মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.)।

বিশেষ প্রতিবেদন : কথায় আছে, যে গাছে যত বেশি ফল ধরে সে গাছের দিকে তত বেশি মানুষের নজর পড়ে। কেউ কেউ, বিশেষ করে পাড়া-প্রতিবেশী সুযোগ পেলে ঢিল মারে এবং অবৈধ পন্থায় কিছু নিজের জন্য পকেটস্থ করার চেষ্টাও করে। ফলহীন গাছ আর ভাঙা ঘরের দিকে কেউ তাকায় না। এই কথা গুলো ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র-রাজনীতিতেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আজ আর ভাঙা ঘর নয়। বিস্তৃত শিকড়ের ওপর দণ্ডায়মান সুশোভিত ফুলে ভরা বিশাল এক সম্ভাবনাময় দেশের নাম এখন বাংলাদেশ এই কৃতিত্ব সামগ্রিক ভাবে বাংলাদেশের মানুষের, যার নেতৃত্ব প্রায় ১৫বছর ধরে দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে লিডারশিপ ম্যাটারস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো লিডার পেয়েছিলাম বলেই আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি।আর তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা আছেন বলেই সামরিক স্বৈরশাসকের কবল থেকে শুধু মুক্ত নয়, সামরিক শাসকের ঔরসজাত রাজনৈতিক অপশক্তি এবংএকাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধীদের কবল থেকে আমরা বাংলাদেশকে বের করতে পেরেছি বলেই অফুরন্ত সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের দিকে আজ সবার দৃষ্টি পড়েছে।সে জন্যই আমি বলে থাকি, বঙ্গবন্ধু আমাদের বাংলাদেশ দিয়েছেন, আর শেখ হাসিনা সেটা রক্ষাও সমৃদ্ধ করে চলেছেন।বিশ্বের মানুষ আজ বাংলাদেশের সাফল্যের কথা শুনতে চায়।
বাংলাদেশকে পাশে পেতে চায়। বন্ধুদের চাওয়া কখনো কখনো অস্বস্তিকর হলেও এটিকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখি।বন্ধুদের চাওয়ার কতটুকু আমরা দিতে পারব, আর পারবনা, তা নির্ধারণে বিচক্ষণতার সঙ্গে আমাদের কৌশলী হতে হবে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির বাস্তবতায় এখন আর কেউ কারো ওপর জবরদস্তি করতে পারবে না। সে সুযোগ নেই।
বাংলাদেশকে এখন আরকেউ জঙ্গি সন্ত্রাসের দেশ বলতে পারবেনা, যেমনটি ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বলা হতো পরবর্তী আফগানিস্তান হবে বাংলাদেশ। আমার দৃষ্টিতে এখন বাংলাদেশের দিকে সবাই তাকাচ্ছে, বিশ্বঅঙ্গনে ডাকা হচ্ছে এবং লাইন ধরে বন্ধুরা বাংলাদেশে আসছেন।বেশি পেছনের ঘটনায় যাবনা। গত পাঁচ ছয় মাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ সফরও বন্ধু দেশগুলোর সর্বোচ্চ থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে আগমন এবং তার ভেতর দিয়ে আমরা যেসব বার্তা পেয়েছি সে গুলোর সার সংক্ষেপ ও তাৎপর্য অল্প অল্প করে তুলে ধরব, অর্থাৎএকটা রিভিউআর কি।
বিশ্ব পরিস্থিতি যখন সামরিক উত্তেজনা ও যুদ্ধের দামামায় উত্তপ্ত; তখন যুদ্ধ নয়, শান্তির বার্তা নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল থেকে চার দিনের জাপান সফরের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের সম্পর্ককে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তা সত্যিই ছিল অভাবনীয় এক চমক। স্বাধীনতার শুরু থেকেই জাপান বাংলাদেশের নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন সহযোগী। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত হলো। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্ক শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়, শুধু আঞ্চলিকও নয়, বৈশ্বিক অঙ্গনেও বাংলাদেশকে অনেক সুবিধা দেবে। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর সর্ব পূর্বের দেশ হলেও ভূ-রাজনীতির মেরুকরণে জাপান পশ্চিমা বলয়ের অন্যতম প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক তাই জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের ইতিবাচক প্রভাবে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো মসৃণ হবে। তার প্রমাণ এরই মধ্যে পাওয়া গেছে।
বিশ্বব্যাংকের বিশেষ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান থেকে সরাসরি ওয়াশিংটনে যান। যে বিশ্বব্যাংক একসময় দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর ঋণ বাতিল করেছে, সেই ব্যাংকের বোর্ডসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নতুন নির্বাচিত বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা ও আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা। ( লেখক : একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল।)