বিশেষ প্রতিবেদন : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেগা প্রজেক্ট সমূহের অন্যতম চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। এর উদ্বোধন হচ্ছে আজ ২৮ অক্টোবর শনিবার।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর আনোয়ারা ও পতেংগাকে কে সংযুক্ত করে, চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলের এই টানেল তৈরী করা হয়েছে। এরফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটেছে এবং এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তির পথ প্রসারিত হয়েছে।
এই টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এর দুটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন সড়ক থাকছে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকছে। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দুটি টিউব তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি টিউব ৩৫ ফিট প্রশস্ত ও ১৬ ফিট উচ্চতার।
টানেলর নির্মাণের খরচ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯.৭১ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণে, দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।
এই টানেলে সেডান কার, জিপ বা পিকআপের জন্য টোল ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য টোল ২৫০ টাকা, বাসের আসন সংখা বিবেচনায় টোল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে এই টানেলে দৈনিক গড়ে ১৭ হাজার ২৬০টি যানবাহন চলাচল করবে, যা বছরে দাঁড়াবে প্রায় ৭৬ লক্ষ।
চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এই টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
চট্টগ্রামে জলোচ্ছ্বাস, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় কিংবা বন্যার ক্ষতি এড়াতে টানেলের প্রবেশ পথে থাকছে ফ্লাডগেট, ফলে টানেলে পানি প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল থাকবে নিরাপদ।
এই টানেল সংযুক্ত করবে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণের আনোয়ারা প্রান্তকে। ফলে কক্সবাজার -চট্টগ্রাম এর সাথে ঢাকা তথা সারা দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা তরান্নীত হলো।
টানেলটি চালু হওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হচ্ছে।উদ্যোক্তাগণ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। গতি বাড়ছে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায়, বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান, কমছে বেকারত্ব।
কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠেছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)। এতে করে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ফলে এ অঞ্চলের লাখো মানুষের ভাগ্য বদলে যাচ্ছে।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে পর্যটন নগর কক্সবাজার এবং পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সেতুবন্ধ তৈরি করছে এই টানেল। পর্যটকরা এই টানেল দিয়ে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত যেতে পারবেন।
ভবিষ্যতে এই টানেল ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শহর পাশ কাটিয়ে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সারা দেশের শিল্পকারখানার আমদানি-রপ্তানিপণ্য কক্সবাজারের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে আনা-নেওয়া করা যাবে । ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তৃত হবার পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে।
আগামীতে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সমুদ্র উপকূল ধরে মেরিন ড্রাইভের আশেপাশের দীর্ঘ এলাকায় দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প করিডোরে রূপ নেওয়ার অমিত সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, এই বঙ্গবন্ধু টানেলকে কেন্দ্র করেই।
এছাড়া, টানেলের কারণে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ে বন্দরের কয়েকটি জেটি নির্মাণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যাতে বন্দরের সক্ষমতাও বাড়বে।
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল” বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক উজ্জ্বল সংযোজন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।