মো : রফিকুল ইসলাম (নড়াইল) : নড়াইলের লোহাগড়া থানা পুলিশের তৎপরতায় ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের গলিত লাশ উদ্ধার ও মামলার রহস্য উদঘাটনসহ ৩ জন আসামি কে গ্রেফতার করেছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি খুলনা জেলায় এলজিইডি অফিসের একটি প্রজেক্টে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেঝ। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ আলমগীর হোসেন লোহাগাড়া থানাধীন কুন্দসী গ্রামে মামা ও খালার বাড়িতে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেন। পরবর্তীতে ঐ রাত্রিতে পাচুড়িয়ায় তার চাচাতো বোন সালেহার বাড়িতে রাত্রি যাপন করেন । পরের দিন সকালে আলমগীর হোসেন তার নিজ বাড়ি কোটাকোল গ্রামে যায়।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর, রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টায় ভিকটিম আলমগীর হোসেনের বড় ভাই খায়রুজ্জামান ফকির ও তার মেয়ে দিয়া রুমে বসে টিভি দেখতেছিল, তার ছেলে ফয়সাল রুমের সামনের বারান্দায় পড়াশুনা করতেছিল এবং তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা (৩৫) পাশের রুমে শুয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ খায়রুজ্জামান ফকির শব্দ শুনতে পায়। তখন পাশের রুমে যেয়ে তিনি এবং তার ছেলে ফয়সাল দেখতে পান যে, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ভিকটিম মোঃ আলমগীর হোসেন (৫৪) এর গলা টিপে আছে।
মূলত ভিকটিম আলমগীর হোসেন তার ভাই আসামি মোঃ খায়রুজ্জামান ফকির (৪৯) এর বাড়িতে যেয়ে খারাপ উদ্যেশে তার ভাই এর স্ত্রী কানিজ ফাতেমার শরীর স্পর্শ করে। যার ফলে মোঃ খায়রুজ্জামান ফকির, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও তার ছেলে ফয়সাল একত্রিত হয়ে ভিকটিম আলমগীর হোসেনকে গলা টিপে হত্যা করে।
পরে আসামিরা লাশ গোপন করার জন্য রাতের অন্ধকারে নৌকায় করে নিয়ে পাশে বিলের মাঝে ফেলে দেয়। পরে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর, অজ্ঞাতনামা অর্ধগলিত লাশ উলঙ্গ অবস্থায় বিলের মাঝ হতে লোহাগাড়া থানা পুলিশ উদ্ধার করে ।
এরপর লোহাগড়া থানা পুলিশ জিডিমূলে অজ্ঞাতনামা লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। পরবর্তীতে লাশের পরিচয় পাওয়া গেলে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠায়।
এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মোঃ কামরুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। নড়াইল সদর হাসপাতাল ভিকটিমের ভিসেরা রিপোর্টের জন্য আলামত মহাখালী, ঢাকায় প্রেরণ করেন।
সুদীর্ঘ ৭(সাত) মাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়। মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই কে এম তৌফিক আহমেদ টিপু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখেন যে, ভিকটিমকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
নড়াইল জেলার পুলিশ সুপার মোসা: সাদিরা খাতুন এর সঠিক দিক নির্দেশনায় তদন্তকারী অফিসার ভিকটিম আলমগীর হোসেনের চলাফেরা এবং তার মারা যাওয়ার আগের অবস্থান বিশ্লেষণ করেন। এছাড়া ভিকটিম আলমগীর হোসেনের নিকট আত্মীয় স্বজনদের উপর নজরদারি করা হয়।
এরপর লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে এসআই (নিঃ) কে এম তৌফিক আহমেদ টিপু সঙ্গীয় ফোর্সসহ বিশেষ অভিযান চালিয়ে লোহাগড়া থানাধীন কোটাকোল ইউনিয়নের কোটাকোল লঞ্চঘাট এলাকা থেকে গত শুক্রবার ২৮ অক্টোবর, রাতে মোঃ আলমগীর হোসেন (৫৪) হত্যা মামলায় জড়িত আসামি তার ভাই মোঃ খায়রুজ্জামান ফকির (৪৯) ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা(৩৫) দ্বয়কে গ্রেফতার করে। গতকাল শনিবার ২৯ অক্টোবর, হত্যাকাণ্ড এবং লাশ গুমের সাথে জড়িত আসামি ইয়ার আলী সরকারকে গ্রেফতার করে লোহাগড়া থানা পুলিশ।
আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হলে খায়রুজ্জামান ফকির ও ইয়ার আলী ফকির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদলতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।