*হামলা তদন্তে বিশেষ কমিটি
বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীতে গত পাঁচ মাসে পুলিশকে লক্ষ্য করে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েও ধরা পড়ছে না জড়িতরা। শুধু হামলা নয়, দুই পুলিশ বক্স এলাকায় বোমা রেখে গিয়ে আতঙ্কও ছড়িয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পুলিশের মনোবল ঘায়েল করতে আইএসের নাম ভাঙ্গিয়ে জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হামলাগুলো চালাচ্ছে বলে অভিমত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। সর্বশেষ সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ২ জন পুলিশ আহত হন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তার একটিও শনাক্ত বা জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ফলে একই ধরনের ঘটনার বার বার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আলোচিত এসব হামলার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব না হলে অপরাধীরা নানাভাবে ফায়দা হাসিল করবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের ওপর একাধিকবার ককটেল হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে প্রযুক্তিসহ সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য বা কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
গুলিস্তান-মালিবাগে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার ঘটনায় তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনার বিষয়েই আমাদের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা নানাভাবে খতিয়ে দেখছেন। এরইমধ্যে এসব ঘটনার তদন্তে বলার মতো অগ্রগতি আছে, তবে তদন্তের স্বার্থে কিংবা জড়িতদের গ্রেফতারের স্বার্থে এখনই বলা যাচ্ছে না।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গুলিস্তানের বোমাটি টাইমার সেট করা এবং মালিবাগের বোমাটি রিমোট কন্ট্রোল আর পল্টন-খামারবাড়ির বোমা দুটি ছিলো পুঁতে রাখা। এর আগে, ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তানে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়া হয়। এতে ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম (৩৭), লিটন (৪২) ও কমিউনিটি পুলিশ মো. আশিক (২৮) আহত হন। এ সময় গুলিস্তানের ডন প্লাজার সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশের দুই সদস্য। হঠাৎ একটি শক্তিশালী ককটেল তাদের সামনে পড়ে এবং বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়।
রাজধানীর মালিবাগে গত ২৬ মে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। মালিবাগে বোমা হামলার ঘটনায়ও ট্টাফিক পুলিশের এএসআই রাশেদা আক্তার বাবলী (২৮) ও রিকশাচালক লাল মিয়া (৫৫) আহত হন। এ ছাড়া ২৩ জুলাই রাতে রাজধানীর পল্টন মোড় ও খামাড়বাড়ি পুলিশ বক্সের কাছে ফেলে রাখা বোমা উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনার পর দায় স্বীকার করে আইএসের নামে বিবৃতি দেয়া হয়। জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আইএস’ এর পরিচয় দিয়ে এই তিনটি হামলার দায় স্বীকার করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএস নয়, আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য আইএসের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবহার করছে জড়িতরা।
হামলা তদন্তে বিশেষ কমিটি : রাজধানীর পল্টন-মালিবাগসহ কয়েকটি স্থানে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা ও বোমা রাখার ঘটনায় করা মামলাগুলো তদন্তে একটি বিশেষায়িত কমিটি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম স্বাক্ষরিত একটি তদন্ত সহায়ক কমিটি গঠনের আদেশ জারি করা হয়। এই অফিস আদেশের পর কমিটি গঠন করা হলো। আদেশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি পুলিশের ওপর হামলার তদন্ত কাজে সহায়তার নিমিত্তে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কমিটি গঠন ও কাজ শুরু করবে।
কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। কমিটির সদস্য সচিব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম।
কমিটির সদস্যরা হলেন- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন (অতিরিক্ত দায়িত্বে উপ-পুলিশ কমিশনার স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্বে উপ-পুলিশ কমিশনার কাউন্টার টেরোরিজম), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া (অতিরিক্ত দায়িত্বে উপ-পুলিশ কমিশনার সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাসান আরাফাত, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল ইসলাম সোহাগ।
আদেশে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।
গত ৩১ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর রোডের সাইন্সল্যাব মোড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম ও একজন মন্ত্রীর নিরাপত্তা দলের অফিসার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহাবুদ্দিন আহত হন। এ বছরের ২৬ মে রাত ৯টায় রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে সিএনজি পাম্পের বিপরীতে ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক পূর্ব (সবুজবাগ) বিভাগের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদা খাতুন, রিকশাচালক লাল মিয়া এবং আরেক পথচারী আহত হন।
২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তানে ককটেল বিস্ফোরণে দুজন ট্রাফিক ও এক কমিউনিটি পুলিশ সদস্য আহত হন।
যেসব মামলা নিয়ে কাজ করবে কমিটি : পুলিশের নিউমার্কেট থানায় মামলা নং-৫৩। মামলাটি করা হয় গত ২৯ এপ্রিল। পল্টন থানায় মামলা নং-৪৬, করা হয় ২৬ মে। তেজগাঁও থানায় মামলা নং-৪৪, করা হয় ২৪ জুলাই। শাহাবাগ থানায় মামলা নং-৪২, করা হয় ২৪ জুলাই এবং নিউমার্কেট থানায় মামলা নং-১৩, করা হয় ৩১ আগস্ট।