মো : রফিকুল ইসলাম (নড়াইল) ; জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরির প্রলোভনে ৫ জন চাকরি প্রার্থীর নিকট থেকে ২৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় নড়াইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী জনৈক শওকত হোসেন কে গ্রেফতার করেছে নড়াইল জেলা ডিবি পুলিশের একটি টিম, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, নড়াইল ও যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরির জন্য প্রতারকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা প্রদান করে চাকরি না পেয়ে পুলিশ সুপার, নড়াইল বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন ২ জন ভুক্তভোগী। অভিযোগ পাওয়ার পর নড়াইল জেলার পুলিশ সুপার মোসা: সাদিরা খাতুন এর নির্দেশনায় ডিবি পুলিশ ও সাইবার সিকিউরিটি সেলের টিম তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। পরবর্তীতে গতকাল শুক্রবার ২০ অক্টোবর, নড়াইল সদর থানায় ভুক্তভোগী রুবেল হোসেন একটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটের সময় উক্ত যৌথ টিমের তত্ত্বাবধানে এসআই (নিঃ) আলী হোসেন, এসআই (নিঃ) অপু মিত্র, সদর থানার এসআই (নিঃ) নরোত্তম সঙ্গীয় ফোর্সসহ যশোর জেলা হতে নড়াইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী জনৈক শওকত হোসেন (ছদ্মনাম) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
তার কাছ থেকে এই অবৈধ কাজে ব্যবহৃত ১ (এক) টি ল্যাপটপ, ৩ (তিন) টি মোবাইল, ৩ (তিন) টি পেনড্রাইভ, ০৫(পাঁচ)টি ভুয়া নিয়োগপত্র, ৯ (নয়)টি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের নামের সিল, ৯ (নয়)টি ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প, ১ (এক)টি ব্ল্যাঙ্ক চেক(যমুনা ব্যাংক), ১১ (এগারো) টি বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি উদ্ধার করা হয়। উক্ত প্রতারকের মূল নাম “এসএম রায়হান আলী, পিতা: মোঃ সৈয়দ আলী, সাং: খড়কী, থানা: কোতয়ালী, জেলা: যশোর।
মামলার তদন্তে জানা যায় যে, যশোর জেলার মনিরামপু্র থানাধীন মুক্তারপুর গ্রামের মৃত আমিনুর রহমানের ছেলে রুবেল হোসেন (২১) যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের “অফিস সহায়ক” পদের জন্য আবেদন করেন।
আবেদনের পর কথিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত হোসেন চাকরি প্রার্থী রুবেল হোসেনের মোবাইলে কল করে ৬,০০,০০০ (ছয় লক্ষ) টাকার বিনিময়ে “অফিস সহায়ক” পদে চাকরি দিতে পারবেন বলে জানায়। চাকরি প্রার্থী ও কথিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একাধিকবার দেখা করেন। উক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, নড়াইল জেলায় এতিম ও প্রতিবন্ধিদের জন্য কোটা খালি আছে। নড়াইল জেলা প্রশাসকের সাথে তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তিনি তাকে নড়াইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাকরি দিতে পারবেন। প্রতারকের কথায় বিশ্বাস করে চাকরি প্রার্থী নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে শওকত হোসেনকে ৬,০০,০০০ (ছয় লক্ষ) টাকা প্রদান করেন।
প্রতারক চাকরি প্রার্থীকে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নড়াইল (এস এ শাখা)” সংবলিত প্যাডে নারায়ণ চন্দ্র পাল, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, নড়াইল ও সদস্য সচিব, নিয়োগ কমিটি কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগপত্র প্রদান করেন। চাকরি প্রার্থী রুবেল হোসেন (২১) সীলমোহরযুক্ত নিয়োগপত্র গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে যেয়ে দেখেন যে, উক্ত নিয়োগপত্রটি জাল । এছাড়া শওকত হোসেন নামে কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং নারায়ণ চন্দ্র পাল নামে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর নামে কোন কর্মকর্তা নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেই।
তদন্তে আরও জানা যায় যে, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বনগ্রাম গ্রামের আফসার মুন্সীর ছেলে মোঃ রাসেল মুন্সী (২৫) জানুয়ারি/২৩ মাসে নড়াইল জেলা প্রশাসকের কাযার্লয়ে “ অফিস সহায়ক” পদের জন্য আবেদন করেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জনৈক শওকত হোসেন নামে এক ব্যক্তির সাথে চাকরি প্রার্থী মোঃ রাসেল মুন্সীর পরিচয় হয় নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গেইটের সামনে বটগাছ তলায়। তাদের মধ্যে ৫,০০,০০০/(পাঁচ লক্ষ) টাকায় চুক্তি হয় চাকরি দিবে বলে। গত ২৫ মার্চ উক্ত শওকত হোসেন চাকরি প্রত্যাশী মোঃ রাসেল মুন্সীকে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নড়াইল (এস এ শাখা)” সংবলিত প্যাডে নারায়ণ চন্দ্র পাল, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, নড়াইল ও সদস্য সচিব, নিয়োগ কমিটি কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগপত্র প্রদান করেন।
এরপর চাকরি প্রার্থী মোঃ রাসেল মুন্সী ও তার মামা মোঃ লিটন খান কথিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে নড়াইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নগদ ৫,০০,০০০/ (পাঁচ লক্ষ) টাকা প্রদান করেন। এরপর তাদেরকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গেস্টরুমে বসিয়ে রেখে উক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা লাপাত্তা হয়। পরবর্তীতে চাকরি প্রার্থী এবং তার মামা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, শওকত হোসেন নামে কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং নারায়ণ চন্দ্র পাল নামে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর পদে কোন কর্মকর্তা নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেই।
একইভাবে প্রতারক আরও ৩ জনের কাছ থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের “অফিস সহায়ক” পদে চাকরির কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করেছে সেসব ভুক্তভোগীরা যথাক্রমে, মোঃ মাসুম বিল্লাহ, পিতা:মৃত আবদুল বারিক, গ্রাম: মজিদপুর, থানা:কেশবপুর, জেলা:যশোর এর নিকট হতে ১১ লক্ষ টাকা , মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, পিতা:আব্দুল আলিম, গ্রাম: আন্দুল বাড়িয়া, থানা: মহেশপুর, জেলা: ঝিনাইদহ এর নিকট হতে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং মোহাম্মদ ওবায়দুল হক, পিতা: আব্দুল্লাহ মোল্লা, গ্রাম: সিলমপুর, থানা:বাঘারপাড়া, জেলা: যশোর এর কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা।গ্রেফতারকৃত প্রতারক কে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।