দরদী ছেলেটা চলে গেল!

অন্যান্য

বেলাল আহমেদ চৌধুরী : গত মাসের বার তারিখে ১.৩০মি: আমাকে শেষ মেসেজ দেয়। মন মননে রঙিঁন, উদ্বুদ্ধ প্রাণবন্ত তরুণ। এ মাসের ঠিক একই দিন ছেলেটা নেই! পৃথিবীকে চিরবিদায় জানিয়েছে অভিমানী ইমরান। আমার জন্য খুব কষ্টের একটা খবর! অভিমানী, জেদি, একরোখা কিন্তু একনীতির! দেশপ্রেমী, দলপ্রেমী, গরিবপ্রেমী, বন্ধু-কর্মীপ্রেমী সর্বোপরি নিখাদ বেনাপোলপ্রেমী!


বিজ্ঞাপন

বদলি হয়ে আসা অফিস নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না! ঢাকা, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, ভ্যাটগোয়েন্দার কোনটাতেই না। বেনাপোল কাস্টম হাউস থেকে বদলির পরও তাই হয়। শক্তিমানদের অভিযোগ ‘আমি কাস্টম হাউসকে জঙ্গল বানিয়েছি, ডুবিয়েছি’ ‘ক্লাব ও অফিস থেকে আমার ছবি নামিয়েছে’ ‘গেট খুলে দিয়েছে’ ‘লিংকরোড বন্ধ’ ‘যানজট বৃদ্ধি’ ইত্যাদি নানারকম কথা নিয়ত শুনেছি। সত্য, অসত্য ভালোমন্দ কোনটা নিয়েই মন্তব্য করিনি! বর্তামানের বেনাপোল নিয়ে লিখবোনা ভেবেছিলাম। ইমরানের আকস্মিক মৃত্যুতে আমি প্রচন্ড চিত্তচাঞ্চল্যে!


বিজ্ঞাপন

পুরো বেনাপোলে ইমরান ছেলেটি অন্যরকম। বড় আব্দারি। কেউ নাহয়েও ও যেন অনেককিছু! ওকে স্বাতন্ত্র্যের জন্য পছন্দ করতাম। নিয়মিত সালাম, শুভেচ্ছা বিনিময় এসএমএস করতো। অনাত্মীয় অসম্পর্কীয় পূর্বপরিচিত না হয়েও বেনাপোলজীবনে আমাকে নি:স্বার্থ ভালবাসার অনুভব দিতো।

২০১৯-এর শেষ দিকে, “আমার ব্যবসা নেই, আমি কাউকে স্যার ডাকিনা, আপনাকে শ্রদ্ধা করি স্যার!” বলে একটা এসএমএস দেয়! এর আগে আমার সংস্কার কাজের ফেসবুক পোস্টে সমর্থন ও উৎসাহমূলক মন্তব্য দেখতাম। এসএমএস দেখে ওর সম্পর্কে খোঁজখবর নেই। দেখলাম সিএন্ডএফ, ব্যবসা বা স্বার্থ কোনটাতেই নেই। ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা। ওর মেসেজের উত্তর দেই। রাগ, ক্ষোভ, আনন্দ-বেদনার অনেক কথা লিখতো। সবসময় জবাব দেয়া হতো না। ও আমার ব্যস্ততা বুঝতো। আজ কোথায় যেন অস্ফুট বেদনা!

আমার বদলিতে কষ্ট পায় ইমরান। অনেকবার থাকতে বলেছে। অনেকটা না বুঝেই। ওর দুর্নিবার আবেগ আমাকে তাড়িত করতো। ওর তেজ আমাকে ওরদিকে মনোযোগী করেছিল। ওকে কিছু পরামর্শও দিয়েছিলাম।

ওর অপ্রত্যাশিত মৃত্যুসংবাদ বিশ্বাস হয়নি। বিভিন্নসূত্রে খোঁজ নেই। জানা যায়, গত তিন দিন আগে ইমরান অসুস্থ হয়। জ্বর কাশি সর্দি ইত্যাদি। গতকাল রাতে হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ওকে প্রথমে নাভারন হাসপাতাল, পরে যশোর সদর, পরে যশোর ইবনে সিনা, আবার যশোর সদর হসপিটালে নেয়া হয়। পরে ওখান থেকে খুলনা আবু নাছের হসপিটাল। এর মধ্যে ও স্ট্রোক করে। কভিড টেস্ট করা হয়নি। শ্বাসকষ্টের কারণে অনেকের সন্দেহ কভিডজনিত মৃত্যু!

তারুণ্যের গতি, সাহস, একাগ্রতা, লেগে থাকা, নৈতিক মনোবল, ক্ষিপ্রতায় স্বাতন্ত্র্যে এক অসাধারণ তরুণ ইমরান! ওর মতো ছেলে এ যুগে বিরল। ইমরানের শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য গভীর সমবেদনা! আল্লাহ ওদের এ শোক সইবার ক্ষমতা দিন।

ভালোবাসা দেশ কাল মান ও সীমায় আবদ্ধের নয়।

শ্রদ্ধামিশ্রিত নি:স্বার্থ ভালোবাসা পাওয়া ভাগ্যের! ইমরানের মতো ক্ষণজন্মা অভিমানী ছেলের কাছে পাওয়া সৌভাগ্যের! ওর মতো করে ঈদের আগে সালামি চাইবে না! নিজের খেয়াল রাখতে বলবে না! অদম্য সংকল্পে, দেশপ্রেম, মানবতা, তারুণ্যর উদ্দীপ্ত ভালোবাসায়, বেঁচে থাকুক আল-ইমরানরা! আল্লাহ ওর দোষত্রুটি ক্ষমা করে বেহেশত নসীব করুন।