বিশেষ প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্নীতি, লুটপাট ও ক্ষমতা দখলের অব্যাহত প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে এক উত্তাল পরিবেশ সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। ১১ জানুয়ারি বিকাল থেকে পর দ্রুত ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা।
বেসামরিক ও সুশীল সমাজের ছদ্মবেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে সামরিক বাহিনীর কতিপয় সদস্য। মাইনাস টু ফর্মুলার নামে দেশের বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর অপচেষ্টা চলতে থাকে। অবশেষে, ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয় তাকে। বর্ষার বৃষ্টিভেজা দিন ছিল সেটি।
কাকডাকা ভোরে হুড়মুড় করে সুধাসদনের প্রবেশ করে যৌথবাহিনী। একটি সাজানো মামলায় দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে বন্দি করা হয়।
এর আগে, ১৫ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকেই জননেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনের চারপাশে অবস্থান নেয় হাজার খানেক পুলিশ, র্যাব, ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্য। শুনশান মাঝরাতে প্রত্যাহার করা হয় তার বাসার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থাতেই ফজরের নামাজ আদায় করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর বের হয়ে আসেন একটি শুভ্র শাদা শাড়ি পরে। ১৬ জুলাই, সকাল সাড়ে ৭টা, একটি সাজানো মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে নেওয়া হয় সিএমএম কোর্টে। বিশেষভাবে দ্রুত আদালত বসিয়ে তার জামিন আবেদন খারিজ করে, বন্দি করা হয় সংসদ ভবন এলাকার সাবজেলে।
ব্যাস, ৫৫ হাজার বর্গমাইলের পুরো বাংলাদেশটাই বন্দি হয়ে গেলো। কিন্তু তারা জানতো না যে, এই বাংলাদেশ কখনো বন্দি থাকে না। তাই শেখ হাসিনার গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবাদ শুরু হলো দেশজুড়ে। কিন্তু বিএনপি সমর্থিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদ কর্তৃক দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা এবং রাজনীতিবিদরা হয়রানির শিকার হওয়ায়, কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে আন্দোলন চালাতে থাকেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রসমাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, বিদেশী কূটনীতিক সবাই শেখ হাসিনার মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিতে থাকেন। অবশেষে তীব্র জনদাবির মুখে, ৩৩১ দিনের অবরুদ্ধ সময় শেষে, ২০০৮ সালের ১১ জুন, শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দুপুরের পর একটি গাড়িতে করে শেখ হাসিনাকে তার বাসভবন সুধাসদনে পৌঁছে দিয়ে আসা হয়।
এরপর, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন তিনি। গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাতে থাকেন আপামর জনতা। যার ফলে, ক্রমেই সংকুচিত হতে শুরু করে প্রায় দেড় বছর ধরে দাপিয়ে বেড়ানো তত্ত্বাবধায়কের কতিপয় সামরিক ও তথাকথিত সুশীল সিন্ডিকেট। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় সেনাসমর্থিত ইয়াজউদ্দীন-ফখরুদ্দীন সরকার।
ফলে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আয়োজিত হয় ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট দুই-তৃতীয়াংশ (২৫৭) আসনে জয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ একাই অর্জন করে ২৩০টি আসন। শেখ হাসিনার হাত ধরে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
তার গতিশীল নেতৃত্বে গতি পায় বাংলাদেশ। ফলে বহুল কাঙ্ক্ষিত ও স্বপ্নের সোনার বাংলার লক্ষ্য অর্জন শেষে, এখন বিশ্বের বুকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বদেশ, গ্লানি ঘুচিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাঙালি জাতি।