বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য স্কোয়াড্রন লীডার (অবঃ) সাদরুল আহমেদ খান।
বিশেষ প্রতিবেদন : গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য স্কোয়াড্রন লীডার (অবঃ) সাদরুল আহমেদ খানের ’ সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ধাইরা মাহেশওয়ারী ।
পাঠকদের জন্য বাংলা অনুবাদটি তুলে ধরা হলো: জানুয়ারিতে নির্বাচনের আগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সদস্য বাইডেন প্রশাসনকে অভিযুক্ত করেছেন।
ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলের এই সদস্য ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকে “এগিয়ে যাওয়ার” জন্য অভিযুক্ত করেছেন যা পরে সহিংস রূপ নেয়।
“২৮ অক্টোবর, মিয়ান আরাফি নামে একজন মার্কিন নাগরিক, নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে দাবি করে, সহিংস বিক্ষোভের ঠিক পরেই ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অফিসে যান। এটি আগুনে ঘি ডালার মতোই এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মনোবলকে আঘাত করার একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা ছিল। বিএনপির কার্যালয় পরিদর্শনের আগে উল্লিখিত উপদেষ্টা ঢাকার আমেরিকান ক্লাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছিলেন,” আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য স্কোয়াড্রন লীডার (অব:) সাদরুল আহমেদ খান স্পুটনিক কে বলেছেন।
সাদরুল যিনি কর্ম জীবনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি সার্জেন্ট- এট- আর্মসও ছিলেন, দাবি করেছেন যে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস পরবর্তীকালে তথাকথিত উপদেষ্টাকে “অস্বীকার” করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে মার্কিন দূতাবাস ঘটনার অনেক পরে বলেছে যে, কোনো আমেরিকান কূটনীতিক বিএনপি অফিসে যাননি।
সাদরুল বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে জানুয়ারিতে নির্ধারিত আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন করার অভিযোগ করেছেন। তিনি ভিয়েনা কনভেনশনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যা বিদেশী কূটনীতিকদের যেকোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ থেকে নিষিদ্ধ করে।
“বাংলাদেশে একটি ব্যাপক ধারণা রয়েছে যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাসের মাধ্যমে বিএনপি এবং তার ইসলামপন্থী মিত্রদের সমর্থন করছে,” আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেছেন।
২৮ অক্টোবর বিএনপি ও তার আদর্শিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং পরের বছরের সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।
বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে কারণ বিরোধী বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যারা একই দিনে সরকার সমর্থক বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল। খবরে বলা হয়, ওই দিন নিরাপত্তা কর্মীসহ প্রায় ১১ জন নিহত এবং শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী আহত হন।
সাদরুল বলেন, “পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই বিরোধী কর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালায়, হাসপাতাল ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় এবং ৭৭টি গাড়ি ভাংচুর করে। সংসদীয় ভোটকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে সরকারি দমন-পীড়নের দাবির মধ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘আগুনে ঘি ডালছে বলে অভিযোগ করেছে সাদরুল, যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে। তিনি বলেন, “মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করাটা খুবই অ-পেশাদার।”
সাদরুল বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত অবস্থান, গত ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ময়দানে বিক্ষোভের বিষয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অবস্থানের সাথে তুলনীয়।
ওবামা সেই সময়ে কিয়েভে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকে সমর্থন করেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং পশ্চিমাপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করেছিল।
“বাংলাদেশের পরিস্থিতি যারা পর্যবেক্ষণ করছেন তারা এটাকে ২০১৪ সালের ইউক্রেনের ময়দান বিপ্লবের সাথে তুলনা করছেন। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সরকার বিরোধী বিক্ষোভকে সমর্থন করেছিলেন,” সাদরুল মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের এই রাজনীতিবিদ সতর্ক করে দিয়েছিন যে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রক্সি’তে পরিণত হতে দেওয়া হবে না।
“কোনও জাতির অধিকার নেই তাদের পছন্দ আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার। বাংলাদেশের জনগণেরই একমাত্র এখতিয়ার রয়েছে দেশটি কোন পথে যাবে তা নির্ধারণ করার ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর তার নিজস্ব গণতন্ত্রের মডেল চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু একটি দেশ হিসাবে আমাদের জনগনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে, আর সেটা হবে নির্বাচনের মাধ্যমে । ” সাদরুল উপসংহারে বলেন।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে, বাইডেন প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন” অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত মাসে দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথেও দেখা করেছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই রাস্ট্রদূত সরকারকে বিরোধী দলের সাথে সংলাপে বসার উপদেশও দেন।
সম্প্রতি গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এসব অপ্রত্যাশিত কাজে আপত্তি জানিয়েছেন । তিনি মন্তব্য করেছেন,
“মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন কি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সংলাপ করছেন? যদি বাইডেন ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপে বসেন, তাহলে আমি বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপ করব,” ।