। এদিকে সমালোচনার এই প্রভাব পড়েছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও।
এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই; ভবিষ্যতেও হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখানে ইসরায়েলের উল্লসিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আন্তর্জাতিক রীতির কারণেই পাসপোর্টে সংশোধন করা হয়েছে। পাসপোর্টে যেটাই লেখা থাকুক না কেন, বাংলাদেশিরা ইসরায়েল ভ্রমণে যেতে পারবে না। আর ইসরায়েলিরাও বাংলাদেশে আসতে পারবে না।
এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেছেন, ইসরায়েলে বাংলাদেশিদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। তাই ইসরায়েলে কোনো বাংলাদেশি গেলে আইনের মুখোমুখি হয়ে শাস্তি পেতে হবে। আর বাংলাদেশ ইসরায়েলকে স্বীকার করে না।
এ বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকালের সময়কে বলেন, উপর মহল থেকে সাংবাদিকদের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীন কোনো তথ্য দেয়া আমাদের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই আমার নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, পাসপোর্টে আগে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিস অব দ্য ওয়ার্ল্ড একসেপ্ট ইসরায়েল’। কিন্তু এখন একসেপ্ট ইসরায়েল লেখাটি বাদ দেয়া হয়েছে। তবে এটি কোনো রেসারেসির কারণে কিংবা উদ্দেশ্য পণোদিত কোনো কারণে করা হয়নি। এটি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক রীতির কারণে। কেউ যদি ভেবে থাকে যে ইসরাইলের প্রতি কোনো ক্ষোভের কারণে কিংবা সম্প্রতি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি এই দুই দেশের মধ্যকার কোন্দলের কারণে এই লেখাটি বাদ দেয়া হয়ে; তাহলে সেটি ভুল। এটি পুরোপুরি আন্তর্জাতিক বিষয়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তার রুমে না পেয়ে তাকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সকালের সময়কে বলেছেন, এটি সরকারের নির্দেশেই করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তেই নতুন ই পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলের প্রসঙ্গটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন লেখা থাকছে; এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ। পাসপোর্ট থেকে ইজরায়েল প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া হলেও বাংলাদেশিদের সেদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞ বহাল আছে। এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতেও কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে জানিয়েছে সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আইয়ুব চৌধুরী ব্যস্ত থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানের পাসপোর্টের স্ট্যান্ডার্ড রাখতে গিয়েই এটা করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে এক বছর আগে। ছয় মাস আগে থেকে এটি বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে।
তবে নতুন পাসপোর্ট সংশোধনের প্রেক্ষিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপমহাপরিচালক গিলাড কোহেন টুইটারে এই সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ও ইসরায়েলেরে মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করলে উভয় দেশের জনগণ লাভবান হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। একইসঙ্গেথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাংলাদেশকে স্বাগত জানান তিনি।
এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু করেছে। নতুন ই-পাসপোর্টে সংশোধন করে লেখা হচ্ছে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ লেখাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাসপোর্টে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোন দেশে নাগরিকরা যেতে পারবেন, আর কোন দেশে যেতে পারবেন না সেটা সাধারণত পাসপোর্টে লেখা থাকে না। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের পাসপোর্টে এটা লেখা নেই। সে কারণে বাংলাদেশের পাসপোর্টেও এটা তুলে দেওয়া হয়েছে।