ভোট গ্রহণের দায়িত্বে ৩৬, ভোট পড়েছে ৬৭

এইমাত্র রাজনীতি

কেন্দ্রের বিভিন্ন ভোটকক্ষে বসে আছেন নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ২২ কর্মকর্তা। কেন্দ্রে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ জন সদস্যও। ভোট নেওয়ার জন্য সবাই প্রস্তুত। ভোট গ্রহণের সময়ও শুরু হয়েছে। অপেক্ষা শুধু ভোটারের। কিন্তু ভোটারেরই দেখা নেই। প্রথম দেড় ঘণ্টায় এলেন ৩ জন ভোটার। সারা দিনে ভোট পড়ল ৬৭টি।


বিজ্ঞাপন

এই চিত্র জয়পুরহাটের সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের। নারী ভোটারদের এই কেন্দ্রে মোট ভোট ২ হাজার ৫৯১টি। তবে ভোট পড়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আরেক কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৫০টি। গতকাল রোববার প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। জেলার অপর চার উপজেলা পরিষদেও ভোট হয় গতকাল।

Eprothom Aloসদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে গতকাল এখানে ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ভোটার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে সদর উপজেলায় বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী ফজলুর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি। এবার দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি প্রার্থী হননি।

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, বিএনপির প্রার্থী না থাকা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় শুরু থেকেই ভোটারদের আগ্রহ ছিল না। যার প্রকাশ দেখা গেল গতকাল ভোটের দিন। ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ফাঁকা।

সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়। সকাল পৌনে ১০টায় শহরের জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরো কেন্দ্র ভোটারশূন্য। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেন্দ্রের সাতটি ভোটকক্ষের মধ্যে তিনটিতে তখন পর্যন্ত ভোট পড়েছে তিনটি। বাকি কক্ষগুলোতে কোনো ভোট পড়েনি।

একজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বললেন, ‘একসময় মনে হচ্ছিল বউনিই (শুরু) হবে না। অনেকক্ষণ পরে এক ভোটার আসায় ইজ্জত বাঁচছে।’

কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তুলসী দাস মোহন্ত প্রথম আলোকে বলেন, ভোট শুরুর পর থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম। বেলা বাড়লে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে পারে। চেয়ারম্যান পদে ভোট না হওয়ায় ও সব বড় দল অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কম।

তবে বেলা বাড়ার পরও এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়েনি। বেলা পৌনে চারটায় গিয়ে দেখা যায়, তখনো ভোটারশূন্য। ব্যালট বাক্সগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে। ভোট পড়েছে ৫৪টি। শেষ মুহূর্তে ১৩ জন ভোটার আসায় শেষ পর্যন্ত ৬৭টি ভোট পড়ে এই কেন্দ্রে।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আছমা বিবি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে ভোট নাই তাই অনেকের আগ্রহ ছিল না। অন্য কী কারণে ভোটার আসে নাই, তা জানা নাই।’

ভোটার কম উপস্থিতির চিত্র ছিল জয়পুরহাট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের উল্টো পাশের রামদেও বাজলা (আর বি) সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেও। এই কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ছিল আটটি। প্রথম দেড় ঘণ্টায় ভোট পড়ে ১৪টি। বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষে জানা যায়, ভোট পড়েছে ১৫০টি। এই কেন্দ্রে মোট ভোট ২ হাজার ৮৭৩টি। ভোট পড়েছে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সিদ্দিক মো. আবু সাইদ বলেন, বেলা ৩টা পর্যন্ত মাত্র ১০২টি ভোট পড়েছিল। শেষ আধা ঘণ্টায় কিছু ভোটার আসায় ভোটসংখ্যা দেড় শ ছুঁয়েছে।

রাত ৮টা ১০ মিনিটে রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মনিরুজ্জামান নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফলে দেখা যায়, সদর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ১৯ হাজার ৫৬১। ভোট পড়েছে ১৪ শতাংশ। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বৈধ ভোট পড়েছে ৩০ হাজার ৮৬৫। ১৩ হাজার ৬৩২ ভোট পেয়ে এ পদে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অশোক কুমার ঠাকুর। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বৈধ ভোট পড়েছে ৩০ হাজার ৪০৯টি। এর মধ্যে ১৮ হাজার ২৩৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ফারহানা রহমান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *